ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নাসিক নির্বাচন নিয়ে তাৎক্ষণিক জরিপ

আইভী ৬১, সাখাওয়াত ৩৮ ভাগ ভোট পাবেন

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২১ ডিসেম্বর ২০১৬

আইভী ৬১, সাখাওয়াত ৩৮ ভাগ ভোট পাবেন

আরাফাত মুন্না/মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ রাত পোহালেই ভোট অনুষ্ঠিত হবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের। ভোটের আগে সোম ও মঙ্গলবার জনকণ্ঠের পক্ষ থেকে কথা বলা হয় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার ১০০ জন ভোটারের সঙ্গে। মেয়র পদে তাদের পছন্দ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় এসব ভোটারের কাছে। এর মধ্যে ৬১ জন বলেছেন তারা আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভীকে ভোট দেবেন, আর বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন ৩৮ জন। বাকি এক জন বলেছেন এই দুই প্রার্থীর কাউকেই তিনি ভোট দেবেন না। জনকণ্ঠের পক্ষ থেকে যে ১০০ জন ভোটারের সঙ্গে কথা বলা হয় তাদের মধ্যে দিন মজুর, ব্যবসায়ী, বেসরকারী চাকরিজীবী, আইনজীবী, সাংবাদিক, গৃহিণী ও ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ছিল। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকার হাজীগঞ্জ গুদারাঘাট, নারায়ণগঞ্জ স্টেশন রোডের ঐতিহ্যবাহী মাউরা হোটেলখ্যাত রয়েল রেস্টুরেন্ট, দুই নম্বর গেটের নিউ বোস কেবিন এলাকা, বন্দর লঞ্চ ঘাট, চাষাঢ়া মোড়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, সিদ্ধরগঞ্জ থানার পুল এলাকায় এসব ভোটারের সঙ্গে কথা বলা হয়। এদের মধ্যে দিনমজুর ২২ জন, ছোট বড় ব্যবসায়ী ৩২ জন, বেসরকারী চাকরিজীবী ১২ জন, গৃহিণী ১৪ জন, ছাত্র ৮ জন, আইনজীবী ৬ জন, ৩ জন স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক এবং বাকি তিন জন এখন অবসর জীবন যাপন করছেন। যে ৬১ জন আইভীকে ভোট দেবে বলে জানিয়েছে এদের মধ্যে শুধুমাত্র নৌকা মার্কার কারণে ভোট দেবে ২২ জন। অন্যরা কেউ গত মেয়াদে আইভীর উন্নয়ন, জনগণের সঙ্গে তার যোগাযোগ এবং নারায়ণগঞ্জ শহরের উন্নয়নে তার বাবা আলী আহমদ চুনকা’র অবদানের কথা জানিয়েছেন। সাখাওয়াতকে যে ৩৮ জন ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন তারা সবাই বিএনপির সমর্থক এবং এ কারণেই তাকে ভোট দেয়ার কথা জানান। বাকি এক জন জানান, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কোন প্রার্থীকেই তিনি ভোট দেবেন না। এই দুই দলের বাইরে কাউকে ভোট দিতে চান তিনি। মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তুলারাম কলেজের ¯œাতক শ্রেণীর চার ছাত্রের সঙ্গে কথা হয়। এরা হলেন, তুষার, ইব্রাহিম, আব্দুল্লাহ, রাফিদ। এই চার জনই প্রথমবারের মতো ভোট দিচ্ছেন। সবাই ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার। সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে কাকে ভোট দেবেন জানতে চাইলে তারা বলেন, এ বছর আমরা নতুন ভোটার হয়েছি। জীবনের প্রথম ভোটটা ভাল মানুষ এবং আমাদের জন্য কাজ করবে এমন কাউকেই দিতে চাই। তারা আরও বলেন, সেলিনা হায়াত আইভী গত মেয়াদে নগরীর উন্নয়নে অনেক কাজ করেছেন। তার অনেক কাজ এখনও অসমাপ্ত আছে। তাই অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্তের জন্য তাকেই আমরা ভোট দেব। দুপুর ১২টা ৪০ মিনিট থেকে সোয়া ১টা পর্যন্ত চাষাঢ়া মোড়ে কথা হয় তিনজন বেসরকরী চাকরিজীবী, ৮ জন দিনমজুর, ১২ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর সঙ্গে। এরা কেউ নিজের নাম প্রকাশ করতে আগ্রহী নয়। তিনজন বেসরকারী চাকরিজীবীর মধ্যে ২ জনই ভোট দেবেন আইভীকে। তারা নৌকা প্রতীকের কারণে নয়, দেবেন উন্নয়নের কারণে। ১ জন সাখাওয়াতকে ভোট দেবার কথা জানান। দিনমজুর ৮ জনের ৫ জন আইভীকে এবং ৩ জন সাখাওয়াতকে ভোট দেবেন। যে তিন জন সাখাওয়াত হোসেন খানকে ভোট দেবেন তারা জানান, ‘আমরা বিএনপি করি, ধানের শীষেই ভোট দেব।’ এখানে ১২ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর মধ্যে ৬ জন আইভীকে এবং ৬ জন সাখাওয়াতকে ভোট দেয়ার কথা জানিয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুর ১টা ৪০ মিনিট থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ স্টেশন রোডে অবস্থিত মাউরা হোটেলখ্যাত রয়েল রেস্টুরেন্টে খেতে আসা ১৪ জন ব্যবসায়ীর কাছে মেয়র পদে তাদের পছন্দ সম্পর্কে জানতে চাইলে ৮ জন বলেন আইভীকে ভোট দেবেন। তাদের যুক্তি যেহেতু বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়, তাই এই দলের প্রার্থীকেই ভোট দেয়া উচিত, তাহলে উন্নয়ন বেশি হবে। এছাড়া গত মেয়াদেও আইভী ভাল কাজ করছেন বলে তারা যুক্তি দেন। বাকি ৬ জন বিএনপির সমর্থক বলেই সাখাওয়াত হোসেন খানকে ভোট দেয়ার কথা জানান। এই ১৪ ব্যবসায়ীকে আলাদা আলাদা করে প্রশ্ন করা হয়েছে। এর পর বিকেল ৩টা ১০ মিনিট থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত এক নম্বর রেলগেটে নিউ বোস কেবিন এলাকায় কথা হয় তিনজন দিনমজুর, দুই জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, এক জন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী এবং দুই জন বয়স্ক ভোটারের সঙ্গে, এই দুই জন বর্তমানে অবসর জীবন যাপন করছেন। এই ৮ জনের মধ্যে নারায়ণ বিশ্বাস, মোঃ নুরুল ইসলাম এবং আমিনুল হাসান খোকন নাম প্রকাশ করে আইভীকে ভোট দেয়ার কথা জানান। আরও ১ জন নাম প্রকাশ না করে আইভীকে ভোট দেয়া কথা জানান। বাকি ৪ জন বলেন তারা সাখাওয়াতকে ভোট দেবেন। লঞ্চ ঘাট এলাকায় এক জন তার নাম প্রকাশ না করে জানান, এই দুই প্রার্থীর কাউকেই তিনি ভোট দেবেন না। নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতিতে কথা হয় ৬ জন আইনজীবীর সঙ্গে। এদের মধ্যে ৪ জন সাখাওয়াতকে ভোট দেয়ার কথা জানিয়েছেন। বাকি দুই জন বলেন তারা আইভীকে ভোট দেবেন। এর আগে সোমবার হাজিগঞ্জ গুদারাঘাট এবং সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন ওয়ার্ডে আরও ৪৪ জন ভোটারের মতামত নেয়া হয়। এর মধ্যে সোমবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত হাজিগঞ্জ গুদারা ঘাটে ৩২ জনের সঙ্গে কথা বলা হয়। এর মধ্যে ৯ জন গৃহিণী ছিলেন, যারা শীতলক্ষ্যা নদী পার হয়ে বন্দর থানা থেকে সদরে আসছিলেন বিভিন্ন কাজে। এই গৃহিণীরা সবাই আইভীকে ভোট দেয়ার কথা জানান। এদের মধ্যে আইভীর উন্নয়ন, নৌকার পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নের জন্য আইভীকে ভোট দেয়ার কথা জানান। বাকি ২৩ জনের ১৩ জন আইভীকে এবং ১০ জন সাখাওয়াতকে ভোট দেয়ার কথা জানান। এছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন ওয়ার্ডে কথা বলা হয় ১২ জনের সঙ্গে এদের মধ্যে আইভীকে ৮ জন এবং সাখাওয়াতকে ৪ জন ভোট দেয়ার কথা জানান জনকণ্ঠকে। উল্লেখ্য, ২০১১ সালের নির্বাচনে ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী এবং শামীম ওসমানের মধ্যে লড়াই হয়েছিল। ওই নির্বাচনে দোয়াত-কলম প্রতীকে আইভী পেয়েছিলেন ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৮ ভোট। আর দেয়াল ঘড়ি প্রতীকে শামীম ওসমান পেয়েছিলেন ৭৮ হাজার ৭০৫ ভোট। ওই নির্বাচনে ২ লাখ ৮২ হাজার ৫৯৩ জনের ভোট পড়েছিল, যা ছিল মোট ভোটারের ৬৯ দশমিক ২৯ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে, শামীম ওসমানের ভোট পাওয়ার হার ছিল মোট প্রদত্ত ভোটের ২৭ দশমিক ২৭ শতাংশ, আর আইভীর ভোট পাওয়ার হার ছিল ৬৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। এ বছর ভোট বেড়েছে ৭০ হাজারেরও বেশি। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এবার ভোটার বেড়েছে ৭০ হাজার ৭৪২ জন। সিটি কর্পোরেশন গঠিত হওয়ার পর ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৪ লাখ ৪ হাজার ১৮৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩ হাজার ৩৪৪ জন ও নারী ভোটার ২ লাখ ৮৪৫ জন। আগামী ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য সিটি নির্বাচনে ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৩১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬২ এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৩৫ হাজার ২৬৯। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সদরে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬২১ জন, সিদ্ধিরগঞ্জে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৯৭ জন ও বন্দর ১ লাখ ১৩ হাজার ৩২২ জন।
×