ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সন্দেহভাজন পাকি নাগরিক গ্রেফতার

সন্ত্রাসী হামলায় রক্তাক্ত বার্লিন, নিহত ১২

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২১ ডিসেম্বর ২০১৬

সন্ত্রাসী হামলায় রক্তাক্ত বার্লিন, নিহত ১২

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ জঙ্গী হামলায় রক্তাক্ত হলো জার্মানীর বার্লিন। সোমবার স্থানীয় সময় রাত ৮টার দিকে শহরটির জনপ্রিয় ক্রিসমাস মার্কেটে ইস্পাত বোঝাই একটি লরি চালিয়ে দিলে অন্তত ১২ জন নিহত ও ৪৮ জন আহত হয়। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনার সময় মার্কেটটি ক্রেতা ও পর্যটকে ঠাঁসা ছিল। জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মেরকেল এই ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা বলে জানিয়েছেন। মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, এই ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির মুখোমুখি করা হবে। এই ঘটনায় জামার্নি জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এই হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এক পাক নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। খবর বিবিসি, এএফপি ও আলজাজিরা অনলাইনের। খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় সোমবার রাত ৮টার দিকে মার্কেটির ক্রেতারা যখন কেনাকাটায় ব্যস্ত তখন লরিটি ঢুকে পরে। এ সময় কাঠের দোকানগুলো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। আর মার্কেটে আগত কয়েকজনকে লরিটি পিষে ফেলে। ঘটনার পর পরই পোল্যান্ডে নিবন্ধনকৃত লরিটি আটক করা হয়। এই লরিতে পোলিস বংশোদ্ভূত একজনের মৃতদেহ পাওয়া যায়। জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মেরকেল এই ঘটনার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, এটি একটি সন্ত্রাসী হামলা। মনে হচ্ছে আমাদের দেশে আশ্রয় প্রার্থী কোন শরণার্থী এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। তবে যেই জড়িত থাকুন না কেন তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তবে যতদূর বোঝা যাচ্ছে এটি একটি সন্ত্রাসী হামলা। হামলার পর ক্রিসমাস মার্কেটি বন্ধ করে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন জামার্নির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মঙ্গলবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, আমরা এই ঘটনার জন্য জনপ্রিয় একটি জায়গাকে বন্ধ রাখতে পারি না। এই হামলার পেছনে প্রথমে একজন পাক নাগরিকের জড়িত থাকার কথা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। তবে জার্মান পুলিশ প্রধান ক্লাউস ক্যান্ড মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এই হামলার পেছনে যে পাকিস্তানী নাগরিক জড়িত তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আমাদের হাতে প্রাপ্ত তথ্য খুবই অপ্রতুল। তবে তাকে আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই ঘটনা ইসলামী জঙ্গীদের কাজ বলে সমালোচনা করেছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার এক টুইটার বার্তায় ট্রাম্প বলেন, আজ তিন জায়গায় জঙ্গী হামলা হয়েছে। তুরস্ক, সুইজারল্যান্ড ও জামার্নিতে। পরিস্থিতি আস্তে আস্তে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। ফরাসী প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ বলেছেন, জামার্নিতে হামলার পর ফ্রান্সে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছ। হামলার পরই পুলিশ বার্লিন বিমানবন্দরের কাছে একটি শরণার্থী শিবিরে তল্লাশি চালিয়েছে। লরির চালক ওই ক্যাম্পে অবস্থান করছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে আসা ভিডিওতে দেখা যায়, দোকানপাট ভেঙ্গে জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, তার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে একটি কালো রঙের আর্টিকুলেটেড লরি, যার উইন্ড শিল্ড ফেটে চৌচির। বিরাট ওই বাহনের একপাশের চাকার নিচে আটকে আছে একটি তোবড়ানো ক্রিসমাস ট্রি। এমা রাশটন নামে এক পর্যটক সিএনএনকে বলেছেন, প্রথমে তারা বিকট শব্দ শুনতে পান। তারপর একটি লরিকে দোকান ভেঙ্গে মানুষের ওপর দিয়ে ছুটে আসতে দেখেন। সে সময় ট্রাকটির গতি ঘণ্টায় অন্তত ৬৫ কিলোমিটার ছিল বলে তার মনে হয়েছে। মাইক ফক্স নামের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মাত্র তিন মিটার সামনে দিয়ে ট্রাকটিকে ছিটকে বেরিয়ে যেতে দেখেন তিনি। ‘এটা পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে, কোন সন্দেহ নেই। গত জুলাইয়ে ফ্রান্সের নিস শহরে একটি উৎসবের ভিড়ে ট্রাক চালিয়ে দিয়ে ৮৬ জনকে হত্যা করা হয়। পরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন হামলাকারী ট্রাকচালক। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গীগোষ্ঠী আইএস ওই হামলার দায় স্বীকার করে। ওই ঘটনার ছয় মাসের মাথায় ক্রিসমাসের উৎসবের মৌসুমে বার্লিনে সোমবার একই ধরনের হামলায় দেশটি শোক নেমে এসছে।
×