ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়াকে ঠেকাতেই বিধিনিষেধ ॥ রিজভী

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২১ ডিসেম্বর ২০১৬

খালেদা জিয়াকে ঠেকাতেই বিধিনিষেধ ॥ রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ ঠেকাতেই ভোটের ৭২ ঘণ্টা আগে নির্বাচনী প্রচারণায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, সরকারের ইচ্ছা পূরণে নির্বাচন কমিশন এ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনে রাজি হয়নি। নির্বাচন কমিশনের এ অবস্থান থেকেই এ নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ার ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশনের বিধি নিষেধের কারণে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগে অংশ নিতে পারেননি। হঠাৎ করে বহিরাগতদের প্রচারণার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেয়ার কারণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও নজিরবিহীন। তিনি বলেন, বিগত যে কোন নির্বাচনে ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে নির্বাচনী এলাকার বাইরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হতো। এটাই ছিল আইন, এটাই ছিল রেওয়াজ। কিন্তু এবার সেই সময়সীমা বাড়িয়ে ৭২ ঘণ্টা করা হলো। রিজভী বলেন, মূলত খালেদা জিয়া দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নিলে ধানের শীষের পক্ষে আরও ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই সরকার ইসিকে দিয়ে এই পরিপত্র জারি করিয়েছে। আর এটা যে সরকারের নির্দেশেই করা হয়েছে সেটি উপলব্ধি করতে কোন ইনফরমেশন টেকনোলজির আশ্রয় নেয়ার প্রয়োজন নেই। রিজভী বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে অন্যায় ও অবৈধভাবে মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে হয়রানি তো আছেই। তারপরও নারায়ণগঞ্জের ভোটারদের দাবিতে উনি সেখানে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ করতে যেতে পারতেন। এটা বুঝতে পেরে নির্বাচন কমিশন পরিপত্র জারি করেছে বলে আমাদের বিশ্বাস। নির্বাচন কমিশনের পরিপত্রে বহিরাগত শব্দটি ‘আনপার্লামেন্টারিয়ান’, অশোভন ও অরাজনৈতিক। বিএনপির মুখপাত্র বলেন, বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের বিধিনিষেধের কারণে এ নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগে অংশ নিতে পারলেন না বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। অথচ খালেদা জিয়ার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় যাওয়ার কর্মসূচী থাকায় কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিএনপি নেতারা সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। কোথা থেকে শুরু করে কোন কোন এলাকায় গণসংযোগ চালাবেন সেই ম্যাপও প্রস্তুত ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বহিরাগতদের প্রচারণার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেয়ার কারণে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেয়া সম্ভব হলো না। রিজভী বলেন, গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত তিন শতাধিক সন্ত্রাসী নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকা চষে বেড়াচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের জ্ঞাতসারেই অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতমূলক আচরণ সুস্পষ্ট হয়ে ওঠায় নাসিক নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলীয় ভোটাররা আশ্বস্ত হতে পারছে না। রুহুল কবির রিজভী বলেন, নারায়ণগঞ্জে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ হলে সাধারণ ভোটাররা দলবেঁধে নির্বাচন কেন্দ্রে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এমনকি আমরা নিশ্চিত সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ বিরাজমান হলে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন। বিএনপির পক্ষ থেকে আমি নাসিক নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, ভয়ভীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ এবং সকল ধরনের ভীতি ও শঙ্কা দূর করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। রিজভী বলেন, আমরা বরাবরই বলছি নারায়ণগঞ্জ হলো সন্ত্রাসীদের লীলাভূমি। সেখানে অস্ত্রবাজরা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াতে বা যেকোন সময় যেকোন অপরাধমূলক কর্মকা- চালাতে দ্বিধা বোধ করে না। লোমহর্ষক ৭ খুন হত্যা, ত্বকি হত্যাসহ অসংখ্য খুনখারাবির ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দারা সর্বদা আতঙ্কের মাঝে বসবাস করে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন সেখানে একটা চাপা আতঙ্কের পরিবেশ জনমনে ভীতি সঞ্চার করে রেখেছে। এ জন্যই আমরা নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে ভোটারদের জন্য কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে বলছি। আমরা জানি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপ, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ প্রমুখ।
×