ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যে কোন প্রজন্মের জন্য দৃষ্টান্ত বোল্ট-ফেলপস

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২২ ডিসেম্বর ২০১৬

যে কোন প্রজন্মের জন্য দৃষ্টান্ত বোল্ট-ফেলপস

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশ্ব ক্রীড়াজগত গত দুই বছরে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে নিষিদ্ধ ড্রাগের ছোবলে। যুগে যুগেই ডোপ পাপের জন্য বিভিন্ন ক্রীড়া ইভেন্ট কলুষিত হয়েছে। কিন্তু গত দুই বছরে এ বিষয়ে তদন্ত বিভাগ তৎপর হয়ে ওঠার কারণে ব্যাপকতার ব্যাপারটি উঠে এসেছে। যুগে যুগে নিষেধাজ্ঞার খড়গ নেমে এসেছে অনেক বিখ্যাত এ্যাথলেট ও ক্রীড়াবিদের ওপর। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মুখেও ব্যতিক্রম ছিলেন দুই জগতের দুই জীবন্ত কিংবদন্তি সাঁতারু মাইকেল ফেলপস ও স্প্রিন্টার উসাইন বোল্ট। একেবারেই স্বচ্ছ ক্যারিয়ারে তারা দু’জনই এখন বেশ কয়েকটি বিশ্বরেকর্ডের মালিক। এ কারণে বিশ্ব ক্রীড়াক্ষেত্রে যে কোন ইভেন্টের এ্যাথলেটের জন্য এ দুই ক্রীড়াব্যক্তিত্বকে প্রকৃষ্ট উদাহরণ ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে মনে করছেন সবাই। শুধু একটি প্রজন্ম নয়, দশ প্রজন্মেও এমন এ্যাথলেট বিরল বলেও অভিহিত করেছেন অনেকে। যুক্তরাষ্ট্রের সাঁতারু মাইকেল ফেলপস ৫ অলিম্পিকে অংশ নিয়েছেন। তিনি সাঁতারে যে রেকর্ডসমূহ গড়েছেন সেসব প্রায় অসম্ভব এক উচ্চতার তৈরি করেছে। সবমিলিয়ে ২৩ স্বর্ণসহ ২৮ অলিম্পিক পদক জিতেছেন তিনি। এত স্বর্ণপদক আর কোন এ্যাথলেট অলিম্পিকে জিততে পারেননি। এছাড়া বেশ কয়েকটি ইভেন্টে তিনি বিশ্বরেকর্ডের অধিকারী। বেজিং অলিম্পিকে ২০০৮ সালে ৮ ইভেন্টেই স্বর্ণ জিতে মার্ক স্পিটজের বিশ্বরেকর্ডটা ভেঙ্গে ফেলেছেন তিনি। স্পিটজ এক অলিম্পিকে ৭ স্বর্ণ জয়ের বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন। ২০০৪ সালে এথেন্স অলিম্পিকেই স্পিটজের রেকর্ডটাকে হুমকিতে ফেলেছিলেন ‘ফ্লাইং ফিশ’ খ্যাতি পাওয়া জলদানব ফেলপস। সেবার ৬ স্বর্ণ ও ২ ব্রোঞ্জ জিতে রেকর্ডটা ছোঁয়া হয়নি। কিন্তু বেজিংয়ে ঠিকই নতুন রেকর্ড গড়লেন স্পিটজকে পেছনে ফেলে। এবার রিও ডি জেনিরো অলিম্পিকের আগে মাত্র দেড় বছরের মতো অনুশীলন করেছিলেন। কারণ ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকের পর অবসর নিয়ে ফেলেছিলেন হুট করে। সেটা ভেঙ্গে ফেরেন ২০১৪ সালের শেষদিকে। তারপর আবারও নিজেকে পুরনো রূপে উপস্থাপন করেছেন এবার রিও অলিম্পিকে ৫টি স্বর্ণপদক জিতেছেন। আর কোন অলিম্পিকে দেখা যাবে না এ জলের সম্রাটকে। তার মতো সাঁতারু গত দশ প্রজন্মেও আসেনি এবং