ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর

মস্কোর সমর্থনে দিল্লীর শিরঃপীড়া

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬

মস্কোর সমর্থনে দিল্লীর শিরঃপীড়া

রাশিয়া চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) জোরালোভাবে সমর্থন করায় চরম উত্তেজনার মধ্যে পড়েছে ভারত। রাশিয়া এর নিজস্ব ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন প্রকল্পকে সিপিইসির সঙ্গে যুক্ত করার অভিপ্রায়ও ঘোষণা করেছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে রাশিয়ার অস্পষ্ট প্রকাশ্য অবস্থান ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের জন্য শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে ইসলামাবাদকে একঘরে করতে চায় ওই নীতিনির্ধারকরা। মস্কো চীনা অর্থপুষ্ট সিপিইসির বিষয়ে কোন আগ্রহ থাকার কথা ইতোপূর্বে সরকারীভাবে অস্বীকার করে। কিন্তু এখন মস্কো সিপিইসির প্রতি জোর সমর্থন ব্যক্ত করার পাশাপাশি নিজস্ব ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন প্রকল্পকে সিপিইসির সঙ্গে যুক্ত করার আগ্রহও ব্যক্ত করেছে। সিপিইসি ভারতের পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ হয়ে রয়েছে। কারণ এ করিডরটি ভারতের দাবি করা পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে গিলগিট বাল্টিস্তান অঞ্চলের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। বেজিং ভারতের উদ্বেগের প্রতি সামান্যই মনোযোগ দেখিয়েছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে আলোচনাকালে বিরোধপূর্ণ ভূখ-ে চীনের জড়িত থাকার ইস্যুটি উত্থাপন করেছিলেন। রাশিয়া গোয়াদারে চীনের নির্মিত বন্দরে প্রবেশাধিকার অর্জন করে সিপিইসির সঙ্গে নিজে যুক্ত হওয়ার অপেক্ষা করছে বলে পাকিস্তানী মিডিয়ার সংবাদকে মস্কো গত মাসে জোরালোভাবে অস্বীকার করে। খবর বেরিয়েছে, পাকিস্তানে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আলেক্সি ওয়াই দেদভ বলেছেন, তার দেশ ও পাকিস্তান সিপিইসির সঙ্গে মস্কোর ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন প্রকল্পকে যুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা করেছে। দেদভ বলেন, রাশিয়া সিপিইসি জোরালোভাবে সমর্থন করে, কারণ এটি পাকিস্তানের অর্থনীতি এবং আঞ্চলিক যোগাযোগের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। মস্কোর মিত্র আভাস রুশ-ভারত সম্পর্কে গতিধারায় অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করছে। এ সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই স্থিতিশীল হয়ে রয়েছে। সামরিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ব্রহ্মচেলানি একথা বলেন। চেলানি বলেন, মনে হয় যেন মস্কো আর ভারতকে কোন বিশ্বস্ত বন্ধুরা অংশীদার হিসেবে দেখছে না। বস্তুত আন্তর্জাতিকভাবে বিরোধপূর্ণ ভূখ-ের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া সিপিইসি সমর্থন করা এবং পাকিস্তান সমর্থিত তালেবানের সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হওয়াসহ ভারতের আঞ্চলিক বৈরীদের সঙ্গে মৈত্রী গড়তে গিয়ে রাশিয়া ভারতের মূল স্বার্থকেই চ্যালেঞ্জ করছে। ভারত রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোন ‘অধোগতি’ দেখছে না বলে সরকারীভাবে মতব্যক্ত করছে। একই সময়ে পাকিস্তান যে এ অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদের মূল উৎসই রয়ে গেছে বলে মস্কোকে বুঝাতে ভারত দৃশ্যের অন্তরালে কাজ করছে। কিন্তু রাশিয়া আফগান তালেবানকে এক জাতীয় সামরিক রাজনৈতিক আন্দোলন বলে গণ্য করছে ঘোষণা করে ভারতের জন্য আফগানিস্তানের পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তুলেছে। দৃশ্যত রাশিয়া ইসলামিক স্টেটকে পরাজিত করতে তালেবানের সঙ্গে কথা বলছে। কিন্তু দিল্লীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গত সপ্তাহে সতর্ক করে দেন যে, ভারত চায় তালেবানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হলে তালেবানকে সহিংসতা ত্যাগ করা এবং আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছেদসহ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বাধানিষেধ মেনে চলতে হবে। দেদভের মন্তব্য চলতি বছর পাকিস্তান সম্পর্কে রাশিয়ার দ্ব্যর্থক উক্তিগুলোর মধ্যে সর্বশেষ মাত্র। উরি সন্ত্রাসী হামলায় ১৯ ভারতীয় সৈন্য নিহত হওয়ার দিন কয়েক পর রাশিয়া পাকিস্তানের সঙ্গে এর প্রথম যৌথ সামরিক মহড়া অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিলে ভারত বিচলিত হয়। মহড়ার উদ্দেশ্য সন্ত্রাসবাদ দমনে পাকিস্তানকে সহায়তা করা- এ কথা বলে রাশিয়া মহড়াকে সমর্থন করে।
×