ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অস্ট্রেলিয়াকে কাঁপিয়ে দিয়ে হারল পাকিস্তান

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬

অস্ট্রেলিয়াকে কাঁপিয়ে দিয়ে হারল পাকিস্তান

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট, সেখানে পাকিস্তান কেন বড় ‘আনপ্রেডিক্টেবল, বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন আরও একবার দেখল সেটি! জিততে হলে রান তাড়ার রেকর্ড গড়তে হতো, না মিসবাহ-উল হকের দল সেটি পারেনি। তবে হারার আগে হেরেও যায়নি। ব্রিসবেনে ৪৯০ রানের অসম্ভব লক্ষ্য ধাওয়া করতে গিয়ে সফরকারীরা থামল ৪৫০-এ! অস্ট্রেলিয়াকে কাঁপিয়ে দিয়ে মাত্র ৩৯ রানে হারল সফরকারীরা। ১৩৭ রানের দুরন্ত ইনিংস উপহার দিয়ে নিষ্প্রাণ হার দেখা ম্যাচটা প্রায় একাই জমিয়ে তুললেন আসাদ শফিক। যা তাকে সান্ত¡নার ম্যাচসেরার পুরস্কার এনে দিয়েছে; কিন্তু দুর্ভাগ্য, শেষ রক্ষা করতে পারেননি। অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে শফিক ফেরার পর ৫ বলের মধ্যেই শেষ পাকিস্তানের স্বপ্ন। ৪২৯-এর জবাবে প্রথম ইনিংসে তাদের সংগ্রহ ছিল ১৪২। আর ৫ উইকেটে ২০২ রানে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে অস্ট্রেলিয়া। ডে-নাইট ম্যাচে ঘাম ছুটে যাওয়া এই জয়ে তিন টেস্টের সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল স্টিভেন স্মিথের দল। মিচেল স্টার্কের ব্যাক অব লেন্থের বলটা আচমকা লাফিয়ে উঠেছিল। শফিকের গ্লাভস ছুঁয়ে সেটি উঠে গেল আরও ওপরে। গালিতে ক্যাচটা নিয়ে সেটিকে শূন্যে ছুড়ে মারলেন ডেভিড ওয়ার্নার। যেন ছুড়ে দিলেন পাকিস্তানের স্বপ্নটাকেও! অবিশ্বাস্য, অভাবনীয় এক জয়ের পথে সফরকারীদের যে একাই এগিয়ে নিচ্ছিলেন শফিক। স্টার্কের আগুন ডেলিভারিতে শেষ তার সাড়ে ৫ ঘণ্টার বীরোচিত লড়াই। পরের পাঁচ ডেলিভারির মধ্যে পাকিস্তানের রান তাড়ার রোমাঞ্চকর গল্পটাও শেষ। টেস্ট ক্যারিয়ারের দশম ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি পাওয়া ইনিংসে ২০৭ বলে ১৩৭ রান করেন শফিক। তার ইনিংসটি ১৩টি বাউন্ডারি ও ১টি ছক্কা দিয়ে সাজানো। দশ সেঞ্চুরির নয়টিই ছয় নম্বরে নেমে! ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের গ্যারি সোবার্সকে পেছনে ফেলে এই পজিশনে পাওয়া সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক এখন শফিকই। ম্যাচ হারলেও তাই ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে তার হাতে। যাতে শফিকের লড়াকু ইনিংসটির মহিমা আরও বড় হয়ে ওঠে। ২ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ দিনে জয়ের জন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১০৮ রান। ৭৮ রান যোগ করে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন শফিক আর ইয়াসির শাহ। ৩৩ রান করে আউট হন ইয়াসির। তার আগে আজহার আলি ৭১, ইউনুস খান ৬৫, সরফরাজ আহমেদের ৪৮ উল্লেখ্য। ৪৯০ রান তাড়ায় ৪৫০Ñএ অলআউটÑ চতুর্থ ইনিংসে এটি পাকিস্তানের সর্বোচ্চ রান তো বটেই, টেস্ট ইতিহাসেরই চতুর্থ সর্বোচ্চ। আগের তিনটি উইন্ডিজ (৬৫৭/৮), ভারত (৫৯৯/৮) ও উইন্ডিজের (৫৪০/১০)। সেই ১৯৯৫ সালে সিডনিতে জয়ের পর এই নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় টানা ১০ টেস্টে হারল পাকিরা। এমন লড়াকু পারফর্মেন্সের পর প্রতিপক্ষ অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের প্রশংসা পেয়েছে পাকিস্তান। পরের টেস্টে যা সফরকারীদের আত্মবিশ্বাস যোগাবে। ২৬ ডিসেম্বর ‘বক্সিং ডে’তে মেলবোর্নে শুরু দ্বিতীয় টেস্ট। স্কোর কার্ড ॥ অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস ৪২৯/১০ (১৩০.১ ওভার; স্মিথ ১৩০, হ্যান্ডসকম্ব ১০৫, রেনশ ৭১, ওয়ার্নার ৩২, লেয়ন ২৯, খাজা ৪, ওয়েড ৭; আমির ৪/৯৭, ওয়াহাব ৪/৮৯, ইয়াসির ২/১২৯) ও দ্বিতীয় ইনিংস ২০২/৫ ডিক্লেঃ (৩৯ ওভার; খাজা ৭৪, স্মিথ ৬৩, হ্যান্ডসকম্ব ৩৫, ওয়ার্নার ১২; রাহাত ২/৪০, আমির ১/৩৭) পাকিস্তান প্রথম ইনিংস ১৪২/১০ (৫৫ ওভার; সরফরাজ ৫৯*, আসলাম ২২, আজহার ৫, বাবর ১৯, ইউনুস ০, মিসবাহ ৪, শফিক ২, ওয়াহাব ১, আমির ২১; স্টার্ক ৩/৬৩, হ্যাজলউড ৩/২২, বার্ড ৩/২৩) ও দ্বিতীয় ইনিংস ৭০/২ (৩৩ ওভার; আজহার ৪১*, সামি ১৫, বাবর ১৪, ইউনুস ০*; স্টার্ক ১/২৮, লেয়ন ১/১৩) ও দ্বিতীয় ইনিংস ৪৫০/১০ (১৪৫ ওভার; সফিক ১৩৭, আসলাম ১৫, আজহার ৭১, বাবর ১৪, ইউনুস ৬৫, মিসবাহ ৫, সরফরাজ ২৪, আমির ৪৮, ওয়াহাব ৩০, ইয়াসির ৩৩, রাহাত *; স্টার্ক ৪/১১৯, বার্ড ৩/১১০, লেয়ন ২/১০৮)। ফল ॥ অস্ট্রেলিয়া ৩৯ রানে জয়ী ম্যাচসেরা ॥ আসাদ শফিক (পাকিস্তান) সিরিজ ॥ তিন টেস্টের সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ১-০ তে এগিয়ে।
×