ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

লেনদেনে প্রতারণা ঠেকাতে একযোগে কাজ করার আহ্বান গবর্নরের

ব্যাংকিং লাইসেন্স পাবে না মোবাইল অপারেটররা

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬

ব্যাংকিং লাইসেন্স পাবে না মোবাইল অপারেটররা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সন্ত্রাসে অর্থায়ন করা সহজ। কিন্তু তফসিলি ব্যাংকগুলোকে কঠোরভাবে মনিটর করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে সন্ত্রাসে অর্থায়নের সুযোগ থাকে না। অন্যদিকে গ্রামীণফোন, বাংলালিংকসহ অন্যান্য মোবাইল অপারেটরের ক্ষেত্রে এ মনিটরিং কঠিন। তাই এই মুহূর্তে মোবাইল অপারেটরদের ব্যাংকিং সেবার লাইসেন্স দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বাংলদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এসকে সুর চৌধুরী। সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘সার্ক ফাইন্যান্স সেমিনার অন ইমপেক্টস অব মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস ইন দ্য সার্ক রিজিওন’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগ এ সেমিনারের আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির বলেন, প্রযুক্তির উৎকর্ষতা দিন দিন বাড়ছে। এ সময়ে মোবাইল মানি অর্থপাচারের বড় হাতিয়ার হতে পারে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে আর্থিক জালিয়াতি ও প্রতারণা। এটি প্রতিরোধে মোবাইল ফিন্যান্সসিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর আবু হেনা মোঃ রাজি হাসানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গবর্নর এসকে সুর চৌধুরী। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বাকী খলিলি। সেমিনারে অর্থনীতিবিদ, বিভিন্নœ বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা ও দেশী-বিদেশী মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। দিনব্যাপী এ সেমিনারে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তা ও উপস্থিত অংশ গ্রহণকারীরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অতিরিক্ত খরচ ও বিকাশের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিন-চতুর্থাংশ লেনদেন সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। তারা আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্তৃত্ব কি সে ব্যাপারেও জানতে চায়। তারা বলেন, ২৫টি বাণিজ্যিক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক মোবাইল ফাইন্যান্সিংয়ের লাইসেন্স নিলেও কাজ শুরু করেছে মাত্র ১৮টি। তার মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান মোট লেনদেনের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সম্পন্ন করার বিষয়টি ‘লেভেল প্লেইং’ মাঠের অভাব বলেন জানান। এর জবাবে মোবাইল ফাইন্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে সমান অধিকার বিদ্যমান বলে উল্লেখ করেন অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক অধ্যাপক বাকী খলিলি। তিনি বলেন, বিকাশের ব্যবসায়িক কৌশল, ব্র্যান্ডিং, অবকাঠামো ও উন্নত নেটওয়ার্কের অন্যদের চেয়ে ভালো। তিনি বলেন, একই স্থান থেকে অন্য স্থানে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে হাতে হাতে পাঠানো বা নিজে বহন করার চেয়ে কম খরচ ও কম সময়ে লেনদেন হচ্ছে। মোবাইল ফাইন্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে খরচ কম হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এসব কারণেই মোবাইল ফাইন্যান্সিংয়ের অধিকাংশ ব্যবসা একটি প্রতিষ্ঠান সম্পন্ন করছে। তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, যেসব অঞ্চলের যাতায়াত সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল সেখানে বেশি মোবাইল ফাইন্যান্সিং হচ্ছে। বরিশালের ৪৩ শতাংশ মানুষ মোবাইল ফাইন্যান্সিং করছে বলেও তিনি জানান। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ও প্রণোদনা মোবাইল ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন করা উচিত। মোবাইল ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সহযোগিতা দ্রুত ও প্রণোদনা অর্থবহ, কার্যকর ও অপচয়রোধ করা সম্ভব বলেও তিনি মত দেন। গবর্নর তার বক্তব্যে বলেন, প্রযুক্তির উৎকর্ষতা দিন দিন বাড়ছে। এ সময়ে মোবাইল মানি অর্থপাচারের বড় হাতিয়ার হতে পারে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে আর্থিক জালিয়াতি ও প্রতারণা। এটি প্রতিরোধে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। এ সময় বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহকদের তথ্য তুলে ধরেন গবর্নর। তিনি বলেন, ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ায় এ খাতে ১০ কোটি ২০ লাখ গ্রাহক আছে। যার মাত্র ২৫ শতাংশ সক্রিয়। আর বাংলাদেশে লাইসেন্সপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৮টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিয়ে আসছে। বর্তমানে দেশে ১৩ কোটি মোবাইল ফোন গ্রাহক আছে। এর মধ্যে মাত্র ৩ কোটি ৯০ লাখ গ্রাহক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নিচ্ছে। সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি গাইড লাইন প্রণয়ন করেছে বলে জানান তিনি। এসকে সুর চৌধুরী বলেন, বর্তমানে দেশে ৫৬টি তফসিলি ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি ব্যাংককে মোবাইল ফ্যাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৮টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাচ্ছে। তাদের এ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু মোবাইল অপারেটরদের নিয়ন্ত্রণ করে বিটিআরসি। তাই মোবাইল অপারেটরগুলো ব্যাংকিং কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয়া হবে না। মোবাইল অপারেটরদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অনুমতি দেয়ার পর তাদের কাজে অনিয়ম হলে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু করার থাকবে না। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকগুলোর ভাল-মন্দ দেখা আমাদের দায়িত্ব। মোবাইল অপারেটরদের ব্যাংকিং সেবার অনুমতি দেয়ার আগে আমাদের ব্যাংকগুলোর স্বার্থ দেখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ডেপুটি গবর্নর বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সন্ত্রাসে অর্থায়ন করা সহজ। কিন্তু তফসিলি ব্যাংকগুলোকে কঠোরভাবে মনিটর করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে সন্ত্রাসে অর্থায়নের সুযোগ থাকে না। অন্যদিকে গ্রামীণফোন, বাংলালিংকসহ অন্যান্য মোবাইল অপারেটরের ক্ষেত্রে এ মনিটরিং কঠিন। তাই এই মুহূর্তে মোবাইল অপারেটরদের ব্যাংকিং সেবার লাইসেন্স দেয়া হবে না। সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে ৬৮৯ দশমিক ৭৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়; যা ৬ লাখ ৭১ হাজার এজেন্ট দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। আর্থিক লেনদেনে ঝুঁকি এড়ানো সব সময়ের জন্য চ্যালেঞ্জ বলে তিনি মনে করেন।
×