ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক

এলডিপির ১৭ ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ৮ দফা প্রস্তাব

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২২ ডিসেম্বর ২০১৬

এলডিপির ১৭ ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ৮ দফা প্রস্তাব

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে সংসদের বাইরে থাকা লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে ১৭ দফা এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৮ দফা প্রস্তাব দিয়েছে। এই দুটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পৃথক আলোচনায় রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, নির্বাচন গণতন্ত্রের অপরিহার্য উপাদান। গণতন্ত্রে নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে বুধবার বিকেল ৩টায় প্রথমে কর্নেল (অব) অলি আহমদের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল এবং পরে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আসা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে এলডিপির পক্ষ থেকে দশম জাতীয় সংসদেই নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আইন প্রণয়নের দাবি জানানো হয়। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশন গঠনে বাছাই কমিটিতে কারা স্থান পেতে পারেন, তার একটি তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে দিয়েছেন তারা। তবে দলের পক্ষ থেকে সেই নাম প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়। বৈঠকে নির্বাচন কমিশন গঠনে আলোচনায় এলডিপিকে আমন্ত্রণ জানানোয় রাষ্ট্রপতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অলি আহমদ সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তাঁদের মতামত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সমগ্র জাতি একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের দিকে তাকিয়ে আছে। আইনের মাধ্যমে যা করা সম্ভব নয়, আলোচনার মাধ্যমে তা করা যায়। এলডিপি নির্বাচন কমিশন গঠনে তাদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতিকে সার্বিক সহযোগিতা দেয়ার কথা জানান। বিকেল তিনটায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রায় ত্রিশ মিনিটব্যাপী নির্ধারিত এ আলোচনা শুরু হয়। এলডিপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন মহাসচিব রেদোয়ার আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটু, শাহদাত হোসেন সেলিম, কফিল উদ্দিন চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল করিম আব্বাসী, আবু ইউসুফ মোহাম্মদ খলিলুর রহমান, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, আবদুল গনি ও কামাল উদ্দিন মোস্তফা। বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের সামনে আলোচনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা শেষে বঙ্গভবনের গেটের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এলডিপির প্রধান অলি আহমদ। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে একটি সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে ১৭টা প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা বাছাই কমিটির কথা বলেছি, যিনি আহ্বায়ক হবেন তিনি সাবেক প্রধান বিচারপতি হবেন, যার কোন বিতর্ক থাকবে না। যিনি কখনও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনীতিতে ছিলেন না, লাভজনক পদে ছিলেন না এমন একজনকে বাছাই কমিটির আহ্বায়ক করার কথা বলেছি। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না এমন ব্যক্তিদের বাছাই কমিটিতে আনতে হবে। এলডিপির প্রস্তাবিত বাছাই কমিটিতে কারা রয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা এখন বলা যাবে না। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, সবার সঙ্গে আলোচনা করে তিনি এ বিষয়ে কর্মপন্থা ঠিক করবেন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি আমাদের অত্যন্ত পুরনো একজন বন্ধু মানুষ। ১৯৭৯ সাল থেকে সংসদে থেকে এক সঙ্গে কাজ করেছি। একটা পারিবারিক সম্পর্ক আছে। তিনি খুব ভাল লোক। তাঁকে নিয়ে বাংলাদেশে কোন বিতর্ক নেই। তাঁকে তাঁর পজিশনটা কাজে লাগাতে বলেছি। এলডিপির উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব হচ্ছেÑ নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন রাখা, সংবিধান অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত একটি আইনী কাঠামো প্রণয়ন, নির্বাচন কমিশনের জন্য আলাদা সচিবালয় গঠন, নির্বাচন কমিশনারদের ন্যূনতম ও সর্বোচ্চ বয়স নির্ধারণ, নিরপেক্ষতা, ব্যক্তিগত একাগ্রতা ও সততা, অন্য অফিসে নিয়োগে বিধি-নিষেধ, নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়জ্ঞান, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় না থাকা নিশ্চিত করা। নির্বাচনের সময়ে প্রতিরক্ষাবাহিনী মোতায়েন ও তাদের পুলিশের ন্যায় ক্ষমতা প্রদান প্রভৃতি। কাদের সিদ্দিকীর আট দফা প্রস্তাব ॥ নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আট দফা প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করেছে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। বুধবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় দলের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী এ প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরেন। কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে দলটির ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল আলোচনায় অংশ নেন। এক ঘণ্টার এ আলোচনা শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের জানান, আলোচনার সময় রাষ্ট্রপতি বলেন, নির্বাচন গণতন্ত্রের অপরিহার্য উপাদান। তিনি আশা করেন আলোচনার মাধ্যমে একটি সুন্দর ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব হবে। তিনি জানান, আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানোয় কাদের সিদ্দিকী রাষ্ট্রপতির প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে উদ্যোগ নিয়ে রাষ্ট্রপতি যথার্থ অভিভাবকের ভূমিকা পালন করছেন। রাষ্ট্রপতির এই যুগান্তকারী উদ্যোগ ইতিহাসে অনেক দিন আলোচিত হবে। কাদের সিদ্দিকীর দলের প্রস্তাবগুলো হলো- ‘ব্যক্তিত্বসম্পন্ন দেশপ্রেমিক মানুষদের নিয়ে আস্থাভাজন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন। ২. কমিশনের একজন নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত। ৩. প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন। ৪. বছরে চারবার নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে ইসির আলোচনা হতে হবে। ৫. দলের মতামত না নিয়ে নির্বাচনী বিধি প্রণয়ন বা পরিবর্তন করা যাবে না। ৬. নির্বাচনী প্রচারে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ওপর বিধি-নিষেধ রাখা যাবে না। ৭. বছরে দুইবার প্রধানমন্ত্রী নিবন্ধিত দলগুলোর মতামত নেবেন এবং ৮. রাষ্ট্রপতি বছরে একবার নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন। আগামী ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সঙ্গে আলোচনায় বসবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। এছাড়া ২৭ ডিসেম্বর ওয়ার্কার্স পার্টি, ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) এবং একই দিন ইসলামী ঐক্যজোট, ২ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি (জেপি), ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সংলাপের সূচী রয়েছে।
×