ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জন্মদিনের অনুষ্ঠান

সুহৃদদের ভালবাসায় সিক্ত আবদুল গাফ্্ফার চৌধুরী

প্রকাশিত: ০৭:৪৫, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬

সুহৃদদের ভালবাসায় সিক্ত আবদুল গাফ্্ফার চৌধুরী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জন্মদিনে সুহৃদদের অপার ভালবাসায় সিক্ত হলেন অমর একুশে গানের রচয়িতা আবদুল গাফ্্ফার চৌধুরী। ভাষা আন্দোলনের সেই অবিনাশী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র এই গীতিকবি, লেখক ও বরেণ্য সাংবাদিকের ৮৩তম জন্মবার্ষিকী উদ্্যাপিত হলো সোমবার। পৌষের হিমহিম রাতে শুভানুধ্যায়ী ও ভক্তদের সরব উপস্থিতিতে ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী সেন্টারে জন্মদিনের এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকলের ভালবাসা নিয়ে তার আগামীর দিনগুলো পার করার আশাবাদ প্রকাশ করেন গুণীজনরা। সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সম্ভাবনার বাংলাদেশের কথা তুলে ধরে গাফ্্ফার চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ একটি ক্রান্তিকাল পার করছে। একদিকে দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও রয়েছে; কিন্তু সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। তবে এ মুহূর্তে বিশে^র অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ অনেকটাই নিষ্প্র্রভ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে এ দেশ আফগানিস্তান, পাকিস্তান হয়ে যেত। আমার মতে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কোন তুলনা নেই। আমাদের জাতীয় পরিচয়কে তিনি যেভাবে উর্ধে তুলে ধরেছেন, তা সমুন্নত রাখতে তিনি রীতিমতো যুদ্ধ করছেন। এ সরকারকে অনেকে অগণতান্ত্রিক সরকার বলে উল্লেখ করে। কিন্ত যে গণতন্ত্র তালেবান সৃষ্টি করে তার চেয়ে এই গণতন্ত্র ভাল। ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর শৈশব থেকে রাজনৈতিক জীবন নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র ‘শেখ হাসিনা : দুর্গম পথের যাত্রী’ নির্মাণ করেছেন। এটা গত ১৭ ডিসেম্বর তিনি প্রধানমন্ত্রীকে দেখিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা করার কী দরকার ছিল। এর উত্তরে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, দেশের মানুষ দেখুক: এ দেশ শুধু জিয়া-খালেদার জন্ম দেয়নি, এদেশ শুধু মীরজাফরের জন্ম দেয়নি; সিরাজউদ্দৌলারও জন্ম দিয়েছে। মানুষ দেখুক দেশের উন্নয়নে নিবেদিতপ্রাণ এক নেতা শেখ হাসিনাকে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনায় তার পিতাকেও অতিক্রম করেছেন। নাতিদীর্ঘ এ বক্তব্যে তিনি উপস্থিত সকলের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের বর্ণনা দেয়ার এক পর্যায়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে নিয়ে স্মৃতিচারণে বলেন, ১৯৫৫ সালে মুহিত ভাই আর আমি একসঙ্গে জেলে ছিলাম। সে সময়ই তার মুখ থেকে প্রথমবার ‘রাবিশ’ শব্দটি শুনি। আজও তার রাবিশ শেষ হয়নি। তার এ বক্তব্যের সময় মিলনায়তনভর্তি সুহৃদরা হেসে ওঠেন। এমনই হাস্যোজ্জ্বল ছিল পুরো আয়োজনটি। এতে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক খন্দকার রাশেদুল হক নবা। সবাই কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করেন। গত ১২ ডিসেম্বর ছিল এই ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্বের ৮৩তম জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনের এক সপ্তাহ পর আয়োজিত অনুষ্ঠানে ছিল সর্বস্তরের মানুষের ভিড়। আবদুল গাফ্্ফার চৌধুরীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান তার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। শুভেচ্ছা জানাতে ছুটে আসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর, বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মীর্জা আযম, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপস, জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবদুর রহমান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান, শিল্প সচিব মোশাররফ হোসেন ভুইয়া, শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন, সংস্কৃতি সচিব আক্তারী মমতাজ, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, সাবেক সেনাপ্রধান হারুন অর রশিদ, শিল্পী হাশেম খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান, বাসসের প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, লায়লা হাসান, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, শিমুল ইউসুফ, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, নাট্যজন পীযূষ বন্দোপাধ্যায়, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান ডাঃ নুজহাত চৌধুরী, কবি আসাদ চৌধুরী ও পিআইবির মহাপরিচালক শাহ আলমগীর। আনন্দঘন এ আয়োজনের এক ফাঁকে সভাপতির বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অনুজপ্রতিমকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বললেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের পরেই গাফ্ফার বিদেশে পাড়ি জমান। কিন্তু কখনই তার অনুপস্থিতি বোঝা যায়নি। লেখালেখির মধ্য দিয়ে তিনি সব সময় কাছেই ছিলেন। তার প্রতিটি লেখায় আদর্শবাদের ছাপ রয়েছে। তার কৃতিত্ব সাংবাদিক হিসেবে সবচেয়ে বেশি। টিএস ইলিয়টের মতো করে বলতে চাই, সাংবাদিকতা এক ধরনের সাহিত্য। তার লেখার সংকলনের একটা বড় অংশজুড়ে রয়েছে সাহিত্য। তার লেখার সংকলন সাহিত্যের বড় অংশ দখল করে আছে। তিনি সারাজীবন আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছেন, সময়ে সময়ে সমালোচনা করেছেন, উপদেশ দিয়েছেন। নানা মাধ্যমে কাজ করে তিনি কিংবদন্তি হয়ে আছেন, কিংবদন্তি হয়েই থাকবেন। তার কর্মমুখর দীর্ঘায়ু কামনা করি।
×