আগামী ১০ প্রজন্ম ধরে খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সেটা নিয়েও আছে যথেষ্ট সংশয়। শৈশব থেকে তাঁর প্রশিক্ষক হিসেবে বব বোওম্যান ফেলপসকে করেছেন অলিম্পিক সুপারস্টার। তার বিষয়ে বোওম্যান বলেন, ‘এটা এক প্রজন্মে তো দেখা যায়নি, আবার গত দশ প্রজন্মেও ছিল না। মাইকেলের মতো এমন কেউ আগামী কয়েক প্রজন্মে আসবে কিনা সেটাও নিশ্চিত নয়।’ ২০০০ সালে প্রথম অলিম্পিকে মাত্র ১৫ বছর বয়সে শুধু ২০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে অংশ নিয়েছিলেন ফেলপস। জ্যামাইকার বোল্ট গতির রাজ্যে অস্পৃশ্য। তিনি যেন চিতার চেয়েও ক্ষিপ্র আর গতিময়। সর্বকালের সবচেয়ে গতিধর মানব হিসেবে স্বীকৃত মাত্র ৯.৫৮ সেকেন্ডে ১০০ মিটার জয় করার কারণে। ২০০৪ সালে এথেন্সে মাত্র ১৭ বছর বয়সে ২০০ মিটারে অংশ নিয়ে হিটে পঞ্চম হয়েছিলেন এ স্প্রিন্টার। তখনই বোঝা গিয়েছিল ভবিষ্যতটা উজ্জ্বল হতে যাচ্ছে এ জ্যামাইকান গতি তারকার। সেটাই করেছেন অবিশ্বাস্য বিশ্বরেকর্ড গড়ে। এরপর ২০০৮, ২০১২ ও ২০১৬ টানা তিন অলিম্পিকেই ট্রেবল জিতে সর্বকালের সব রেকর্ডকে পেছনে ফেলে নিজেকে অধরা এক উচ্চতায় আসীন করেছেন। এ তিন অলিম্পিকেই তিনি জিতেছেন ১০০, ২০০ ও ৪ী১০০ মিটারের প্রতিযোগিতায়। ৩০ বছর বয়সী বোল্ট এবার রিও অলিম্পিক শেষেই জানিয়ে দিয়েছেন মর্যাদার এ আসরে আর নয়। তখন তিনি নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন, ‘আমি বিশ্বের কাছে নিজেকে প্রমাণ করেছি সর্বকালের শ্রেষ্ঠতম হিসেবে।’ ফেলপস আর বোল্ট এখন সারাবিশ্বের যে কোন এ্যাথলেটের জন্য অনুপ্রেরণার নাম। রিও অলিম্পিকে আসা অনেক সাঁতারু, স্প্রিন্টার এবং অন্যান্য ইভেন্টের তরুণ, কিশোর-কিশোরী ক্রীড়াবিদরা জানিয়েছেন তারা অনুসরণ করেন ফেলপস-বোল্টের কীর্তিময় সাফল্যকে এবং এভাবেই নিজেদের অনুপ্রাণিত রাখার চেষ্টা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাকস্ট্রোক সাঁতারু রায়ান মারফি বলেন, ‘কোন দেশের হয়ে আপনি সাঁতরাচ্ছেন সেটা কোন বিষয় না, ফেলপসের কাছে সবাই ঋণী। তিনি সবার জন্য প্রচুর দরজা খুলে দিয়েছেন বিভিন্ন মর্যাদার অবস্থানে প্রবেশের জন্য।’ যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে দুইবার অলিম্পিক ডেকাথলন চ্যাম্পিয়ন এ্যাস্টন ইটন বলেন, ‘এটা নিশ্চিতভাবেই অন্যতম গর্বের বিষয় বোল্টের যুগে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারা। তার বিদায়ে নিশ্চিতভাবেই একটা শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্যই তরুণদের জন্য এবং যারা ক্রীড়াক্ষেত্রে আসবে তাদের জন্য অনেক বড় প্লাটফর্মের সৃষ্টি করে গেছেন তিনি।’
×