ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রপতির কাছে পাঁচ প্রস্তাব জাতীয় পার্টির

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২১ ডিসেম্বর ২০১৬

রাষ্ট্রপতির কাছে পাঁচ প্রস্তাব জাতীয় পার্টির

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন রাখা এবং সংবিধান অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত একটি আইনী কাঠামো প্রণয়নসহ রাষ্ট্রপতির কাছে সুনির্দিষ্ট পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরেছে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের জন্য আলাদা সচিবালয়সহ নির্বাচন কমিশন গঠনে বর্তমান সংসদেই আইন পাস করার দাবি জানিয়েছে দলটি। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনার দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার বঙ্গভবনের দরবার হলে আলোচনায় তাঁরা এসব প্রস্তুব তুলে ধরেন। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ জাতীয় পার্টি প্রস্তাবগুলো বিবেচনার আশ্বাস দিয়ে বলেন, জাতীয় পার্টির প্রস্তাবগুলো নির্বাচন কমিশন গঠনে ইতিবাচক অবদান রাখবে। এদিকে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আরও ছয় রাজনৈতিক দলকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। জাতীয় পার্টির সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার আলোচনা শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপ্রধান জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানান এবং নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার আমন্ত্রণে আসার জন্য ধন্যবাদ জানান। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত থেকে নির্বাচন কমিশন গঠনে একটা রূপরেখা বেরিয়ে আসবে বলে রাষ্ট্রপতি আশা করেছেন। প্রেস সচিব বলেন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময়ের এই সুযোগকে ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ বলেছেন রাষ্ট্রপতি। জাতীয় পার্টির প্রস্তাবগুলো নির্বাচন কমিশন গঠনে ইতিবাচক অবদান রাখবে বলেও তিনি আশাপ্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, আলোচনার সময় জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেছেন, তাঁর দল সংঘাত নয়, সংলাপের মাধ্যমে সমাধান চায়। তিনি ইসি গঠনে সংবিধান অনুযায়ী আইনী কাঠামো প্রণয়নের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক শেষে রাজধানীর কাকরাইলে জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, দেশে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিতই আছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে, নতুন করে ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগ ইতিবাচক। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আমাদের আন্তরিক পরিবেশে কথা হয়েছে। আমরা আশাবাদী তিনি আন্তরিকতার সঙ্গেই ইসি গঠনে উদ্যোগী হবেন। এক প্রশ্নের জবাবে রওশন বলেন, আশা করছি এবার ভাল কিছু হবে। মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আলোচনা অত্যন্ত আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি নতুন ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতি আন্তরিকভাবে কাজ করবেন। মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে এই আলোচনায় জাতীয় পার্টির ১৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। বিরোধীদলীয় নেতা ও পার্টির কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ, জিএম কাদের, মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এম এ সাত্তার, কাজী ফিরোজ রশিদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ফখরুল ইমাম, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, সালমা ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন, এস এম ফয়সাল চিশতি, তাজ রহমান, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, খালেদ আক্তার ও বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে উপস্থিত ছিলেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এইচ এম এরশাদ বেলা ২টা ৫০ মিনিটে অধিকাংশ নেতাকে নিয়ে বঙ্গভবনে পৌঁছালেও তাঁর স্ত্রী রওশন এরশাদ বাকিদের নিয়ে আসেন ৩টার ঠিক আগে। নির্ধারিত সময় বিকেল ৩টায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দরবার হলে প্রবেশ করার পর শুরু হয় নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আলোচনা। আলোচনাকালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ রাষ্ট্রপতির কাছে দলের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রস্তাবগুলো হলো- ‘নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন রাখা। ২. সংবিধান অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন নিয়োগ সংক্রান্ত একটি আইনী কাঠামো প্রণয়ন। ৩. নির্বাচন কমিশনের জন্য আলাদা সচিবালয় গঠন। ৪. বর্তমান সংসদেই আইন পাস করা এবং ৫. নির্বাচন কমিশনাদের ন্যূনতম ও সর্বোচ্চ বয়স নির্ধারণ, নিরপেক্ষতা, ব্যক্তিগত একাগ্রতা ও সততা, অন্য অফিসে নিয়োগে বিধি-নিষেধ, নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়জ্ঞান, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় না থাকা নিশ্চিত করা। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষে আগামী ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেবে নতুন নির্বাচন কমিশন। ওই কমিশনের অধিনেই ২০১৯ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে রবিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপ্রধান আবদুল হামিদের এই সংলাপ শুরু হয়। প্রথম দিনের আলোচনার পর ইতিবাচক বক্তব্য আসে দুই পক্ষ থেকেই। গত ১২ ডিসেম্বর যে পাঁচটি দলকে আলোচনায় অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছিল তার মধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সঙ্গে আলোচনার তারিখ নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, জাসদ সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু দেশের বাইরে থাকবে বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ কারণে আগামী ২৬ ডিসেম্বর জাসদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া আজ বুধবার বিকেল ৩টায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও সাড়ে ৪টায় কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গে আলোচনা করবেন রাষ্ট্রপতি। পর্যায়ক্রমে আরও কয়েকটি দলকে আলোচনার আমন্ত্রণ জানিয়ে বঙ্গভবন থেকে ঠিক পাঠানোর কথা রয়েছে। আরও ৬ রাজনৈতিক দলকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ ॥ নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আরও ছয় দলকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন জনকণ্ঠের কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। দলগুলো হলো- বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), ইসলামী ঐক্যজোট, জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। প্রেস সচিব জানান, ইতোমধ্যে এই দলগুলোকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণের চিঠি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, আগামী ২৭ ডিসেম্বর ওয়ার্কার্স পার্টি, ২৯ ডিসেম্বর বিএনএফ ও ইসলামী ঐক্যজোট, ২ জানুয়ারি জেপি (মঞ্জু) এবং ৩ জানুয়ারি তরিকত ফেডারেশন ও বিজেপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এছাড়া সময় পরিবর্তনের জন্য আবেদন করায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদকে আগামী ২৬ ডিসেম্বর আলোচনার জন্য ডেকেছেন রাষ্ট্রপতি।
×