ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

উঠতি বয়সী বাচ্চাদের সমস্যা ‘গ্রোথ পেইন’

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬

উঠতি বয়সী বাচ্চাদের সমস্যা ‘গ্রোথ পেইন’

কেস স্ট্যাডি : স্নেহা বয়স ৬ বছর ঢাকার একটি নামকরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে নার্সারিতে পড়ে। প্লে গ্রুপে থাকা অবস্থায় ভালই ছিল। কিন্তু ইদানীং সে স্কুল থেকে আসার পর মার কাছে পা ব্যথার কথা বলে। মাঝে মাঝে ব্যথা বেড়ে গেলে কান্নাকাটিও করে। কিছুদিন কম থাকে আবার বেড়ে যায়। স্নেহার বাবা-মা তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে জানতে পারেন গ্রোথ পেইনজনিত সমস্যায় ভুগছে। গ্রোথ পেইন হলো স্কুলে যাবে বা যেতে শুরু করেছে এমন শিশুদের দুই পায়ের মাংসপেশীতে এক ধরনের অস্বস্তিকর চাবানো প্রচ- থেকে মাঝারি মানের ব্যথা যা শেষ বিকেলে বা সন্ধ্যার পরে হতে পারে। এ ধরনের ব্যথায় শিশুর মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যেতে পারে। গ্রোথ পেইন সাধারণত তিন-চার বছর বয়সে বেশি হয়ে থাকে। তারপর সে কিছুদিন ভাল থাকে। আবার তার ৮-১২ বছর বয়সে এ ব্যথা দেখা দিতে পারে। ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের ক্ষেত্রে এ ধরনের ব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা একটু বেশি। কারণ যদিও এর নাম গ্রোথ পেইন, কিন্তু এটা শিশুদের বাড়ন্ত হাড়ের কোন গাঠনিক পরিবর্তন-জনিত রোগ নয়। এটি শুধু শিশুদের প্রাত্যহিক জীবনে অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট একটি লক্ষণ। অতিরিক্ত দৌড়ঝাঁপ, লাফালাফি, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রোথ পেইন হতে পারে। সাধারণত কোন শিশু যদি সারাদিন খেলাধুলায় মত্ত থাকে তাহলে তার বেলায় এ ধরনের ব্যথা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। লক্ষণ গ্রোথ পেইনের লক্ষণগুলো শিশুভেদে বিভিন্ন রকম হতে পারে। কারও ক্ষেত্রে অনেক ব্যথা থাকে আবার কারও থাকে না। বেশির ভাগ শিশুর বেলায় প্রতিদিন ব্যথা হয় না। এ ব্যথা আসে আর যায়। কখনও কারও ক্ষেত্রে কয়েক মাস এমনকি বছর পর্যন্ত ব্যথা থাকতে পারে। সাধারণত বিকেল বা সন্ধ্যার সময় অথবা কারও ক্ষেত্রে রাতের আহারের আগমুহূর্তে বা বিছানায় শুতে যাওয়ার আগমুহূর্তে ব্যথা হয়ে থাকে। মাঝে মধ্যে ব্যথা এত তীব্র হতে পারে, যা শিশুটিকে রাতে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে। ব্যথাটি সকালে সম্পূর্ণরূপে চলে যায়। এ ব্যথা শিশুর কর্মক্ষমতা এবং স্পৃহাকে কখনই প্রভাবিত করে না। ব্যথা শিশুটির দু’পায়ে অনুভূত হতে পারে, যা সাধারণত হাঁটুর ওপরের এবং পেছনের মাংসপেশীতে পরিলক্ষিত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশুর গ্রোথ পেইন থাকে, তারা সাধারণত ব্যথার প্রতি বেশি সংবেদনশীল হয় এবং তাদের -এর সঙ্গে মাথা ও পেটে ব্যথা থাকে। রোগটি নির্ণয় একজন চিকিৎসক উপরিউক্ত লক্ষণগুলো নিয়ে যদি কোন শিশু তার কাছে আসে তাহলে শিশুটিকে যথাযথ পরীক্ষা করে এবং তার সঙ্গে কথা বলে রোগটি নির্ণয় করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে তাকে মাংসপেশীর ব্যথার অন্য কারণগুলো যথাযথভাবে বিবেচনায় নিয়ে সঠিক পরীক্ষার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনিত হতে হবে। প্রয়োজনে রক্ত পরীক্ষা যেমন- সিবিসি, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, বি১২ ইত্যাদি রক্ত পরীক্ষা করা যেতে পারে। চিকিৎসা গ্রোথ পেইনের সুনির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই। স্বস্তির সংবাদ হলো- এ রোগ কোন প্রকার জটিলতা সৃষ্টি করে না এবং শিশুর দৈহিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলে না। এটা সাধারণত নিজে নিজে এক থেকে দুই বছরের মধ্যে সেরে যায়। শিশুকে কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে উৎসাহ দিলে অনেক ক্ষেত্রেই তা বছরখানেকের মধ্যে ভাল হয়ে যায়। গ্রোথ পেইনের চিকিৎসানির্ভর করে শিশুটির ব্যথার তীব্রতার ওপর। এ ক্ষেত্রে নিচের পদ্ধতিগুলো গ্রহণ করলে শিশুটিকে স্বস্তি এবং ব্যথামুক্ত করা যায়- ঝঃৎবঃপযরহম ঊীবৎপরংব (চিকিৎসকের দেখানো মতে, দুই পায়ের মাংসপেশিগুলোকে ঝঃৎবঃপযরহম করা যায়) পায়ের মাংসপেশীতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে গধংংধমব করা যায়। পায়ের মাংসপেশিগুলোতে গরম পানির সেঁক দেয়া যায়, যা খুবই কার্যকর। তবে তা খুবই সতর্কতার সঙ্গে দিতে হবে, যাতে পা পুড়ে না যায় এবং তা কখনও ঘুমন্ত অবস্থায় দেয়া যাবে না। অনেক ক্ষেত্রে শিশুকে ঘুমানোর আগে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করানো যেতে পারে (ডধৎস ইধঃয)। তবে মাথায় অবশ্যই নরমাল পানি দিতে হবে। শিশুকে নিয়মিত সুষম খাবার দিতে হবে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ফলমুল, শাক-সবজি পরিমিত খাওয়াতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে শিশুটি যেন বাহিরের খাবার না খায়। পাশাপাশি পরিমিত ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ডাঃ মোঃ সফিউল্যাহ্ প্রধান পেইন ও ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ ডিপিআরসি হাসপাতাল ২৯ প্রবাল হাউজিং, রিং রোড, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭। মোবাইল- ০১৭৩-২২০০৬৯৭
×