ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকে সহায়তা করতে চায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২২ ডিসেম্বর ২০১৬

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকে সহায়তা করতে চায় বাংলাদেশ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী ও জঙ্গী গোষ্ঠী রোহিঙ্গা জনসাধারণের বঞ্চনা ও শোষণের সুযোগ নিতে পারে। অধিকার বঞ্চিত রোহিঙ্গাদের ক্ষোভকে ব্যবহার করতে পারে সন্ত্রাসী-জঙ্গীরা। তাই বাংলাদেশ এ বিষয়ে মিয়ানমারকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এসব তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যাসহ বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে ঢাকায় এসেছিলেন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো এলপি মারসুদি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। এছাড়া তেজগাঁওয়ে বাশার বিমান ঘাঁটিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে এক বৈঠকে অংশ নেন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো এলপি মারসুদি। বৈঠকের বিষয়ে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে সন্ত্রাসী ও জঙ্গী তৎপরতা নিয়ে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলোচনা করেন। তারা বলেছেন, এই অঞ্চলের দেশগুলো সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বৈঠকে বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চনা ও শোষণের শিকার হচ্ছে। তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশাও বিরাজ করছে। সে কারণে আন্তর্জাতিক জঙ্গীগোষ্ঠী তাদের ব্যবহারের সুযোগ নিতে পারে। এই অবস্থার মধ্যে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মিয়ানমারকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশ। ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশের ক্ষতি হয়, এমন কোন কিছু করবে না। বাংলাদেশের মাটি কোন জঙ্গী গোষ্ঠীকে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। নিরাপত্তার প্রশ্নে যে কোন ধরনের সহযোগিতা মিয়ানমারকে করতে চায় বাংলাদেশ। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় ও শক্তিশালী করার জন্য আলোচনা করেছেন। এছাড়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন তারা। এই সমস্যা সমাধানে কি করা যেতে পারে সেটাই ছিল তাদের আলোচনার বিষয়। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে রেতনো এলপি মারসুদি জানিয়েছেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ইন্দোনেশিয়া আন্তরিক। তারা সব সময় এই ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকবে। এছাড়া সীমান্তে রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি উন্নয়নে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখবে বলেও জানান। ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াঙ্গুনে আসিয়ান দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের বৈঠকের বিষয়টিও তুলে ধরেন। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ও আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা (আইওএম) যৌথভাবে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে ব্রিফ করেছে। এছাড়া ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কক্সবাজার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ছাড়াও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক, ইউএনএইচসিআর এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি শিনিজি কুবো, আইওএম বাংলাদেশ মিশন প্রধান শরৎ দাশ ইন্দোনেশিয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো এলপি মারসুদির সঙ্গে ছিলেন। হেলিকপ্টারযোগে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো এলপি মারসুদি কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান। কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গেও কথা বলেন রেতনো এলপি মারসুদি। সেখান থেকে বিকেলে ফিরে আসেন ঢাকায়। সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মঙ্গলবার রাতে জাকার্তার উদ্দেশে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন। সোমবার মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সংগঠন আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো এলপি মারসুদি। সেখান থেকে ঢাকায় আসেন তিনি। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর অভিযানে গত দুই মাসে ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে ওই অঞ্চল থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছে। যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশে ঢুকেছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা অভিযোগ করেছে, সেনারা তাদের স্বজনদের হত্যা করার পাশাপাশি নারী ও শিশুদের ধর্ষণ করছে, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেশী দেশগুলো কূটনৈতিক চাপে ফেলেছে মিয়ানমারকে। বিশেষ করে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার চাপের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বৈঠক ডাকেন সুচি।
×