ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ২১ ডিসেম্বর ২০১৬

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা

(পূর্ব প্রকাশের পর) ৩। প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ধারণা / তেমার ধারণা ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর। ভূমিকা ঃ বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকার কারণে তারা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত্র অনেক জটিলতার সম্মুখীন হয়। ছেলেমেয়েদের নিজেদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য প্রজনন স্বাস্থ্যের সুরক্ষা অন্যতম প্রধান শর্ত। তাছাড়া ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য নিশ্চিৎ করার জন্য প্রত্যেকেরই প্রজনন স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা উচিৎ। প্রজনন স্বাস্থ্য শুরু হয় বয়:সন্ধিকাল থেকেই। প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ধারণা ঃ একটি শিশু যখন পরিবারে জন্মগ্রহণ করে, তখন থেকে সে ক্রমান্বয়ে বড় হয়েওঠে এবং বয়সের বিভিন্নস্তর অতিক্রম করে। শৈশব থেকে কৈশোরে পর্দাপণকালে তার শারীরিক ও মানসিক নানারকম পরিবর্তন ঘটে। এ সময়টা হচ্ছে বয়ঃসন্ধিকাল।এরপর তার যৌবনে অভিষিক্ত হওয়ার সময়। একটি ছেলে বা মেয়ের যৌবনকালে তার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সুষম বিকাশ সাধন হয়। শরীরের যে সব অঙ্গ সন্তান জন্মদানের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, সেগুলো সুস্থভাবে গঠিত ও বিকশিত হয়। প্রজনন হচ্ছে সন্তান জন্মদানের প্রক্রিয়া। প্রয়োজনীয়তা ঃ আমাদের পরবর্তি প্রজন্মের নিরাপদ জন্ম ও সুস্বাস্থ্য এবং বর্তমান প্রজন্মের সার্বিক সুস্বাস্থ্য প্রজনন স্বাস্থ্যর উপর নির্ভর করে। প্রজনন স্বাস্থ্য হচ্ছে মানুষের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের একটি বিশেষ অংশ। অতএব প্রজনন স্বাস্থ্য প্রজননতন্ত্রের কাজ ও প্রজননপ্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত রোগ বা অসুস্থতার অনুপস্থিতিকে বুঝায় না। এটা শারীরিক,মানসিক ও সামাজিক কল্যাণকর এক সুস্থ অবস্থার মধ্য দিয়ে প্রজননপ্রক্রিয়া সম্পাদনের একটি অবস্থা। তাই নিরাপদ ও উন্নত জীবনযাপনের জন্য প্রত্যেকেরই প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান থাকা জরুরী। যবানিকা ঃ উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি আগমী প্রজন্মের জাতীয় সুস্বাস্থ্য নির্ভর করে বর্তমান প্রজন্মের সুস্থ প্রজনন স্বাস্থ্যর উপর। তাই এই বিষয়ে সকলের সজাগ দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। ৪। প্রজনন স্বাস্থ্য কাকে বলে ? অপরিণত বয়সে গর্ভধারণের প্রতিরোধ সম্পর্কে আলোচনা কর। ভূমিকা ঃ জন্ম থেকে মানুষের জীবনের বৃদ্ধি ও বিকাশ এক অবিচ্ছিন্ন ধারায় এগিয়ে চলে।এই এগিয়ে চলার ধারা অব্যাহত রাখার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়। প্রজনন স্বাস্থ্য ঃ বিখ্যাত শিক্ষাবিদ আরনেস্ট জোনস বলেন,”বিকাশমান জীবনের শুরু থেকে অর্থাৎ জন্ম থেকে প্রৌঢ়ত্ব-প্রতিটি স্তরেই তার সাধারণ স্বাস্থ্যের সাথে প্রজনন স্বাস্থ্যের ব্যাপরটি জড়িত। ” শরীরের যে সব অঙ্গ সন্তান জন্মদানের সঙ্গে সরাসরি জড়িত,সেসব অঙ্গের স¦াস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়কে প্রজনন স্বাস্থ্য বলে । অপরিণত বয়সে গর্ভধারণের প্রতিরোধ ঃ দেশের প্রচলিত আইনে বিয়ের বয়স হওয়ার আগে ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিলে