ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জেলা পরিষদ নির্বাচন

চেয়ারম্যান প্রতিদ্বন্দ্বী বেশিরভাগ উচ্চ শিক্ষিত

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২১ ডিসেম্বর ২০১৬

চেয়ারম্যান প্রতিদ্বন্দ্বী বেশিরভাগ উচ্চ শিক্ষিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বেশিরভাগই উচ্চ শিক্ষিত। এদের সবার শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক থেকে স্নাতকোত্তর। মাত্র ২২ প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তার কম। তবে পেশার ক্ষেত্রে প্রার্থীদের মধ্যে ব্যবসায়ীর আধিক্য রয়েছে। এর পরেই রয়েছে পেশায় আইনজীবী। প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও অনেক কম। মাত্র ১৫ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। ৩০২ ধারায় মামলা রয়েছে মাত্র ২ জনের বিরুদ্ধে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে সুজন এ তথ্য দিয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপনের জন্য এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার দাবি জানিয়ে আগামীতে এ নির্বাচন সরাসরি জনগণের ভোটে আয়োজনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রদত্ত চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী তাদের দেয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তবে ৬১ জেলা পরিষদের ১৪৯ প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ওয়েসবসাইটের দেয়া ১৪৬ জনের তথ্য উপস্থাপন কর হয়। তারা বলেন, এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, সদস্য ও সাধারণ সদস্য এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে মোট ৩ হাজার ৯৬৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ নির্বাচনে মোট চেয়ারম্যান প্রার্থী সংখ্যা ১৪৯ জন হলেও, লালমনিরহাট জেলার ৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর তথ্য ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়নি। ফলে ১৪৬ জন প্রার্থীর তথ্যের বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে দেখা গেছে, ১০২ (৬৯.৮৬) জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক বা স্নাতকোত্তর। এসএসসি বা তার কম শিক্ষাগত যোগ্যতা ২২ জনের। পেশার ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, মোট ১৪৬ জন প্রার্থীর মধ্যে সর্বোচ্চ ৮৩ (৫৬.৮৪) জন প্রার্থীর পেশা ব্যবসা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৩ (১৫.৭৫) জনের পেশা আইনজীবী। অন্যান্য নির্বাচনের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনেও ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়েছে ১৪৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৫ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। ৩৬ জনের বিরুদ্ধে অতীতে মামলা ছিল। ৮ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা রয়েছে অতীতেও মামলা ছিল। এর মধ্যে ৩০২ ধারায় ২ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা রয়েছে। এ ধারায় ৩ জনের বিরুদ্ধে অতীতে মামলা ছিল। মোট ১৪৬ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর অধিকাংশই (৭৬ জন বা ৫২.০৫) বছরে ৫ লক্ষ টাকার নিচে আয় করেন। বছরে কোটি টাকার বেশি আয় করেন মাত্র ৬ জন প্রার্থী (৪.১০)। ৪৪ জনের (৩০.১৩) সম্পদ ৫ লাখ টাকার নিচে। কোটির টাকার অধিক সম্পদের মালিক রয়েছেন ২১ জন (১৪.৩৮)। প্রার্থীদের মধ্যে মাত্র ১৪ জন ঋণ গ্রহীতা এবং মাত্র ৫০ (৩৪.২৪) জনের আয়কর প্রদানের তথ্য পাওয়া গেছে। সংবাদ সম্মেলনে সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, এ নির্বাচনে ইতোমধ্যেই ২২টি জেলায় চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, যা হতাশাজনক। নির্বাচনের সাধারণ জনগণের ভোট প্রদানের সুযোগ নেই। স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই ভোট প্রদান করবেন। কিন্তু সুজনের পক্ষ থেকে বরাবরই এ নির্বাচন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে আয়োজনের দাবি জানানো হয়েছে। আগামীতে এ দাবি অব্যাহত থাকবে। সংগঠনের সহসম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, জনগণের ভোটে সরাসরি নির্বাচিত না হওয়ায় এ নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যানসহ অন্য প্রার্থীদের জনগণের কাছে কোন দায়বদ্ধতা থাকবে না। স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা নির্বাচিত হওয়ায় নির্বাচনে কোন উত্তাপ নেই। তিনি বলেন, জেলা একটি প্রশাসনিক ইউনিট। অথচ তার ক্ষমতাকে আমরা খাটো করে রাখা হয়েছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকার ক্ষমতাকে কেন্দ্রীভূত দেখতে চায়, অথচ এটি আমাদের শাসন পদ্ধতির অন্যতম দুর্বলতা। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সাধারণত দেশে বিভিন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে ধরনের উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়, সে ধরনের উৎসাহ উদ্দীপনা না থাকলেও নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হোক এটাই সবাই কামনা করে। নির্বাচন কমিশনসহ নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল, নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থী ও সমর্থকরা স্ব স্ব অবস্থানে থেকে যথাযথ ভূমিকা পালনের মধ্য দিয়ে জেলা পরিষদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করবেন। একই সঙ্গে পরবর্তী মেয়াদের নির্বাচনের পূর্বেই কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এতে জনগণের সরাসরি ভোটে জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানানো হয়েছে।
×