ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অবস্থান কর্মসূচীতে এফটিপিও’র নেতারা

বিজয় দিবসে দীপ্ত টিভিতে সুলতান সুলেমান প্রচার জাতির লজ্জা

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬

বিজয় দিবসে দীপ্ত টিভিতে সুলতান সুলেমান প্রচার জাতির লজ্জা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘মহান বিজয় দিবসে এবার বেসরকারী চ্যানেল দীপ্ত টিভিতে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ডাবকৃত বিদেশী সিরিয়াল সুলতান সুলেমান প্রচার করা আমাদের সামাজিক মূল্যবোধের বিরোধী। এ লজ্জা আমাদের জাতির। যারা এই ঘৃণ্য তৎপরতায় লিপ্ত আমরা তাদের বিচার চাই। আমাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে দেশের বেশ কিছু টিভি চ্যানেল বিদেশী সিরিয়াল প্রচার বন্ধ করেছে। কিন্তু কয়েকটি চ্যানেল এখনও তাদের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা তাদের এই ধরনের সংস্কৃতিবিরোধী কার্যক্রমকে ধিক্কার জানাই। আমরা অন্যদেশের কোন সিরিয়াল এদেশের টিভিতে প্রচার হোক এটা চাই না। দেশে বিদেশী সিরিয়ালের বাজার বন্ধ করতে হবে। একমাত্র শিক্ষামূলক কোন অনুষ্ঠান ছাড়া বিদেশী অন্য কোন অনুষ্ঠান প্রচার করা যাবে না। দর্শকের রুচি অনুযায়ী ১০ মিনিটের বেশি বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। বিদেশী কোন শিল্পীদের এ দেশে অভিনয় করতে হলে সরকারী ও বিভিন্ন সংগঠনের নিয়মনীতি মেনে করতে হবে।’ টিভি চ্যানেলে ডাবকৃত বিদেশী সিরিয়াল বন্ধের দাবিতে দীপ্ত টিভি কার্যালয়ের সামনে সোমবার সকালে ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশনের (এফটিপিও) অবস্থান কর্মসূচীতে এ কথা বলেন- সংগঠনের আহ্বায়ক মামুনুর রশীদ। অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, আমাদের শিল্পীদের জীবন সংগ্রামের মধ্যে থেকেই যাচ্ছে। ভাষার জন্য ১৯৫২ সালে সংগ্রাম শুরু হয়েছিল, আজও দেখছি আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক অবস্থান বিপন্ন। বিদেশী অনুষ্ঠানমালা প্রচারকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাধীনতার মূল্যবোধ, ভাষা-সংস্কৃতি রক্ষায় আমরা আজ আন্দোলনে নেমেছি। আমাদের সংস্কৃতি যখন বিপন্ন তখন আমাদের পথে নামা ছাড়া অন্য উপায় ছিল না। তার অভিযোগ, বিদেশ থেকে আগত শিল্পীরা ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে কাজ করে চলে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ভারতে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল দেখানো হয় না, কারণ, সেখানে বাংলাদেশের চ্যানেল দেখাতে গেলে ৮ কোটি টাকা দিয়ে অনুমোদন পেতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে মাত্র দেড় লাখ টাকায় ভারতীয় চ্যানেল দেখনোর অনুমতি প্রদান করা হয়। সরকারের কাছে দাবি আমাদের দেশেও যেন ভারতীয় চ্যানেল দেখাতে একই রকম টাকা প্রদান করার বিষয়টি চালু করা হয়। সংগঠনের সদস্য সচিব গাজী রাকায়েত বলেন, আমরা শিল্পীরা যদি না বাঁচি, তাহলে আমাদের শিল্পসমাজকে রক্ষা করা যাবে না। দীপ্ত টিভি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কাজ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে অনেক গুণীজনেরা আজ দীপ্ত টিভির সামনে হাজির হয়েছে, তাদের উচিত ছিল আমাদের সঙ্গে হাত মেলানো। কিন্তু সেটা তারা করে নাই। আমরা চাই কাল থেকে তারা বিদেশী সিরিয়াল চালানো বন্ধ করবে। চলচ্চিত্র নির্মাতা এসএ হক অলিক বলেন, আমরা এসেছি আমাদের প্রাণের দাবি নিয়ে। