ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কী ঘটবে এদের ভাগ্যে-

৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে ১২০টি ট্যানারি সাভারে যাচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২১ ডিসেম্বর ২০১৬

৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে ১২০টি ট্যানারি সাভারে যাচ্ছে না

এম শাহজাহান ॥ সরকারের চূড়ান্ত নির্দেশনা থাকলেও আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে কারখানা সরাতে পারছে না ১২০টি ট্যানারি। রাজধানীর হাজারীবাগে অবস্থিত এসব ট্যানারির ভ্যাগ্যে কি আছে সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে চারদিকে। কারখানা সরানোর সময় কি তাহলে আবারও বাড়ানো হচ্ছে? সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোর্টের নির্দেশ থাকায় ট্যানারি মালিকদের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর আর কোন সুযোগ নেই। একই সঙ্গে পরিবেশ দূষণের দায়ে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কোর্টের নির্দেশও বহাল থাকবে। তাই নির্দিষ্ট সময়ের পর ওয়েট ব্লু চামড়া প্রস্তুত করছে, এমন সব কারখানা বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে ফেলার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। তবে শীর্ষ ৩৪টি ট্যানারি ইতোমধ্যে সাভারে কারখানা সরাতে সক্ষম হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, কারখানা না সরানোয় চারটি মডিউল চালু করতে পারছে না বাংলাদেশ ট্যানারি ইনফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্রজেক্ট (বিটিআইটিপি)। সাভারে ওয়েট ব্লু চামড়া উৎপাদন করছে এ রকম ৩৪টি ট্যানারিতে মাত্র ৩ হাজার কিউরিক লিটার বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। দুটি মডিউল চালু করতে হলে আর ৪০টি কারখানা এই মুহূর্তে সাভারে স্থানান্তর করা প্রয়োজন। শুধু বর্জ্যরে অভাবে মডিউলগুলো চালু হতে পারছে না। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাভার চামড়া শিল্পনগরীর প্রজেক্ট ডিরেক্টর মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম জনকণ্ঠকে বলেন, কারখানাগুলো না সরায় শুধু বর্জ্যরে অভাবে মডিউলগুলো চালানো যাচ্ছে না। আগামী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ট্যানারি সরানোর চূড়ান্ত আল্টিমেটাম রয়েছে, অথচ এখন পর্যন্ত স্থানান্তরিত হয়েছে মাত্র ৩৪টি কারখানা। তবে কোনভাবেই ওই সময়ের পর আর হাজারীবাগে কারখানা চালানোর সুযোগ নেই। হয় এগুলো বন্ধ করে দিতে হবে অথবা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে পরবর্তী করুনীয় নির্ধারণ করতে হবে। এদিকে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- নতুন শিল্পনগরীতে ট্যানারি শিল্প পুরোদমে চালু করতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে অবকাঠামো খরচ বাবদ ব্যয় হবে ৩ হাজার কোটি এবং বাকি ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হবে শুধু মেশিনারিজ যন্ত্রপাতি ক্রয়ে। সহজ শর্তে গ্রীন ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে এই তহবিল গঠন করার তাগিদ দিয়েছেন ট্যানারি মালিকরা। এ খাতের পরিবেশ বিষয়ক সমস্যা সমাধানে সরকারী-বেসরকারী যৌথভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। যদিও ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যেই ১৫৪টি ট্যানারি শিল্পনগরীতে স্থানান্তরের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। সম্প্রতি রাজধানীতে বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (বিপিসি) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) যৌথ উদ্যোগে ‘পরিকল্পিত ও পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্প এবং টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক’ একটি সেমিনারে চামড়া শিল্প উন্নয়নে ঘোষিত রোডম্যাপ দ্রুত প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের উপর জোর দেয়া হয়। ইতোপূর্বে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ইপিবির যৌথ উদ্যোগেও রোডম্যাপ প্রণয়নে কয়েকটি বৈঠক করা হয়েছে। শীঘ্রই চামড়া শিল্প উন্নয়নে এই রোডম্যাপ ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, পরিবেশ দূষণের দায়ে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ইতোমধ্যে হাইকোর্ট ১৫৪টি ট্যানারিকে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করে। পরবর্তীতে এই টাকা কমিয়ে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে লিভ টু আপীলের নিষ্পত্তি করেছে আদালত। ট্যানারি মালিকরা কোন কিছু গায়ে মাখে না ॥ সরকারের পক্ষ থেকে ইতোপূর্বে গত ১০ এপ্রিলের মধ্যে হাজারীবাগ থেকে কারখানা সরানোর আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছিল। সেটাও বাস্তবায়ন হয়নি। হাজারীবাগে পুলিশ বসিয়েও চামড়া ঢুকানো বন্ধ করা যায়নি। কোন কিছু গায়ে মাখে না ট্যানারি মালিকরা। এদিকে চামড়া শিল্প সাভারে স্থানান্তরে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। দ্রুত ট্যানারি সরাতে মালিকদের হুঁশিয়ার করেছেন। কয়েক দফা তিনি আল্টিমেটামও দিয়েছেন। কিন্তু উদ্যোক্তারা এটাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি।
×