তা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। অপরিণত বয়সে গর্ভধারণের প্রতিরোধে নিন্ম লিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন; ১। বাল্য বিবাহ বন্ধ করা ঃ অপরিণত বয়সে গর্ভধারণের প্রতিরোধ কারার জন্য অপরিণত বয়সে বিয়ে অর্থাৎ বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হবে। ২। কুসংস্কার দূর করা ঃ কুড়িতে বুড়ি, এই ধরণের কুসংস্কার দূর করতে হবে। ৩। শিক্ষার প্রসার ঘটানো ঃ শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটানোর মধ্য দিয়ে বিশেষ করে নারী শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটাতে পারলে অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ প্রতিরোধ সম্ভব। ৪। কর্ম সংস্থান সৃষ্টি ঃ প্রবাদ আছে ,অলস মস্তিকে শয়তানের কারখানা। তাই নতুন নতুন কর্ম সংস্থান সৃষ্টি করে অপরিণত বয়সে গর্ভধারণর প্রতিরোধ করা যায়। ৫। সচেতনতা বৃদ্ধি ঃ অপরিণত বয়সে গর্ভধারণের কুফল সম্পর্কে সংবাদপত্র, রেডিও ,টেলিভিশন, নাটক,গান প্রভৃতির মাধ্যমে জনগনের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রয়োজনে সভা , সেমিনার, ওয়ার্কসপ প্রভৃতির মাধ্যমে । অপরিণত বয়সে গর্ভধারণকে নিরুৎসাহিত করা এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারী-বেসরকারী ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হাবে। ৫। প্রজনন স্বাস্থ্য রক্ষার উপায় ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর। ভূমিক ঃ প্রজনন স্বাস্থ্য সামগ্রিক স্বাস্থ্যের একটি অংশ। আমাদের পরবর্তি প্রজন্মের নিরাপদ জন্ম ও সুস্বাস্থ্য এবং বর্তমান প্রজন্মের সার্বিক সুস্বাস্থ্য প্রজনন স্বাস্থ্যর উপর নির্ভর করে। প্রজনন স্বাস্থ্য রক্ষার উপায় ঃ প্রজনন স্বস্থ্য রক্ষার প্রথম কথা হলো বয়ঃসন্ধি যে সব শারীরিক পরিবর্তন, সে সব বিষয়ে একটি কিশোর - কোশোরীর করণীয় কী তা ভালোভাবে জেনে নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী চলতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এ সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঋতু¯্রাব বা বীর্যপাত ঘটলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থাকা , নিয়মিত গোসল করা দরকার। এ সময় পুষ্টিকর খাবার ও প্রচুর পানি পান করতে হবে। কোন শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রজনন স্বাস্থ্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তা ঃ আামাদের দেশে প্রতিবছর সন্তান জন্মদান করতে গিয়ে অনেক মা মৃত্যুবরণ করেন। এর কারণ অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে ও সন্তান ধারণ। ফলে বিভিন্ন প্রকার রোগে আক্রান্ত হয় এবং স্বাস্থ্য ভেঙ্গে যায়। এতে পরিবারে আর্থিক সংকট দেখা দেয় এবং পরিবারে অশান্তি নেমে আসে। মেয়েরা পরিণত বয়সে অর্থাৎ ২০ বছরের পর গর্ভধারণ করলে প্রসূতি মায়ের ও শিশুমৃত্যুর হার কমবে। আবার ঘনঘন সন্তান নিলে মা ও শিশুর জীবন ঝুঁকির সম্মুখীন হয়। এই ঝুঁকি কমানোর জন্য সন্তান জন্মদানের মধ্যে বিরতি দিতে হবে। এর ফলে প্রজনন স্বাস্থ্যের সুস্থতাও বজায় থাকবে এবং শিশুরা স্বাস্থ্যবান ও নিরোগ হবে এবং পরিবারে ও সমাজে শান্তি বিরাজ করবে। যবানিকা ঃ উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি আগমী প্রজন্মের জাতীয় সুস্বাস্থ্য নির্ভর করে বর্তমান প্রজন্মের সুস্থ প্রজনন স্বাস্থ্যর উপর। তাই এই বিষয়ে সকলের সজাগ দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন।
×