ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন- টক অব দ্য কান্ট্রি

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২২ ডিসেম্বর ২০১৬

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন- টক অব দ্য কান্ট্রি

শাহীন রহমান ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় নির্বাচনের আবহ বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন প্রধান দুই দলের প্রার্থীর লড়াইয়ে এ নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। সারা দেশের জনগণের দৃষ্টি এখন এ নির্বাচনের দিকে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অংশ নেয়ায় সারাদেশের সাধারণ মানুষের আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। চায়ের কাপেও এ নির্বাচনের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। টেলিভিশনের টকশোতে এখন আলোচনার বিষয় এটিই। সবার এখন একটাই জিজ্ঞাসা- কে হচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের নগর অধিপতি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনটা নারায়ণগঞ্জে হলেও সবার দৃষ্টি এখন এ নির্বাচনের দিকে। প্রার্থিতা ছাপিয়ে লড়াই হবে মূলত আওয়ামী লীগ আর বিএনপির মধ্যে। বিএনপি এ নির্বাচনকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অস্ত্র হিসেবে দেখছে। এজন্য তারা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে বারবারই সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়ে আসছে। অবশ্য তাদের পক্ষ থেকে বারবারই দাবি করা হচ্ছে এ নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিএনপি প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে। তাই তারা ভাল নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ হবে দেশে ভবিষ্যত গণতন্ত্র কোন দিকে যাবে। অপর দিকে আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনকে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের মাপকাঠি হিসেবে দেখছে। তাদের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে দলের প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইতোমধ্যে দলের প্রার্থীর জয়লাভের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, এ নির্বাচনে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা না হলে নৌকা মার্কা বিজয়ী হবে। তবে নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনে যে দলের জয়-পরাজয় ঘটুক না কেন সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে বলা যায় বছর শেষে ইসি একটি ভাল নির্বাচন উপহার দিতে যাচ্ছে। এমনকি বুধবার পর্যন্ত এ নির্বাচন নিয়ে প্রধান দুই দলের ইতিবাচক মনোভাব লক্ষ্য করা গেছে। বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নির্বাচনের বর্জন নয়, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তারা নির্বাচনের মাঠে থাকবে। গত ১৪ নবেম্বর তফসিল ঘোষণার দিন থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন। একই সময়ে সারাদেশে জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা চললেও গণমাধ্যম বা সাধারণ মানুষের মুখে এ নিয়ে আলোচনা খুবই সীমিত। সব কিছু ছাপিয়ে এখন নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনই আলোচনার মুখ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আজ সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। তা বিরতি ছাড়াই চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ৪টার পর ভোট কেন্দ্রের ভেতরে কোন ভোটার অবস্থান করলে শেষ সময়ের পরেও তার ভোট গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে ইসি’র পক্ষ থেকে এ নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের ব্যবস্থাই নেয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহল শুরু করেছে। কমিশনের পক্ষ থেকে সাধারণ ভোটারদেরও নিঃসংকোচে ভোট দেয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। তারা নারায়ণগঞ্জ সিটিতে সুন্দর নির্বাচন উপহার দেয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ইসি মোঃ শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সুন্দর নির্বাচন উপহার দেয়া হবে। কেউ যদি এ নির্বাচনে কোন ধরনের গোলযোগের চেষ্টা করে তবে ছাড় দেয়া হবে না। সবাই দেখবে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইসি শক্ত অবস্থান নিয়েছে, অভিজ্ঞতার ভা-ার উজাড় করে দিয়ে সুন্দর নির্বাচন করছে ইসি। নারাণয়গঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মোট ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তবে সব সময় আলোচনায় রয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভী ও বিএনপির প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। সেলিনা হায়াত আইভী এ সিটির সদ্য সাবেক মেয়র। আগেরবার তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমানকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। কঠিন প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেই তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। এ তুলনায় বিএনপির প্রার্থী অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে অনেকটাই নবীন। আবার ৫ বছর মেয়র থাকাকালীন আইভীর বিরুদ্ধে কোন ধরনের অভিযোগ ওঠেনি কোন মহল থেকে। ফলে এ নির্বাচনে তার বিজয়ে পজিটিভ দিক হচ্ছে বিগত ৫ বছরের উন্নয়নমূলক কর্মকা- এবং আওয়ামী লীগের জনসমর্থন। অপর দিকে বিএনপির প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাথাওয়াত হেসেন খান অনেকটাই অপরিচিত মুখ। বিএনপির কোন কমিটিতেও তিনি ছিলেন না। নারায়গঞ্জের রাজনীতিতে তার সক্রিয় কোন অংশগ্রহণ নেই। তবে ৭ মার্ডারের প্রধান আইনজীবী হিসেবে তিনি অনেকটা আলোচিত। বিএনপির মনোনয়নের কল্যাণে এখন তিনি সবার কাছে পরিচিত মুখে পরিণত হয়েছেন। মূলত দলীয় ইমেজকে কাজে লাগিয়েই ভোট প্রার্থনা করতে হচ্ছে তাকে।
×