ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভিসা ট্রেডিং বন্ধের অনুরোধ করা হয়েছে

সৌদি ভিসা সংগ্রহ করে চড়া দামে বিক্রি, দালালচক্র সক্রিয়

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২১ ডিসেম্বর ২০১৬

সৌদি ভিসা সংগ্রহ করে চড়া দামে বিক্রি, দালালচক্র সক্রিয়

ফিরোজ মান্না ॥ সৌদি আরবে বাংলাদেশী দালাল চক্রের কারণে অভিবাসন ব্যয় কমছে না। দালাল চক্র দেশটির বিভিন্ন কোম্পানি থেকে ভিসা সংগ্রহ করে বাংলাদেশে জনশক্তি রফতানিকারকদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করছে। জনশক্তি রফতানিকারকরা ওই ভিসার বিপরীতে কর্মীদের কাছ থেকে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা করে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী স্বীকার করে বলেন, ‘ভিসা ট্রেডিং’ বন্ধ করার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে বলে জানিয়েছে। বেশি টাকা নেয়ার অভিযোগ থাকলেও মন্ত্রণালয় থেকে কর্মী পাঠানোর অনুমতি নিতে সরকার নির্ধারিত ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকার কথাই উল্লেখ করছে জনশক্তি রফতানিকারকরা। ফলে কোন জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সৌদি আরবে জনশক্তি রফতানির পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখা হলেও কর্মীদের কাছ থেকে বেশি টাকার বিষয়টি তারাও জানেন। মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি কর্মীদের কাছ থেকে বেশি টাকা নিচ্ছে কিনা বা এক চাকরির কথা বলে অন্য চাকরিতে দিচ্ছে কিনা এসব বিষয়গুলো ভালভাবে মনিটর করে যাচ্ছে। এর মধ্যেই কর্মীদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা বেশি টাকা নিচ্ছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে তার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযোগবিহীন জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানই সৌদিতে কর্মী নিয়োগের সুযোগ পাবে। তারা মন্ত্রণালয় নির্ধারিত খরচের বাইরে বেশি টাকা নিতে পারবে না। যদি কোন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বেশি টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠে, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাতিল হবে জনশক্তি রফতানির লাইসেন্স। সৌদি বাজার উম্মুক্ত হওয়ার সময় উভয় দেশ ভিসা কেনা বেচার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তখন সৌদি কর্তৃপক্ষ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে আশ্বস্ত করেছিল যারা ভিসা কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ১৫ বছরের কারাদ-ের বিধান রেখে আইন করবে। কিন্তু সেই আইন না হওয়ায় ভিসা কেনাবেচা প্রকাশ্যেই হচ্ছে। এ জন্য কর্মীদের সরকার নির্ধারিত খরচের বাইরে কয়েক গুণ বেশি টাকা দিয়ে যেতে হচ্ছে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, সৌদি আরবে কর্মী নিয়োগে সরকার-নির্ধারিত খরচের চেয়ে বেশি টাকা নিলে, সেই প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। শুধু লাইসেন্স বাতিলই করা হবে না, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া হবে। দীর্ঘ ছয় বছর পর সম্প্রতি সৌদি আরব সব খাতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার উন্মুক্ত করেছে। কোন প্রকার অনিয়মের কারণে বাজার নষ্ট করতে দেয়া হবে না। সরকার যে টাকা নির্ধারণ করেছে, তা যৌক্তিক। সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি টাকা নিলে মন্ত্রণালয় চুপ করে বসে থাকবে না। প্রয়োজনে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। আর পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণে মন্ত্রণালয়ের কমিটি কাজ করছে। কি করে আরও বেশি লোকের কর্মসংস্থান হয়, সেটি খেয়াল রাখছে মন্ত্রণালয়। অভিযোগবিহীন জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানই সৌদিতে কর্মী নিয়োগে কাজ করবে। জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সাড়ে ১২শ’। এখান থেকে ৫শ’র মতো প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নিয়ে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্ত লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান সৌদি আরবে কর্মী পাঠাতে যোগ্য হবে না। কর্মী নিয়োগ স্বচ্ছ করা হবে। এ নিয়ে কেউ যেন প্রশ্ন না তুলতে পারে। সৌদিবাজার খোলার পর গত কয়েক মাসে এক লাখ ২০ হাজার কর্মী নিয়োগ পেয়েছে। কারও কারণে বাজারটি আবার বন্ধ হোক এটা মেনে নেয়া হবে না। সৌদিতে ভিসা কেনাবেচার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করার কাজ করা হচ্ছে। তাদের একটি তালিকা সৌদি কর্তৃপক্ষের হাতে দেয়া হবে। এ বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, সৌদিতে দীর্ঘদিন বসবাসকারী বাংলাদেশী নাগরিকরা এই ভিসা কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত বলে আমরা জেনেছি। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের গঠন করা কমিটি কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। জনশক্তি রফতানির বিষয়টি নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বিএমইটির মহাপরিচালক সেলিম রেজা এর আগে বলেছিলেন, সৌদি আরব বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য সব খাত উন্মুক্ত করেছে। এরপর সব পক্ষ মিলে সরকার সৌদি আরবে কর্মী পাঠানোর খরচ নির্ধারণ করে দিয়েছে। ওই বৈঠকে বায়রাকে সৌদি আরবে কর্মী পাঠানোর একটি বাস্তবসম্মত খরচ নির্ধারণ করতে বলা হয়েছিল। পরে বায়রার কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে সব মিলিয়ে জনপ্রতি ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা খরচ নির্ধারণের প্রস্তাব দেয় মন্ত্রণালয়কে। মন্ত্রণালয় এই প্রস্তাব যাচাই-বাছাই শেষে খরচ নির্ধারণ করেছে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। কেউ এই টাকার বেশি নিলে বা দাবি করলে দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আগ্রহী কর্মীদের প্রতিও এর বেশি টাকা না দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব। বাজারটি ছয় বছর বন্ধ রাখার পর ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে সৌদি আরব। তবে গত দেড় বছর নারী গৃহকর্মীদের পাশাপাশি শুধু গৃহখাতের কর্মী নিয়োগ করেছে দেশটি। এ বছরের ১১ আগস্ট সব ধরনের কর্মী নিয়োগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয় দেশটির শ্রম ও সমাজ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়। এরপর সৌদি আরব থেকে পুরুষ কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্রও আসতে শুরু হয়েছে। আগস্ট থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ২০ হাজার কর্মী নিয়োগ পেয়েছে দেশটিতে।
×