ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ পাত্তা পেল না মস্কো আলোচনায়

সিরিয়া ইস্যুতে ত্রিদেশীয় মতৈক্য

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২২ ডিসেম্বর ২০১৬

সিরিয়া ইস্যুতে ত্রিদেশীয় মতৈক্য

সিরিয়া শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে রাশিয়া, ইরান ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মঙ্গলবার মস্কোয় বিশেষ বৈঠক করেছেন। দেশটিতে ছয় বছরের গৃহযুদ্ধ অবসানের উপায় বের করাই ছিল তাদের এ বৈঠকের লক্ষ্য। যুক্তরাষ্ট্র অথবা জাতিসংঘের কোন প্রতিনিধিকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এদিকে সিরিয়ার সেনাবাহিনী মঙ্গলবার পূর্ব আলেপ্পো থেকে অবশিষ্ট বেসামরিক লোকজন ও বিদ্রোহীদের বের হয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সেনাবাহিনী এখন এর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পূর্ব আলেপ্পো এখন কার্যত একটি ধ্বংসস্তূপ। খবর এএফপি ও নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইনের। মস্কোয় ত্রিদেশীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক শেষে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সিরিয়া সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে সমঝোতা চুক্তির জন্য কাজ করে যেতে ও নিশ্চয়তা বিধানের দায়িত্ব পালন করতে ইরান, রাশিয়া ও তুরস্ক একমত হয়েছে। এছাড়া মানবিক ত্রাণ সাহয়তা পৌঁছাতে সহায়তা করতে বিস্তৃত পরিসরে অস্ত্রবিরতি প্রতিষ্ঠার জন্য তিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলোচনা করা আলোচনা করেছেন। প্রায় নজিরবিহীন এই বৈঠকের অন্যতম বিশেষত্ব ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘকে গুরুত্বহীন করে দেয়া। যুক্তরাষ্ট্র অনেকদিন ধরেই সিরিয়া সঙ্কটের বিষয়ে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেছিল। সিরিয়ার শাসক বাশার আল আসাদের অনুগত বাহিনী পূর্ব আলেপ্পো দখল করার পর ভয়াবহ মানবিক সঙ্কটের মুখে পড়েছে সেখানকার আটকা পড়া লোকজন। ছয় বছরের গৃহযুদ্ধে পূর্ব আলেপ্পো জয় আসাদ বাহিনীর জন্য একটি বড় অর্জন। দেশটিতে চলমান গৃহযুদ্ধে এ পর্যন্ত সাড়ে চার লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। পূর্ব আলেপ্পো থেকে অবরুদ্ধ লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার কাজ তদারকি করার জন্য ২০ জন পর্যবেক্ষক আসার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে সরকার ও বিদ্রোহী প্রতিনিধিরা, জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান দুজারেক একথা বলেছেন। অনেক কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপের পর নগরীর ওই অংশ থেকে লোকজনকে বের হয়ে আসার সুযোগ দিতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো সম্মত হয়েছে। আসাদের আঞ্চলিক মিত্র ও পৃষ্ঠপোষক রাশিয়া ও ইরান এ বিষয়ে নিশ্চয়তা দেয়ার পরই আটকা পড়া লোকজন বাইরে আসার সুযোগ পায়। আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে পূর্ব আলেপ্পো পুরোপুরি জনশূণ্য করে ফেলা সম্ভব হবে বলে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ আশা প্রকাশ করেছেন। সূত্র জানায়, নগরী থেকে সবাই বেরিয়ে যাওয়ার পর আসাদের বাহিনী সেখানে প্রবেশের পরিকল্পনা করেছে। বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার কাজ নজরদারি করছে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস। সংস্থার হিসাব মতে নগরীর ওই অংশে এখনও অন্তত ২৫ হাজার লোক রয়ে গেছে। রেডক্রসের একজন মুখপাত্র বলেছেন বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পার্শ্ববর্তী দুটি গ্রাম ফুয়া ও কাফরায়া থেকেও সাড়ে ৭শ’ লোককে বের করে আনা হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ভোরে পূর্ব আলেপ্পো থেকে যাত্রীবাহী ১০টি বাস বেরিয়ে গেলেও দিনের পরবর্তী সময়ে আর কাউকে সরিয়ে নিতে সেখানে যানবাহন পাঠানো হয়নি। কাফরায়া থেকে এএফপির সংবাদদাতা জানিয়েছেন সেখানে তীব্র খাদ্য সঙ্কট বিরাজ করছে। চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল টিম সেখানে পাঠানো হলেও লোকজন তাদের কাছে খাদ্য ও পানি আশা করছে। আটকা পড়া লোকজনের অনেকে আহত ও অসুস্থ। এদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। আলেপ্পো থেকে অসুস্থ ৩শ’ জনকে সরিয়ে আনার কথা জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আলেপ্পো থেকে বিদ্রোহীদের হটাতে গত মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ব্যাপক অভিযান শুরু করে আসাদ বাহিনী। চার বছর ধরে নগরীর পূর্বাঞ্চল বিদ্রোহীদের শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। আসাদ বাহিনীর একজন সৈন্য মঙ্গলবার এএফপিকে বলছিলেন, তিনি আশা করছেন একদিনে মধ্যেই সব বিদ্রোহী ও সাধারণ মানুষকে বের করে আনা সম্ভব হবে। অভিযান শেষ হবে এবং তিনি ছুটিতে যেতে পারবেন। সিরিয়া সঙ্কট নিয়ে এর আগে জেনেভায় বহু দফা আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত সবগুলো ব্যর্থ হয়। গত বছর এই লড়াইয়ে রাশিয়া জড়িয়ে পড়ার পর থেকে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ভিন্ন দিকে মোড় নেয়।
×