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয় যাব। প্রয়োজনে আরও কঠিন কর্মসূচী দেব। তিনি বলেন, দীপ্ত টিভি এক নব্য রাজাকার। অভিনেত্রী জাকিয়া বারি মম বলেন, আমরা আমাদের ঐতিহ্য নিয়েই থাকতে চাই। অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে ফেলে দিয়ে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংস করা ঠিক হবে না। অভিনেতা নাদের চৌধুরী বলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের দাবি মেনে নিন। আমাদের দাবি না মানলে, আরও ব্যাপক আন্দোলনে যাব। পরে বক্তব্য পর্বে যোগ দিয়ে কেবল টিভি অপারেটরদের প্রতি দীপ্ত টিভি প্রচার বন্ধের অনুরোধ করেন অভিনেতা-নির্মাতা নাদের চৌধুরী। অভিনেতা মাহফুজ বলেন, আমাদের আকাশ দখল হয়ে গেছে, আমরা শিল্পীরা শুধুমাত্র ব্যবহৃত হচ্ছি। এবার ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। আমরা যেন আর ব্যবহৃত না হই। চ্যানেলে ডাবিংকৃত সিরিয়াল ও অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে টিভি চ্যানেলগুলো শিল্পী ও কলাকুশলীদের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নাট্যকার সংঘের সভাপতি মাসুম রেজা। তিনি বলেন, দীপ্ত টিভির ‘সুলতান সুলেমান’ ছাড়াও লোগোটি সরিয়ে ফেললে একটি ভারতীয় চ্যানেলের রূপ নেবে। এরা যে বাংলা নাটকগুলো প্রচার করছে সেগুলোও ভীষণ অরুচিকর, অসামাজিক। এগুলো পরিবারের সঙ্গে বসে দেখা যায় না। অবস্থান কর্মসূচীতে আরও বক্তব্য রাখেন-অভিনেত্রী স্বাগতা, শামীমা তুষ্টি, নওশিন, কে এস ফিরোজ, নাট্য নির্দেশক চয়নিকা চৌধুরী, আমিরুল হক চৌধুরী, আহসান হাবীব নাসিম, আনজাম মাসুদ প্রমুখ। দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলা এই অবস্থান কর্মসূচীর শেষে মামুনুর রশীদ জানান, আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় তারা একুশে টিভির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেবেন। ২৮ ডিসেম্বর এসএটিভি ও ২৯ ডিসেম্বর মাছরাঙা টিভির সামনেও বিক্ষোভ সমাবেশ করবেন তারা। এফটিপিও’র আন্দোলন প্রসঙ্গে দীপ্ত টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী উরফী আহমদ বলেন, তারা মাত্র একবারই এসেছেন। এরপর থেকে উনারা আন্দোলন করে আসছেন, আমাদের সঙ্গে কোন কথা বলেননি। তিনি বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি, আলোচনার মাধ্যমে আসলে সমাধান হওয়া উচিত। আমরা এখনও আলোচনার পথটি খোলা রেখেছি। বিজয় দিবসের দিন ‘সুলতান সুলেমান’ প্রচারের বিষয়ে তিনি বলেন, বিজয় দিবসে আমরা দেড় ঘণ্টা সরাসরিসহ মোট সাড়ে ৯ ঘণ্টা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার করেছি, যার মধ্যে তিনটি প্রামাণ্যচিত্রও রয়েছে। আমাদের এ ভাল কাজগুলো তারা না বলে, শুধু এটিই বলছেন। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য প্রসঙ্গে কেবল টিভি উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মীর হোসাইন আখতার বলেন, আমাদের সঙ্গে কোন আলোচনা না করে, এ ধরনের বক্তব্য প্রদান ঠিক নয়। আলোচনাসাপেক্ষেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এফটিপিও’র নতুন দাবিগুলো হচ্ছে- বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য সময়সীমা নির্ধারণ, নাটকের বাজেট যৌক্তিক হারে বৃদ্ধি, কপিরাইট আইন বহাল রাখা, যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে প্রিভিউ কমিটি গঠন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নির্ভুল ও যথাযথ টিআইপি ব্যবস্থা চালু করা, ভারতে বাংলাদেশের চ্যানেল চালু করা ও তাদের সকল ডাউন লিংক ফি’র সঙ্গে এদেশের চ্যানেল ডাউন লিংকের যে অসম ফি আছে তা অপসারণ করা ও এফটিপিওকে সরকারীভাবে স্বীকৃতি দেয়া।
×