ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রিপল সেঞ্চুরিতে করুণ নায়ারের ইতিহাস

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬

ট্রিপল সেঞ্চুরিতে করুণ নায়ারের ইতিহাস

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মোহালিতে তৃতীয় টেস্টে অভিষেকে সুযোগ পাওয়া প্রথম ইনিংসে ৪ রানের পর মুম্বাইয়ে পরের ম্যাচে আউট হয়েছিলেন ১৩ রানে। তাতে ভারতের মতো বিশ্বসেরা দলে জায়গাটা পাওয়া নিয়েই প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু চেন্নাইয়ে জাত চিনিয়ে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখলেন করুণ নায়ার। ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টেই মাত্র দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে ট্রিপল সেঞ্চুরি হাঁকালেন রাজস্থানে জন্ম নেয়া ২৫ বছর বয়সী ডানহাতি ব্যাটসম্যান। আগের দিন ১ রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি পাননি সতীর্থ ওপেনার লোকেশ রাহুল। মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে নার্ভাস ১৯৯-এ আউট হয়েছিলেন তিনি। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুঃখ ঘুচিয়ে দিলেন নায়ার। খেললেন অপরাজিত ৩০৩ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস। যার ওপর ভর করে ইংল্যান্ডের ৪৭৭-এর জবাবে চতুর্থ দিন শেষে ৭ উইকেটে ৭৫৯ রানে পাহাড় গড়ে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে পঞ্চম ও শেষ টেস্টে অনেকটাই চালকের আসনে বিরাট কোহলির দল। আগের দিন স্পিনার আদিল রশিদের অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে ১৯৯ রানে আউট হয়ে আফসোসে পুড়েছিলেন রাহুল। পরে ক্ল্যাসিক্যাল ওপেনার সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, সম্ভাব্য ডাবল সেঞ্চুরির উত্তেজনাতেই অমন করেছেন, চাপটা আসলে নিতে পারেন নি! কিন্তু কাল সে ভুল করেননি করুণ। চা-বিরতির আগে দাঁড়িয়েছিলেন ১৯৫-এ। ফলে তার পক্ষে মনোসংযোগ ধরে রাখাটা সহজ ছিল না। কিন্তু বিরতির পর ক্রিজে সেই পুরনো করুণকেই দেখা যায়। কিটন জেনিংসকে কভার দিয়ে নিখুঁত ভঙ্গিতে তার ২৩তম চার মেরে জীবনের প্রথম সিরিজে পাওয়া সেঞ্চুরিটিকে ডাবল সেঞ্চুরিতে রূপ দেন। এরপরও থেমে থাকেননি। ৩৮১ বলে খেলেছেন অপরাজিত ৩০৩ রানের দুরন্ত ইনিংস। হাঁকিয়েছেন ৩২টি চার ও ৪টি ছক্কা। ব্যক্তিগত ৩৪ রানে প্রতিপক্ষ অধিনায়ক এ্যালিস্টার কুক একবার ক্যাচ ছেড়েছেন। করুণকে এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। গ্রেট সুনীল গাভাস্কার, শচীন টেন্ডুলকর পারেননি। ভারতের টেস্ট ইতিহাসে মাত্র তৃতীয় ট্রিপল সেঞ্চুরি এটি। আগের দু-বারই যেটি হাঁকিয়েছিলেন কেবল বিরেন্দর শেবাগ। চেন্নাইয়ের এই এম চিদম্বরম স্টেডিয়ামেই ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩১৯ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেছিলেন শেবাগ। অপরটি ২০০৪ সালে মুলতানে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩০৯। অভিষেক সিরিজেই মাত্র দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে দারুণ এই কীর্তি গড়লেন করুণ। তাও আবার ২৫ বছর বয়সে। বয়স ও অভিষেক সিরিজ- দুই বিচারে বীরুকেও ছাড়িয়ে গেলেন তিনি! ও হ্যাঁ, ট্রিপলের আগের গল্পটাও কিন্তু দারুণ। করুণের আগে মাত্র দু-জন ভারতীয় জীবনের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিকে ডাবল সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পেরেছিলেন। তারা হলেন দিলীপ সারদেশাই ও বিনোদ কাম্বলি। ১৯৬৫ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০০ রান করে অপরাজিত ছিলেন দিলীপ। আর সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯৯৩-এ ২২৪ রানের চোখ ধাঁধানো ইনিংস খেলেছিলেন কাম্বলি। শচীনের বাল্যবন্ধু অবশ্য পরের ম্যাচেও ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। সেঞ্চুরি, ডাবল সেঞ্চুরি, অতঃপর অপরাজিত ট্রিপল সেঞ্চুরি- এক ইনিংসেই করুণ একে একে সব গ্রেটদের ছাড়িয়ে গেলেন। জীবনের প্রথম সেঞ্চুরিকেই ট্রিপলে রূপ দেয়া ইতিহাসের মাত্র তৃতীয় ব্যাটসম্যান করুণ। মজার বিষয়, কর্নাটকের হয়ে রঞ্জি দাপানো করুণের এই সিরিজে খেলারই কথা ছিল না। রোহিত শর্মা ইনজুরিতে না পড়লে হয়ত রিজার্ভ বেঞ্চে বসেই কাটাতে হতো!
×