ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ওসির প্রত্যাহার দাবি

কলেজছাত্র গৌতম হত্যার প্রতিবাদে সাতক্ষীরা শহর উত্তাল

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২১ ডিসেম্বর ২০১৬

কলেজছাত্র গৌতম হত্যার প্রতিবাদে সাতক্ষীরা শহর উত্তাল

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ মেধাবী কলেজছাত্র গৌতম সরকার হত্যার প্রতিবাদ এবং ঘাতকদের গ্রেফতার দাবিতে সাতক্ষীরা এখন উত্তাল। মঙ্গলবার সাতক্ষীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ আর সড়ক অবরোধ করেছে হাজার হাজার গ্রামবাসী। পুলিশের হাতে আটক জামায়াত পরিবারের ঘরজামাই জামসেদের পক্ষে সুপারিশ না করায় ইউপি সদস্য গণেশ সরকারের পুত্র গৌতমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তাদের অভিযোগ। বক্তারা সদর থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ওসিসহ সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার দাবি করেছেন। সমাবেশ ও মানববন্ধনে গ্রামবাসীর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতাীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সমাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করে সরকারের উচ্চমহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবিতে ১৩ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মহাদেবনগর গ্রামের ইউপি সদস্য গণেশ সরকারের ছেলে কলেজছাত্র গৌতম সরকারকে অপহরণ করা হয়। আটক কয়েক জনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বেরিয়ে আসে গৌতম হত্যার লোমহর্ষক চিত্র। অপহরণকারীরা গৌতম সরকারকে অপহরণ করে হাত পা বেঁধে মুখের মধ্যে তামাক (গুল) ঢুকয়ে মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেয়। এর পর তাকে পুকুরের পানিতে ফেলে হত্যা করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তারা গৌতমের শরীরে ১৬ ইট বেঁধে তাকে পুকুরে ডুবিয়ে দেয়। অপহরণের পাঁচদিন পর গত শনিবার সকালে বাড়ির পাশে একটি পুকুর থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত গৌতম সরকার মাহমুদপুর সীমান্ত আদর্শ কলেজের ডিগ্রী তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। এ ঘটনায় পুলিশ এ পর্যন্ত পাঁচজনকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলোÑ সাজু, নাজমুল হাসান, শাহাদাত, মহসিন ও শাওন। জামসেদকে আটকের দাবি উঠলেও সে এখনও রয়েছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলার ঘোনা ইউনিয়নবাসীর পক্ষে হাজার হাজার নারী-পুরুষ হেঁটে, ইঞ্জিনভ্যানে চড়ে এসে সমবেত হয় শহরের শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে। জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্যপরিষদ ও সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত হয় দীর্ঘ মানববন্ধন। জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্যপরিষদের সভাপতি বিশ্বনাথ ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্ত্যব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, জেলা জজ কোর্টের পিপি এ্যাডভোকেট ওসমান গণি, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকাত হোসেন, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সাঈদ, বিশ্বজিৎ সাধু, স্বপন কুমার শীল, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাসানুজ্জামান, মানবাধিকার কর্মী মাধব দত্ত ও নিহত গৌতম সরকারের বাবা গণেশ সরকার প্রমুখ। বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, গৌতম হত্যার কয়েকদিন আগে সদর থানা পুলিশের হাতে আটক হয় জামায়াত নেতার ঘরজামাই জামসেদ। থানা থেকে মুক্তি পেতে জামসেদ নিহত গৌতমের বাবা ইউপি সদস্য গণেশ সরকারের সহযোগিতা চাইলেও গণেশ সহযোগিতা করতে অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে জামসেদ পুলিশকে ম্যানেজ করে থানা থেকে ছাড়া পেয়ে গণেশ সরকারকে শায়েস্তা করার হুমকি দেয়। এর পরই গণেশ সরকারের পুত্র গৌতমকে অপহরণ করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, অথচ পুলিশ এখনও জামসেদকে আটক করেনি। বরং তাকে বাঁচানোর জন্য হত্যার মোটিভ ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করছে। বক্তারা সদর থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর কবিরের প্রত্যাহার দাবি করেন। এছাড়া সদর থানার ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্লা ও দুই এসআই আবুল কালাম ও আসাদুজ্জামানকে হত্যা মামলায় বাণিজ্য না করে সরে আসার দাবি জানান। বক্তারা মামলার বাদী নিহত গৌতমের বাবা গণেশ সরকার ও তার পরিবারের নিরাপত্তার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়। গৌতম হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে মঙ্গলবার সাতক্ষীরা শহরে দুই দফা সড়ক অবরোধ করা হয়। বেলা ১১টায় মানববন্ধন চলাকালে প্রেসক্লাবের সামনে সাতক্ষীরার আশাশুনি সড়ক ও দুপুর ১২টায় নিউমার্কেট মোড়ে সাতক্ষীরা কালীগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে সমাবেশ করেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। সমাবেশে এলাকার কলেজের শিক্ষার্থীসহ নারী, পুরুষেরা অংশ নেয়। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ব্যানার, ফেস্টুন আর প্লাকার্ড নিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে।
×