ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কাউন্টার টেরর ইউনিট প্রধানমন্ত্রীর বিমানের মামলা তদন্ত করবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২২ ডিসেম্বর ২০১৬

কাউন্টার টেরর ইউনিট প্রধানমন্ত্রীর বিমানের মামলা তদন্ত করবে

আজাদ সুলায়মান ॥ প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনায় দায়ের করা মামলাটির তদন্তভার ডিবির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। মামলা দায়েরের বারো ঘণ্টা পরই এ সিদ্ধান্ত দেন ঢাকা মহানগর কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া। মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়। এদিকে এ মামলার পুলিশ প্রতিবেদনের জন্য আগামী ১২ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছে আদালত। বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম মোঃ গোলাম নবী এই তারিখ ধার্য করেন। ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মোঃ লিয়াকত আলী এ তথ্য জানান। চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার ওসি নুরে আজম জানান, রাতে মামলা দায়েরের পরই আসামি গ্রেফতারের অভিযানে নামে পুলিশ। তদন্তের শুরুতেই ঘটনাস্থল বিমানে হ্যাঙ্গার পরিদর্শন করা হয়। বেশ কিছু আলামতও জব্দ করা হয়। তবে আসামিদের নাম-ঠিকানা সবই সংগ্রহ করা হয়েছে। যে কোন সময় তারা আটক হতে পারেন। জানা যায়, এ মামলার এজাহারে আসামিদের বাসাবাড়ির কোন ঠিকানা উল্লেখ করা হয়নি। তাদের কর্মস্থলের ঠিকানা বিমান প্রকৌশল বিভাগ ও পি নম্বর লেখা হয়েছে। এতে পুলিশকে ঠিকানা সংগ্রহ করে অভিযানে নামতে হয়। পুলিশ উত্তরায় দুই আসামির ঠিকানায় গিয়ে কাউকে পায়নি। রাতে ডিবির কাউন্টার টেররিজম ইউনিট মামলাটির দায়িত্বভার গ্রহণের পর ডিসি মহিবুল ইসলাম খান তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত হন। তিনি জানান, মামলাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী উড়োজাহাজে মানবসৃষ্ট ত্রুটির ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া বিমানের ৯ কর্মকর্তা-কর্মীকে আসামি করে বিমানের পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট) এমএম আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। আসামিরা হলেন- প্রধান প্রকৌশলী (প্রডাকশন) দেবেশ চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী (কোয়ালিটি এ্যাসুরেন্স) এস এ সিদ্দিক ও প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার (মেনটেন্যান্স এ্যান্ড সিস্টেম কন্ট্রোল) বিল্লাল হোসেন, প্রকৌশল কর্মকর্তা এসএম রোকনুজ্জামান, সামিউল হক, লুৎফর রহমান, মিলন চন্দ্র বিশ্বাস ও জাকির হোসাইন এবং টেকনিশিয়ান সিদ্দিকুর রহমান। মঙ্গলবার রাতে বিমান পর্ষদের বার্ষিক সাধারণ সভার ব্যারিস্টার তানজীবুল আলমের সঙ্গে মামলার এজাহার লেখার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। আলোচিত এ মামলা নিয়ে বিমান পর্ষদের বৈঠকেও আলোচনা হয়। এর পর রাত দশটায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদ অপর দুই পরিচালক উইং কমান্ডার আসাদুজ্জামান ও পরিচালক বেলায়েত হোসেনকে নিয়ে এক বৈঠকে বসেন। সেখান থেকেই এজাহার নিয়ে থানায় ছুটে যান বাদী উইং কমান্ডার আসাদুজ্জামান। রাত পৌনে বারোটায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। ওসি নুরে আজম মিয়ার সঙ্গে এ সময় কিছু মামলার আসামিদের বিষয়ে কিছু আলোচনা করেই দ্রুত থানা ত্যাগ করেন বাদী। পুলিশ জানায়, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ (গ) ও ১০৯ , ১১৮, ১২০ (ক), ২৮৭ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়। যা দায়িত্ব পালনে অবহেলা, গাফিলতি, অদক্ষতা, ত্রুটি, নাশকতা, ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। এসব অভিযোগ প্রমাণে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার আবেদন জানানো হয় এজাহারে। বুধবার দুপুুরে বিমান প্রকৌশল শাখা গিয়ে দেখা যায়, ওই নয় আসামির সহকর্মীদের মধ্যে রীতিমতো গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। মামলার এজাহারে নয়জনের বাইরেও আরও কজন অজ্ঞাতনামাকে আসামি করায় অস্থিরতা দেখা দিয়েছে প্রকৌশল শাখায়। কখন পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায় এমন অনিশ্চয়তার মাঝে কর্মস্থলে তাদের চিন্তিত দেখা গেছে। এমনই একজন বললেন, এখন আর এখানে চাকরি করা যাবে না। আগে আতঙ্কে থাকতাম সোনা চুরির মামলায় ডিবির অভিযানে। এখন তো আরও কঠিন মামলা। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার তদন্তের স্বার্থের দোহাই দিয়ে পুলিশ কখন কাকে চেয়ার থেকে তুলে নিয়ে যায় এমন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বিমানের প্রকৌশল শাখায়। গত ২৭ নবেম্বর হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজে (বোয়িং-৭৭৭) যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এ কারণে তুর্কমেনিস্তানে জরুরী অবতরণ করে বিমানটি। এ ঘটনার পর অন্য একটি উড়োজাহাজ পাঠিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বুদাপেস্টে পৌঁছানোর উদ্যোগ নেয়া হলেও পরবর্তী সময়ে ত্রুটি সারিয়ে ওই উড়োজাহাজেই হাঙ্গেরি নিয়ে যাওয়া হয়।
×