ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আশুলিয়ায় আরও চার গার্মেন্টস অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২২ ডিসেম্বর ২০১৬

আশুলিয়ায় আরও চার গার্মেন্টস অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণা

নিজস্ব সংবাদদাতা, সাভার, ২১ ডিসেম্বর ॥ শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে বুধবার সকালে আশুলিয়ার আরও চারটি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে বিজিএমইএ ৫৫ কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয়। বুধবার সকালে কারখানাগুলোর প্রধান ফটকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিস টানিয়ে দেয়া হয়। শ্রমিকরা কারখানার সামনে এসে নোটিস দেখে বাসায় ফিরে যায়। সপ্তাহখানেক ধরে চলা এ আন্দোলনে দুটি পোশাক কারখানার পক্ষ থেকে আশুলিয়া থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। এতে আসামি করা হয়েছে দুই শতাধিক শ্রমিককে। এরই মধ্যে পুলিশের হাতে আটক হয়েছে দুজন। এছাড়া একটি পোশাক কারখানার ১২১ শ্রমিককে বরখাস্ত করা হয়েছে। জানা গেছে, ৫৯ কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার পর অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সকাল থেকেই শিল্প পুলিশের সঙ্গে জেলা পুলিশ, র‌্যাব, আর্মড পুলিশ ও বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নেয়। বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর মহাসড়কে র‌্যাবের পাশাপাশি বিজিবির সদস্যদের টহল দিতে দেখা যায়। আশুলিয়ার পরিস্থিতি শান্ত রাখতে এদিন ১৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। তাদের সতর্ক অবস্থানের কারণে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শ্রমিকরা কোন স্থানে জড়ো হয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারেনি। এদিকে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না- এমন ঘোষণা দিয়ে মাইকিং করে পুলিশ। ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার শাহ্ মিজান শাফিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ন্যূনতম মজুরি ১৫ হাজার টাকা দাবির পাশাপাশি বিগত কয়েক দিন ধরেই বাসাভাড়া বৃদ্ধি ও গ্যাস সঙ্কটের অভিযোগ এনে কর্মবিরতি পালন করছে শ্রমিকরা। তাদের এসব দাবি অবৈধ। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে শ্রমিক এলাকায় বাসা ভাড়া না বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শ্রমিকদের কল্যাণে নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিকে চক্রান্ত হিসেবে দেখছে বিজিএমইএ। তিনি বলেন, কারা শ্রমিক অসন্তোষের সঙ্গে জড়িত খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এদিকে আশুলিয়ায় দুটি পোশাক কারখানার দুই শতাধিক শ্রমিকের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। বুধবার সকালে উইন্ডি গ্রুপ ও ফাউন্টেন কারখানা কর্তৃপক্ষ আশুলিয়া থানায় এ দুটি মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে কারখানার ভেতরে ভাংচুর, বেআইনীভাবে বেতন বৃদ্ধির দাবি ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে জামগড়া ছয়তলা এলাকার উইন্ডি গ্রুপের ১২১ শ্রমিককে বরখাস্ত করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। পুলিশ মামলার আসামি উইন্ডি গ্রুপের দুই শ্রমিককে আটক করে। আটককৃতরা হলো কাটিং অপারেটর মাসুদ (২৮) ও কাটিং সহকারী বাকের (২৫)। কারখানার মূল ফটকের সামনে ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের ছবি সম্বলিত তালিকা টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়। এ ব্যাপারে উইন্ডি গ্রুপের প্রশাসনিক কর্মকর্তা একেএম ফজলুল হক বলেন, শ্রমিকরা অন্যায়ভাবে মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন করে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে। কারখানার ভেতরে ভাংচুরের অভিযোগে তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মাসুদ বাদী হয়ে শ্রমিক জীবন মিয়া, আসাদুজ্জামান, হাফিজুর রহমান, সুরুজ মিয়া, সুলতানা আক্তারসহ ২১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও শতাধিক শ্রমিককে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। অপরদিকে, একই অভিযোগে গাজীরচট এলাকার ফাউন্টেন কারখানা কর্তৃপক্ষ ১৮ শ্রমিকের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৬০জনকে আসামি করে অপর মামলাটি দায়ের করেন। পুলিশের পক্ষ থেকে শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে কিছু ভুঁইফোড় নামধারী শ্রমিক সংগঠনের কতিপয় নেতা জড়িত থাকার ইঙ্গিত দেয়ার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছে ওই সব শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কর্মস্থল অনির্দিষ্টকালের বন্ধ ঘোষণা দেয়ায় শ্রমিকদের অনেকেই গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। ওই সকল পোশাক শ্রমিকরা জানায়, কারখানা কবে কখন খুলবে- তার অপেক্ষা না করে গ্রামের বাড়ি গিয়ে কৃষি কাজ, না হয় ভিন্ন কিছু করবেন। এদিন সকালে কিছু সময়ের জন্য ভাংচুরের আশঙ্কায় বাস মালিকরা সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখে। আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১’র পরিচালক মোস্তাফিজার রহমান শ্রমিক বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, যে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কারখানাগুলোর সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মহসিনুল কাদির বলেন, কারখানার ভেতরে ভাংচুর ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দুই শতাধিক শ্রমিকের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের মতবিনিময় ॥ পোশাক কারখানায় কর্মপরিবেশ বজায় রাখতে গাজীপুরের বিভিন্ন অঞ্চলের শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তাদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় শ্রমিক নেতৃবৃন্দ তাদের বিভিন্ন সমস্যা ছাড়াও মজুরি কমিশন ও ট্রেড ইউনিয়ন বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন। বুধবার দুপুরে গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ এর নলজানি কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, গাজীপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক এমএ কাশেম জানান, বেশিরভাগ কারখানায় শ্রমিকদের ন্যায্য বেতন ভাতা দেয়া হয় না। বেতন-ভাতার একাধিক শীট তৈরি করা হয়। এ বৈষম্য দূর না হলে কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দূর হবে না। বাংলাদেশ সংযুক্ত গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের গাজীপুর কমিটির সভাপতি ফেরদৌসী বেগম বলেন, শ্রমিকদের মানবিক দাবি যেমন অসুস্থতাজনিত ছুটি, বিয়েজনিত ছুটি চাইলেও তাদের ছুটি দেয়া হয় না। অনেক সময় কোন নোটিস ছাড়াই শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হয়। সভাপতির বক্তব্যে শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ পরিচালক মোঃ শোয়েব আহাম্মদ বলেন, কাজের প্রতি, কারখানার কর্তৃপক্ষের প্রতি ও আইনের প্রতি সকলের শ্রদ্ধাবোধ ও সম্মান থাকতে হবে। র‌্যাব-১’র উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মহিউল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রাসেল শেখ, গাজীপুর ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাখাওয়াত হোসেন, কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের সহ-শ্রম পরিচালক মহব্বত হোসাইন ও শ্রম পরিদর্শক (সাধারণ) মোঃ তারিকুল ইসলাম, জয়দেবপুর থানার ওসি খন্দকার রেজাউল হাসান রেজা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর মীর রকিবুল হক প্রমুখ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
×