ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষি বিষয়ক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে গবেষকদের অভিমত;###;উদ্ভাবিত হচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তি

ভবিষ্যত প্রজন্মের খাদ্য ঘাটতির শঙ্কা নেই

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২২ ডিসেম্বর ২০১৬

ভবিষ্যত প্রজন্মের খাদ্য ঘাটতির শঙ্কা নেই

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের খাদ্য ঘাটতি হবে না। ক্রমাগত জনসংখ্যা বাড়লেও উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের কারণে দেশে খাদ্যের উৎপাদন বাড়ছে। ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ভবিষ্যত খাদ্য ঘটতির কোন শঙ্কা নেই। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘এ ফার্ম ভিউ অব বাংলাদেশ : ইন দ্য আইস অব জার্নালিস্ট’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে কৃষি গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের সব জমিতে ফসল উৎপাদিত হয়। তাই এসব জমিতে চার ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। আর চার ফসল উৎপাদন করলে জমির উর্বরতা নষ্ট হয় না, বরং জমির উর্বরতা বাড়ে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. রফিকুল ইসলাম ম-ল বলেন, ‘আমরা বোরোকে নিরুৎসাহিত করে আউশ আবাদকে উৎসাহিত করছি। আর এই আউশ ধান কাটার সময় ১০ ইঞ্চি থেকে এক ফুট উপরে কাটতে হবে। ওই খড় মাটিতে মিশে জমির উর্বরতা বাড়াবে।’ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বাংলাদেশের কৃষি এখন সর্বোচ্চ ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় আছে। গবেষণার সঙ্গে তাল মিলিয়ে উৎপাদন বাড়ছে। তবে পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও দক্ষতা বাড়াতে হবে। এজন্য অবশ্য আমরা ভুট্টা উৎপাদনের দিকে জোর দিচ্ছি। আগামী দুই তিন বছরের মধ্যে দেশে ভুট্টা উৎপাদন ৫০ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে।’ কৃষি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ফোরাম ফর ইনফরমেশন ডেসিমিনেশন অন এগ্রিকালচার (ফিডা) এই বইটি প্রকাশ করেছে। ফিডা-সিনজেনটা ফেলোশিপ প্রোগ্রামের আওতায় বইটি প্রকাশ করা হয়েছে। এটি এই কর্মসূচীর সপ্তম প্রকাশনা। বইটির ১৭টি নিবন্ধে বাংলাদেশে কৃষির ভবিষ্যত এবং চ্যালেঞ্জসমূহ তুলে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা এই নিবন্ধগুলো লিখেছেন। আর বইটি প্রকাশ করেছে পালক প্রকাশনী। বইটি প্রকাশ উপলক্ষে বহুজাতিক কৃষি সংস্থা সিনজেন্টা বাংলাদেশ ও পালক প্রকাশনীর সহযোগিতায় ফিডা বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। তবে বিশেষ কারণে তিনি প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. আবুল কালাম আজাদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহম্মদ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচলক ড. রফিকুল ইসলাম ম-ল, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিটের মহাপরিচালক ভাগ্য রানী বণিক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক গোলাম মারুফ ও সিনজেনটা বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাজ্জাদুল হাসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফিডা সভাপতি কাওসার রহমান। আরও বক্তব্য রাখেন পালক প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফোরকান আহমেদ, ফিডার সহ-সভাপতি আশিক চৌধুরী এবং ফিডার সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ। ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সামুদ্রিক শৈবাল বাংলাদেশের কৃষির নতুন সম্ভাবনা। এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে আমরা কাজ করছি। বর্তমানে প্রাকৃতিকভাবে যে সকল শৈবাল সমুদ্রের পানিতে ভেসে আসছে তা সংগ্রহ করে শুকিয়ে রফতানি হচ্ছে। কিন্তু এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে সামুদ্রিক শৈবাল চাষ করতে হবে। এজন্য আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।’ ড. কামাল উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, যে কোন গাছ আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ। আগাছা মনে করে কোন গাছই কাটা যাবে না। কারণ প্রতিটি গাছের জিন ট্রান্সফার করা যায়। যে সকল গাছ খড়া ও বন্যা সহিষ্ণু সেসব গাছের জিন আমরা খাদের গাছে ট্রান্সফার করতে পারব। তাই আগাছা মনে করে কোন গাছই কাটা যাবে না। ড. রফিকুল ইসলাম ম-ল বলেন, সামুদ্রিক শৈবাল একটি প্রেসটিজিয়াস ও পুষ্টিকর খাদ্য। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের কোন কোন এলাকায় এই শৈবাল চাষ করা যায় তা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। এই সামুদ্রিক শৈবালই হতে পারে আমাদের আগামী দিনের পুষ্টির ভা-ার। ভাগ্য রানী বণিক বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কৃষিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। অনেক এলাকায় এখন সরিষা ও আলু আবাদ হচ্ছে। যা অতীতে কখনও হতো না। ভোলার চরে চাষ হচ্ছে তরমুজ। সামুদ্রিক শৈবাল চাষের ব্যাপারে গবেষণা হচ্ছে। আমরা এখন ভবিষ্যত কৃষির সঠিক জায়গায় পৌঁছতে পেরেছি। তিনি বলেন, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ফসলের কিছু ‘মেগা ভ্যারাইটি’ আবিষ্কার করেছে। এসব জাত এখন ভারত, চীন, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারে আবাদ হচ্ছে এবং প্রশংসিত হচ্ছে। আমাদের মসুর ডালের বীজ নেপালে বেশ ভাল ফলন দিচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও পুষ্টিতে পিছিয়ে আছি। সেই পুষ্টি ঘাটতি দূর করতে জিঙ্কসমৃদ্ধ ধানের জাত এখন মাঠে আবাদ হচ্ছে। ভিটামিট এ সমৃদ্ধ গোল্ডেন রাইস এখন ট্রায়াল পর্যায়ে আছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে এই জাত আমরা মাঠে নিয়ে যেতে পারব বলে আশা করছি।
×