ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়র পদে লড়াই হবে নৌকা-ধানে

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২১ ডিসেম্বর ২০১৬

মেয়র পদে লড়াই হবে নৌকা-ধানে

আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ পাঁচ মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী (নৌকা) ও বিএনপির প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের (ধানের শীষ) মধ্যে লড়াই হবে। অন্য মেয়র প্রার্থীরা হলেন- বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী মাহবুবুর রহমান ইসমাইল (কোদাল), ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মাওলানা এজহারুল হক (মিনার), ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি মাসুম বিল্লাহ (হাতপাখা)। দুই মেয়র প্রার্থী বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রার্থী রাশেদ ফেরদৌস (হাতঘড়ি) ও এলডিপির প্রার্থী কামাল প্রধান (ছাতা) নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. আইভী ও বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াতসহ ৫ প্রার্থীই নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়িয়েছেন। করেছেন গণসংযোগসহ নানামুখী প্রচার। তাদের পক্ষে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে প্রচার চালিয়েছেন। সোমবার পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের পক্ষে প্রচার চালিয়েছেন। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই প্রচার বন্ধ হচ্ছে। ২২ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ডা. আইভী ॥ ডা. আইভী ২০১১ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো মেয়র পদে নির্বাচিত হন। আর আগে তিনি ৫ বছর নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। আইভী সাবেক মেয়র প্রয়াত আলী আহমেদ চুনকার মেয়ে। ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাঁর সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে। তিনি ১৬ জানুয়ারি ২০০৩ নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নারী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১১ সালের ৩০ অক্টোরের নির্বাচনে ডা. আইভী বর্তমান সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানকে পরাজিত লক্ষাধিক ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন। গত ৫ বছরে আইভী সিটি কর্পোরেশনে ৬৬৩ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছেন। তফসিল ঘোষণার কিছুদিন আগে ডা.আইভীকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ দেন। সিটি মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান ও বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রশিদের নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়। পরে ডা. আইভী নিজেই নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র পদে মনোনয়ন চেয়ে কেন্দ্রে আবেদন করেন। ফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মনোনয়ন বোর্ড থেকে ডা. আইভীকে নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র পদে মনোনয়ন দেন। ডা. আইভী আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীসহ নেতাকর্মীরা আইভীর পক্ষে মাঠে নেমেছে। আইভী শতভাগে জয়ের আশাবাদী। প্রার্থীদের উন্নয়ন পরিকল্পনা ডা. আইভীর ॥ আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী ডা. আইভীর নির্বাচনী প্রচারপত্রে ৫ বছর মেয়াদী নগর উন্নয়নের পরিকল্পনার উল্লেখ হয়। এগুলো হলো- চলমান উন্নয়ন কর্মসূচী দ্রুত বাস্তবায়ন করা। সবুজ এবং পরিকল্পিত নগর গড়ে তোলার জন্য মাস্টার প্লান মোতাবেক সড়ক উন্নয়ন, সমন্বিত ড্রেনেজ সিস্টেম, পয়ঃনিষ্কাশন, জলাধার সংরক্ষণ এবং সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে কার্বনমুক্ত, পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তোলা। স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক, নগর হাসপাতাল এবং এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করা। এর পাশাপাশি শতভাগ স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা। সিটি কর্পোরেশনের সকল স্তরে সুশাসন নিশ্চিত করা। তথ্যপ্রযুক্তি সেবার মাধ্যমে ডিজিটাল নগরী গড়ে তোলা। সিটির ৩টি অঞ্চলে ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করা। দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচীর পরিধি সম্প্রসারণ করা। হতদরিদ্র পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের স্বল্প ব্যয়ে আবাসন ব্যবস্থা চালু করা। নতুন বাস ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করাসহ সিটি সার্ভিস চালু করা। সিটির আয় বৃদ্ধির জন্য নিজস্ব জমিতে মার্কেট ও ফ্ল্যাট নির্মাণ করা। হেরিটেজ পার্কসহ বিনোদনের জন্য শিশুপার্ক নির্মাণ করা। ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংক্ষণের উদ্যোগ নেয়া। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং শীতলক্ষ্যা নদীর পানি দূষণমুক্ত রাখার জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা। সাখাওয়াত হোসেন খান ॥ এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান নারায়ণঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন। তিনি নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার বাদী পক্ষে আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে পরিচিতি লাভ করেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র পদে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের কেউ মেয়র পদে প্রার্থী না হওয়ার কারণে এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান দলীয় মনোনয়ন চান। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা সাখাওয়াত হোসেন খানকে মনোনয়ন দেয়। এরপর সাখাওয়াতের পক্ষে কেন্দ্রীয় নেতারা প্রচারে অংশ নেন। ২৫ প্রতিশ্রুতি ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটারদের হোল্ডিং ট্যাক্স কমানো, আবর্জনা ও সন্ত্রাস-মাদকমুক্ত নগর প্রতিষ্ঠাসহ ২৫ দফা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসন খান। সোমবার বিকেলে শায়েস্তা খান রোডে প্রধান নির্বাচনী ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই প্রতিশ্রুতিগুলোর ঘোষণা দেন। বিএনপি প্রার্থীর প্রথম প্রতিশ্রুতি হচ্ছে, সিটি কর্পোরেশন পরিচালনার জন্য দলমত নির্বিশেষে সকল ধর্ম, বর্ণ ও পেশার লোকদের সমন্বয়ে উপদেষ্টা কাউন্সিল গঠন। বিজয়ী হলে এই উপদেষ্টা পরিষদের কাছ থেকে ২৫ দফার বাইরে আরও যেসব পরামর্শ আসবে সে অনুসারে আধুনিক ও বাসযোগ্য নগরী গড়ার কাজ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন সাখাওয়াত। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স কমানো এবং সন্ত্রাস, মাদক ও ময়লা-আবর্জনামুক্ত নগর ঘোষণা হবে আমার অগ্রাধিকার। মেয়র পদে অন্য ৩ প্রার্থী বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী মাহবুবুর রহমান ইসমাইল (কোদাল), ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মাওলানা এজহারুল হক (মিনার), ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি মাসুম বিল্লাহ (হাতপাখা) প্রচার চালিয়েছেন। ফ্যাক্টর ৭০ হাজার ভোটার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এবার ৭০ হাজার নতুন ভোটার ভোট দেবেন। অনেকেই মনে করছেন এই নতুন প্রজন্মের ভোটাররা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে ফ্যাক্টর হতে পারে। আর তাই নতুন প্রজন্মের ভোটারদের সমর্থন পেতে প্রার্থীরা নিয়েছিলেন নানা কৌশল। কথা হলো নির্বাচনে নতুন ভোটার নগরীর ৬৫ বিবি রোড (৪নং ডিআইটি) হোল্ডিংয়ের বাসিন্দা বিল্লাল আহমেদের সঙ্গে। প্রথমবারের নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন? উত্তরে তিনি বলেন, জীবনের প্রথম ভোট। যে যোগ্য, সৎ, নারায়ণগঞ্জকে যিনি উন্নত করতে পারবেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যিনি জোরালো ভূমিকা রাখতে পারবেন এমন লোককেই ভোট দেব। নগরীর চাষাঢ়ার প্রিপারেটরি স্কুল এলাকার হকার মোহাম্মদ লিটনও এবারই প্রথম ভোটার হয়েছেন। তিনি বললেন, আমি কাজ করে খাই। বিপদে আপদে যাকে কাছে পাব বলে মনে করি তাকেই ভোট দিব। নারায়ণগঞ্জ কমার্স কলেজের প্রশাসনিক বিভাগের চাকুরে মমিনুল ইসলাম জানান, মার্কা দেখে আমি ভোট দেব না। মার্কা আমার ভোটের ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলে না। নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে এমন লোককেই ভোট দেব। নবীন সাংস্কৃতিক কর্মী শাহাদাত হোসেন বলেন, এ নির্বাচনে আগের মেয়র আইভীর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য আমার ভাল লাগে। অন্যদিকে এ্যাডভোকেট সাখাওয়াতকে আমি বলতে গেলে আগে তেমনভাবে চিনতাম না। সাতখুনের মামলার বাদীপক্ষের তিনি আইনজীবী এটি শুনেছি। তবে এখনও কাকে ভোট দেব ঠিক করিনি। শেষ মূহূর্তে ঠিক করব। তরুণ কাউন্সিলর প্রার্থী শারমিন হাবিব বিন্নি বলেন, এবার বিপুল সংখ্যক তরুণ-তরুণী নির্বাচনে ভোটার হয়েছেন। তারা অবশ্যই নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা কাজ করছি। নতুন ভোটারদের সমর্থন পেতে তাই সব প্রার্থীই বিভিন্ন মতবিনিময় অনুষ্ঠানে নিজেকে তরুণদের প্রতিনিধি হিসেবে উল্লেখ করছেন। সাহসিকতার সঙ্গে নিজ নিজ কাজ তুলে ধরেছেন। নিজেকে তরুণদের প্রতিনিধি দাবি করে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমি মনে করি আমার কাজকর্মের মধ্যে তারুণ্যের ছাপ রয়েছে। আমার কর্মীদের বেশিরভাগ তরুণ। নতুন ভোটাররা সবচেয়ে বেশি যেটা দেখবে কোন ব্যক্তি সুখে, দুঃখে বা সাহসিকতার সঙ্গে তাদের পাশে এসে দাঁড়াবেÑ সে হিসেবে তাদের সমর্থন আমিই পাব। তরুণ ভোটারদের ভোট টানার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, নবীন ভোটারদের বিষয়টি গতবারও আমার মাথায় ছিল। এবারো আছে। দায়িত্ব পালনের সময় আমি তাদের যে চাওয়া তা পূরণের চেষ্টা করেছি। তরুণ-তরুণীরা চায় মাঠ, সবুজ জায়গা, খোলা চত্বর, বিকশিত হওয়ার যথাযথ নিরাপত্তা। আমি জিমখানা মাঠকে আলাউদ্দিন খান স্টেডিয়ামে পরিণত করেছি। শহীদ মিনারকে সংস্কার করেছি। নগরীর রাস্তায় রাস্তায় গাছ লাগিয়ে শহরকে আরও সবুজ করেছি। পঞ্চবটীতে পার্ক করেছি। সোনাকান্দায় শেখ রাসেল স্মৃতি ইকোপার্ক করার উদ্যোগ নিয়েছি। জিমখানা লেককে ঘিরে বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পার্ক করেছি। যেখানে তরুণরা সময় কাটাতে পারবে। শীতলক্ষ্যা-ধলেশ্বরী সংযোগ খাল সংস্কারের যে উদ্যোগ নিয়েছি সেখানেও বিশাল গ্রীন স্পেস তৈরি হবে। তরুণদের জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ হবে। এখনকার তরুণ-তরুণীরা ইন্টারনেটে পুরো বিশ্বটাকে দেখে। তারা সাহসীদের পছন্দ করে। বাগাড়ম্বর নয় কাজকে পছন্দ করে। আমার মনে হয় আমি তাদের সে পছন্দের প্রতিনিধি।
×