ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ল্যারি কোলবার্নকে নিয়ে স্মৃতিচারণ

মাই লাই হত্যাযজ্ঞ থামিয়ে দেন যে মার্কিন তরুণ সেনা

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬

মাই লাই হত্যাযজ্ঞ থামিয়ে দেন যে মার্কিন তরুণ সেনা

মাই লাই হত্যাযজ্ঞ থামিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ল্যারি কোলবার্নের বয়স তখন ১৮ বছর। এই তরুণ আমেরিকান বীর তার দুই সহকর্মীকে নিয়ে থামিয়ে দেন নিরস্ত্র ভিয়েতনামী বেসামরিক গ্রামবাসীদের হত্যাকাণ্ড। ভিয়েতনামের নিভৃতপল্লী মাই লাইয়ে ১৯৬৮ সালে মার্কিন সৈন্যরা এ হত্যাযজ্ঞ ঘটায়। অদম্য সাহসী এই মার্কিন তরুণের ভূমিকার কারণেই অনেক নিরীহ ভিয়েতনামী গ্রামবাসী প্রাণে বেঁচে যান। ল্যারি কোলবার্ন গত মঙ্গলবার জর্জিয়ার ক্যান্টনে নিজবাড়িতে পরলোকগমন করেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। তার স্ত্রী লিমা জানিয়েছেন, তিনি লিভার ক্যান্সারে ভুগছিলেন। ১৯৬৮ সালের ১৬ মার্চ শনিবার ভোরবেলা। তিন সদস্যের হেলিকপ্টার ক্রু-কে মাই লাইয়ে শত্রুপক্ষের ভিয়েতকং সেনাদের অবস্থান চিহ্নিত করতে দেয়া হয়। এদের মধ্যে কোলবার্ন-ই ছিলেন তিন কপ্টার ক্রুর বেঁচে থাকা সর্বশেষ সদস্য। মাই লাইয়ে এক প্লাটুন মার্কিন সেনার দায়িত্ব ছিল ভিয়েতকং গেরিলাদের খুঁজে বের করে পাকড়াও করা। কিন্তু তারা দৃশ্যত নিরীহ গ্রামবাসীদের নির্বিচারে হত্যা করে। এ সময় তাদের বাধা দেন কোলবার্ন ও তার দুই সহকর্মী। ২০১১ সালে ভিয়েতনাম সাময়িকীতে কোলবার্ন সেদিনের ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, হেলিকপ্টারে ক্রুরা আহতদের চিহ্নিত করার জন্য ‘স্মোক ফ্লেবার’ ফেলেন। তারা ভেবেছিলেন, স্থলভাগে অবস্থান করা লোকজন তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে। তিনি বলেন, আমরা চিহ্নিত ব্যক্তিদের কাছে ফিরে এসে দেখি তারা সব মারা গেছে। অসম সাহসিকতা নিয়ে নিজ উদ্যোগে কপ্টারের পাইলট চীফ ওয়ারেন্ট অফিসার হিউ টমসন জুনিয়র নিচে নেমে আসেন। কোলবার্ন ২০১০ সালে পিবিএস প্রোগ্রামে ‘দ্য আমেরিকান এক্সপেরিয়েন্স’ নামে এক সাক্ষাতকারে সেদিনের ঘটনা স্মরণ করে বলেন, টমসন ছিল তার ঠিক পাশেই। তিনি বেতারের সামনে স্রেফ এ কথা বলেন, এটা ঠিক নয়। এরা বেসামরিক মানুষ। এখানে লোকজন বেসামরিক মানুষকে হত্যা করছে এবং তাই তিনি এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে কিছু একটা করতে চাই। তোমরা কি আমার সঙ্গে আছ? এবং আমরা বললাম ‘হ্যাঁ’। টমসন মাই লাই হত্যাযজ্ঞে অংশগ্রহণকারী প্লাটুনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট উইলিয়াম এল ক্যালির সঙ্গে তর্কবিতর্ক করেন। কিন্তু তাকে পাল্টা জবাব দেয়া হয়। অগত্যা তিনি হেলিকপ্টারটি নিয়ে মার্কিন সেনাদল ও বেঁচে থাকা গ্রামবাসীদের মাঝখানে অবস্থান নেন। এ সময় তিনি আরেকজন মার্কিন লেফটেন্যান্টের মুখোমুখি হন। টমসন কোলবার্নকে নির্দেশ দেন, গ্রামবাসীদের আরও ক্ষতির চেষ্টা যে সৈন্য করবে তাকে লক্ষ্য করে এম-৬০ মেশিনগান দিয়ে গুলি ছুড়বে। তোমরা সবাই আমাকে ঘিরে রাখ। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, এই বেজন্মারা যদি আমাকে বা এই লোকদের লক্ষ্য করে, গুলিবর্ষণ করে, তাহলে তোমরাও গুলিবর্ষণ করবে। আমাকে প্রতিশ্রুতি দাও। ‘তাই হবে বস’। জবাবে কোলবার্ন বলেন, ধারণা স্পষ্ট হয়ে গেছে। টমসন, কোলবার্ন ও কপ্টারের ক্রু চীফ গ্লেন এ্যানড্রেওটা দেখতে পান জনাদশেক গ্রামবাসী একটি হাতে তৈরি বম শেল্টারে গুটিসুঁটি মেরে বসে আছে। তারা এই গ্রামবাসীকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বের করে আনেন এবং দুটি হেলিকপ্টার গানশিপে করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান। তারা দেখতে পান, ৮ বছর বয়সী একটি শিশু মৃত মাকে আঁকড়ে ধরে আছে। উদ্ধারকারী কপ্টার থেকে শিশুটিকে ছোঁ মেরে তুলে নেয়া হয়। নিকটস্থ একটি হাসপাতালে এক নানের দায়িত্বে দেয়া হয় শিশুটিকে। এরই মধ্যে মাই লাইয়ের পাঁচ শ’ গ্রামবাসী মার্কিন সৈন্যদের গুলিতে বেঘোরে প্রাণ হারিয়েছে। কিন্তু কোলবার্ন ও তার দুই সহকর্মীর অসম সাহসিকতায় বেঁচে যায় বহু গ্রামবাসী। -নিউইয়র্ক টাইমস
×