ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ওষুধের মান, বিক্রি ও আমদানি নিয়ন্ত্রণে ওষুধ নীতি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬

ওষুধের মান, বিক্রি ও আমদানি নিয়ন্ত্রণে ওষুধ নীতি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ এবং ওষুধ তৈরি, বিক্রি ও আমদানিতে আরও বেশি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় একটি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গঠনের সুযোগ তৈরি করে জাতীয় ওষুধ নীতি অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। নীতিটি বাস্তবায়ন হলে প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রি বন্ধ হবে। এছাড়া দক্ষতা উন্নয়নে একটি তহবিলের সঙ্গে কর্তৃপক্ষ গঠন করতে মন্ত্রিসভা ‘জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিল’ ও ‘ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনএসডিএ)’ গঠনের প্রস্তাব, ‘কস্ট এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এ্যাকাউন্ট্যান্টস আইন-২০১৬’ খসড়া, ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন-২০১৬’ এর খসড়া এবং ‘নজরুল ইনস্টিটিউট আইন-২০১৬’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। অসুখ বিসুখ হলে বাংলাদেশের মানুষের একটি সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ফার্মেসিতে গিয়ে দোকানির পরামর্শে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা। চিকিৎসকরা বলছেন, অপব্যবহারের কারণে এন্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা থাকছে না এবং সাময়িকভাবে রোগ সেরে গেলেও রোগীকে পরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগতে হতে পারে। পরে কড়া ওষুধ ব্যবহার করেও রোগ সারছে না। আন্তর্জাতিক একটি গবেষণা সংস্থাÑ আইসিডিডিআরবি’র এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। গবেষক ডাঃ মোহাম্মদ ইকবাল বলছেন, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। গ্রাম্য ডাক্তাররা এবং ফার্মেসিতে বিক্রেতারা অবাধে এন্টিবায়োটিক দিচ্ছেন। এর শতকরা ৭৫ ভাগই সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। এ ওষুধ ব্যবহারের ব্যাপারে লোকজনকে সচতেন করার জন্য বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বেই একটি প্রচার শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের সাধারণ লোকজন আর ওষুধ বিক্রেতাদের এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের বিষয়ে সচেতনতারও অভাব রয়েছে। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, এই কর্তৃপক্ষের নাম হবে জাতীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ। এই কর্তৃপক্ষ ওষুধের মান থেকে শুরু করে কাঁচামাল ও অন্যান্য সরঞ্জামের মান দেখবে। বর্তমানে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর এবং ওষুধ প্রশাসন পরিদফতর এসব বিষয় দেখভাল করে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন ১২২টি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ যাচ্ছে। ফলে মান নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ২০০৫ সালে সর্বশেষ জাতীয় ওষুধ নীতি করা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে অনেক কিছুর পরিবর্তন হওয়ায় নতুন করে এই নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। নতুন ওষুধ নীতির আওতায় বিদ্যমান আইন ও বিধিমালা সংশোধন করা হবে। ‘কার্যকর, নিরাপদ ও মানসম্পন্ন’ ওষুধের সহজলভ্যতা এবং ওষুধের যৌক্তিক ও নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সব ওষুধ নিবন্ধন করতে হবে। এছাড়া নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ প্রস্তুত, বিক্রি ও বিতরণ রোধসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে নীতিতে বিস্তারিত বলা রয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান। তিনি বলেন, ওষুধ নির্বাচন, পরিমাণ নির্ধারণ, ওষুধ সংগ্রহ, মুজদ ও বিতরণ; ওষুধের বিজ্ঞাপন ও প্রচার নিয়ন্ত্রণ, স্বচ্ছ ও যৌক্তিকভাবে ওষুধের মূল্য নির্ধারণ, দেশে নতুন প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞান স্থানান্তর, ওষুধ গবেষণা উন্নয়নে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার বিষয়েও নীতিতে বলা হয়েছে। সরকার জনস্বার্থ বিবেচনা করে ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা নিয়মিত হালনাগাদ করবে জানিয়ে শফিউল বলেন, প্রতিবছর অন্তত একবার ওষুধের মূল্য তালিকা হালনাগাদ করে জনগণের অবগতির জন্য সব ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের ওয়েবসাইটে খুচরা মূল্য প্রকাশ করা হবে। কেউ ওষুধের অতিরিক্ত দাম নিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। দক্ষতা উন্নয়নে কর্তৃপক্ষ গঠন ॥ দক্ষতা উন্নয়নে একটি তহবিলের সঙ্গে কর্তৃপক্ষ গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। সচিবালয়ে সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিল’ ও ‘ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনএসডিএ)’ গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, দক্ষতা উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে অতিরিক্ত অর্থায়ন নিশ্চিত করতে অর্থ বিভাগের অধীনে ‘জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিল’ গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে মন্ত্রিসভা দক্ষতা উন্নয়ন সংক্রান্ত সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে ‘ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবও অনুমোদন দিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি গঠনের জন্য আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আইনের খসড়া প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। বৈঠকে দক্ষতা উন্নয়ন সংক্রান্ত সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে ‘মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগ/দক্ষতা উন্নয়ন বিভাগ’ বা ‘ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ গঠনের প্রস্তাব এনেছিল অর্থ বিভাগ। মন্ত্রিসভা বিভাগ গঠনের বিষয়টি বাতিল করে দেয়। তহবিল গঠনের বিষয়ে শফিউল আলম বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতায় একটা প্রজেক্ট আছে। শুরুর দিকে সেই প্রজেক্ট থেকে অর্থায়ন করা হবে। পরে আরও ডেভেলপ করা হবে। এখানে অনেক সোর্স থেকে অর্থ আসার সুযোগ আছে। কস্ট এ্যাকাউন্ট্যান্টের নামে প্রতারণায় শাস্তি বাড়ছে ॥ কস্ট এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এ্যাকাউন্ট্যান্টের নামে প্রতারণায় শাস্তি বাড়ছে। শাস্তি বৃদ্ধি করে ‘কস্ট এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এ্যাকাউন্ট্যান্টস আইন-২০১৬’ খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কস্ট এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এ্যাকাউন্ট্যান্টসদের’ জন্য যে প্রতিষ্ঠান আছে আইসিএমএবি (দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) ১৯৭৭ সালের কস্ট এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এ্যাকাউন্ট্যান্টস অধ্যাদেশের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এ আইন আরও কয়েকবার সংশোধন হয়েছে। এটা সামরিক শাসনামলের আইন হওয়ায় এটি সংশোধনের মাধ্যমে নতুন করে আইনে পরিণত করার বাধ্যবাধকতা আছে। মূলত আগের আইনটিকেই যথাসম্ভব রেখে সময়ের প্রয়োজনে সংশোধন করা হয়েছে। আইনে নতুন তিনটি ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এতে ‘রিপোর্টিং কাউন্সিলের তত্ত্বাবধান ও সদস্যদের মানদ- প্রতিপালন সংক্রান্ত ত্রুটি এবং ইংরেজীতে অনুদিত পাঠÑ এ তিনটি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, কিছু সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। আইনে মূলত কোন বড় পরিবর্তন আনা হয়নি, শাস্তি বাড়ানো হয়েছে। প্রতারণামূলকভাবে ইনস্টিটিউটের (আইসিএমএবি) সদস্য দাবি করলে বর্তমান আইনে ৬ মাসের কারাদ- ও ১ থেকে ৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে। এখন অর্থদ-টা যেটা ৫ হাজার টাকা ছিল তা ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে। কারাদ- ৬ মাসই আছে। ‘আইসিএমএবি’র নাম ব্যবহারের শাস্তি প্রথম দফায় ৫০ হাজার পর্যন্ত অর্থদ-, পরে আবার একই অপরাধ করলে এক লাখ পর্যন্ত অর্থদ- হতে পারে। এক্ষেত্রে বর্তমান আইনে জরিমানা ১ থেকে ৫ হাজার টাকা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যথাযথ যোগ্যতা ও সনদ না থাকলে কেউ এ পেশায় (কস্ট এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এ্যাকাউন্ট্যান্ট) লিপ্ত হতে পারবেন না। যদি হন প্রথম দফায় ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা, পরবর্তী সময়ে প্রতিবার দ-িত হওয়ার ক্ষেত্রে এক লাখ পর্যন্ত অর্থদ-। এক্ষেত্রে আগে ছিল এক থেকে ৫ হাজার টাকা। অযোগ্য ব্যক্তিদের দলিলে স্বাক্ষরের শাস্তি প্রথম দফায় ৫০ হাজার টাকা। পরবর্তী প্রতিবারের জন্য এক লাখ টাকা। আগে ছিল প্রথম দফায় এক হাজার টাকা পরবর্তী সময়ে ৫ হাজার টাকা। নজরুল ইনস্টিটিউট আইন অনুমোদন ॥ ‘নজরুল ইনস্টিটিউট আইন-২০১৬’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এতদিন ধরে নজরুল ইনস্টিটিউট ১৯৮৪ সালের অধ্যাদেশ অর্থাৎ মার্শাল ল’ আমলের আইন দিয়েই চলে আসছে। সুপ্রীমকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আইনটি পুনর্বিন্যাস করে আনা হয়েছে। আগের আইনের সঙ্গে তেমন কোন বড় পার্থক্য নেই। ছোট ছোট কয়েকটি বিষয় সংযোজন করা হয়েছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন ॥ মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন-২০১৬’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। শফিউল আলম বলেন, মূলত ১৯৭৪ সালে ‘দ্য বাংলাদেশ স্পোর্টস কাউন্সিল এ্যাক্ট’ গঠিত হয়। এরপর এর পাঁচটি সংশোধন হয়। সংশোধনগুলো মূলত মার্শল ল’ আমলের। এজন্য এটিকে পুনর্বিন্যাস করে নতুন আইনে রূপান্তর করা হয়েছে। এতে বড় কোন পরিবর্তন আনা হয়নি, আগের আইনটি বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যান হবেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী যিনি দায়িত্ব থাকবেন তিনিই।
×