ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পুলিশের লাঠিচার্জ ॥ আহত ২০

মন্ত্রীদের আশ্বাসের পরও শ্রমিক অসন্তোষ চলছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২১ ডিসেম্বর ২০১৬

মন্ত্রীদের আশ্বাসের পরও শ্রমিক অসন্তোষ চলছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, সাভার, ২০ ডিসেম্বর ॥ ন্যূনতম মজুরি ১৫ হাজার টাকা ধার্যসহ ১৬ দফা দাবি আদায়ে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষ অব্যাহত রয়েছে। মন্ত্রী-পুলিশ-জনপ্রতিনিধিদের আশ^াসের পরও কাজে যোগ দেয়নি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। মঙ্গলবারও দাবি আদায়ে বিক্ষোভ করেছে অর্ধশত তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের কাজে ফেরাতে আশুলিয়া গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের উদ্যোগে শ্রমিক নেতারা আশুলিয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনসহ শিল্প এলাকায় মাইকিং করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে আশুলিয়া গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক সরোয়ার হোসেন আন্দোলনরত শ্রমিকদের বিক্ষিপ্তভাবে কারখানা থেকে বের হয়ে কাজ বন্ধ রেখে পোশাক শিল্পের সুনাম নষ্ট না করার জন্য অনুরোধ জানান। এছাড়াও তিনি চলমান শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় যদি কারও ইন্ধন থাকে তা খুঁজে বের করে প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান। আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত শ্রমিক সংগঠনগুলো হলো- বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগ, জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস এ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কাস, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন ও স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন। এর আগে সকালে শিল্পাঞ্চলের জামগড়া, বাইপাইল ও নরসিংহপুর এলাকার অর্ধশত পোশাক কারখানার লক্ষাধিক শ্রমিক কারখানায় প্রবেশ করে টানা অষ্টম দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করে। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল মহাসড়কের ঘোষবাগ, নরসিংহপুর, বেরণ, সরকার মার্কেট, ছয়তলা, জামগড়া, ইউনিক ও বাইপাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেয়। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে কর্তব্যরত পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জসহ টিয়ারশেল ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে শ্রমিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এদিন সকালে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলামের মালিকানাধীন ‘দি রোজ ড্রেসেস লিমিটেড’, সালাম মুর্শেদীর মালিকানাধীন ‘এনভয় গ্রুপ’ ও একে আজাদের মালিকানাধীন ‘হা-মীম গ্রুপ’-এর শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করে হাজিরা কার্ড জমা দিয়ে কর্মবিরতি শুরু করে। এরপর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এসব কারখানার শ্রমিকরা একযোগে কারখানা থেকে বের হয়ে এসে আশপাশের অন্যান্য কারখানা লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে নিরাপত্তার কারণে তাদেরও ছেড়ে দেয় ওই সকল কারখানা কর্তৃপক্ষ। ওই সকল কারখানার শ্রমিকরাও বাইরে এসে কয়েকটি অংশে বিভক্ত হয়ে আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল মহাসড়কে অবস্থান নেয়। এ সময় ওই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক ধরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মহাসড়কে অবস্থানের পরই পুলিশ মারমুখী ভূমিকা নেয়। এতে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সকাল ১০টার দিকে পুলিশ বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ করে ও টিয়ারশেল ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুুলিশের লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসে শ্রমিক ও পথচারীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়। কাজে ফেরাতে শ্রমিক নেতাদের মাইকিং ॥ শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টায় আশুলিয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন শেষে বুধবার থেকে শ্রমিকদের কাজে যোগদানের আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করা হয়। এছাড়া শ্রমিক অসন্তোষের জের ধরে আশুলিয়া থানা ও শিল্প এলাকায় আগামী তিন বছরের জন্য সব ধরনের বাসা ভাড়া বৃদ্ধি না করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন, বাড়িওয়ালা, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ সুশীল সমাজ। বেশ কিছুদিন ধরে দফায় দফায় অযৌক্তিক বাসা ভাড়া বৃদ্ধি বন্ধের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি করে আসছিল পোশাক শ্রমিকরা। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ির মালিকদের প্রতি আগামী তিন বছরের জন্য ভাড়া না বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়ে মাইকিং করা হয়। আশুলিয়া থানার ওসি মহসিনুল কাদির জানান, শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া শ্রমিকদের আবাসন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ সুশীল সমাজ ঐক্যে পৌঁছছে। আশুলিয়ায় দফায় দফায় বাসা ভাড়া বৃদ্ধি ঠেকাতে পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করে বাসা ভাড়া বৃদ্ধি তিন বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাসা ভাড়া স্থির থাকলে শ্রমিকরা স্বস্তিতে কাজ করতে পারবে।
×