ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারসুদির প্রতিশ্রুতি

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকবে ইন্দোনেশিয়া

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২১ ডিসেম্বর ২০১৬

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকবে ইন্দোনেশিয়া

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকবে ইন্দোনেশিয়া। সীমান্তে রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি উন্নয়নে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখবে বলেও জানিয়েছে দেশটি। মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে এক বৈঠকে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো এলপি মারসুদি এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। এছাড়া মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা সমস্যাসহ বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে সোমবার রাতে ঢাকায় আসেন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো এলপি মারসুদি। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাশার বিমানঘাঁটিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে এক বৈঠকে অংশ নেন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো এলপি মারসুদি। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়টি তুলে ধরেন। একই সঙ্গে মিয়ানমার সীমান্তে নতুন করে সঙ্কটের পর বাংলাদেশে অব্যাহতভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রবেশের বিষয়টিও অবহিত করা হয়। এ সময় রেতনো এলপি মারসুদি জানান, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ইন্দোনেশিয়া আন্তরিক। তারা সব সময় এ ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকবে। এছাড়া সীমান্তে রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি উন্নয়নে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখবে বলেও জানান। ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াঙ্গুনে আসিয়ান দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের বৈঠকের বিষয়টিও তুলে ধরেন। বাশার বিমানঘাঁটিতে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে হেলিকপ্টারযোগে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো এলপি মারসুদি কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান। কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গেও কথা বলেন রেতনো এলপি মারসুদি। সেখান থেকে বিকেলে ফিরে আসেন ঢাকায়। সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মঙ্গলবার রাতেই জাকার্তার উদ্দেশে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা সমস্যাসহ বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে সোমাবার ঢাকা আসেন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো এলপি মারসুদি। তিনি মিয়ানমার হয়ে ঢাকা আসেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর আউং সান সুচি সোমবার রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনার জন্য ইয়াঙ্গুনে এক বৈঠক ডাকেন। ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওই বৈঠকে অংশগ্রহণ শেষে বাংলাদেশে আসেন। সোমবার মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সংগঠন আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এ সময় এ ধরনের বৈঠক আয়োজনে সম্মত ছিল না আউং সান সুচির নেতৃত্বাধীন মিয়ানমার। তবে প্রতিবেশী দেশ মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার প্রবল চাপের মুখে এ বৈঠক আয়োজনে বাধ্য হয় তারা। ইয়াঙ্গুনে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আরও সময় চেয়েছেন মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচি। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি একটি জটিল বিষয় এবং এর নিষ্পত্তি করার জন্য তার সরকার যা করছে তার সুফল পেতে সময় লাগবে। তিনি আরও বলেছেন, রাখাইন প্রদেশে ত্রাণকর্মীদের ঢুকতে দেয়া হবে, কিন্তু তারা সব জায়গায় যেতে পারবে না। ইন্দোনেশিয়ার অন্যতম শীর্ষ দৈনিক জাকার্তা পোস্টের অনলাইন সংস্করণে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আলোচনা করতে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরের খবর দেয়া হয়েছে। এ সফরে তিনি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলমানদের সমস্যা সমাধানের উপায় খোঁজার চেষ্টা করবেন বলে খবরে বলা হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠক ডাকে মিয়ানমার। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর অভিযানে গত দুই মাসে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে ওই অঞ্চল থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছে, যাদের অধিকাংশাই বাংলাদেশে ঢুকেছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা অভিযোগ করেছে, সেনারা তাদের স্বজনদের হত্যা করার পাশাপাশি নারী ও শিশুদের ধর্ষণ করছে, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেশী দেশগুলো কূটনৈতিক চাপে ফেলেছে মিয়ানমারকে। বিশেষ করে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার চাপের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বৈঠক ডাকেন সুচি।
×