ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আবুল মাল আবদুল মুহিত

সুদীর্ঘ ষাট বছরের বিচিত্র কর্মজীবন

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬

সুদীর্ঘ ষাট বছরের বিচিত্র কর্মজীবন

কর্মজীবনের প্রথম অধ্যায় ॥ দ্বিতীয় খণ্ড ষষ্ঠ অধ্যায় দেশে ফিরে পশ্চিম পাকিস্তানে পদায়ন (গতকালের পর) আইসিএস ছাড়াও অন্য ক্যাডার থেকে যাচাই বাছাই করে কতিপয় কর্মচারীকে নিয়মিতভাবে দুটি পুলে নেওয়া হতো- একটি ছিল আইপিএস পুল আর অন্যটি ছিল ইকনমিক পুল। আইপিএস-এর সদস্যরা আসতেন আইসিএস ও কমিশনপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে এবং তারা কেন্দ্রীয় সরকার শাসিত এলাকায় (চট্টগ্রাম পার্বত্য এলাকা বা উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের পাঠান এলাকায়) প্রশাসনে নিযুক্তি পেতেন। ইসকান্দার মির্জা ছিলেন সেনা কর্মকর্তা যিনি আইপিএস পুলে ছিলেন। ইকনমিক পুলের সদস্য ছিলেন পাকিস্তানের এক সময়ের প্রধানমন্ত্রী ও প্রথম মহাসচিব চৌধুরী মোহাম্মদ আলী, পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ, পাকিস্তানের এক সময়ের বিশ্বব্যাংকে নির্বাহী পরিচালক ও পরে অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ শোয়েব। জনাব শোয়েব পরে বিশ্বব্যাংকে সহ-সভাপতি পদে নিযুক্তি পান এবং সেখান থেকেই অবসরে যান। আমি পরিকল্পনা কমিশনের দুইটি নিযুক্তির বিষয়ে ফিরে যাই। দুটিই ছিল পাবলিক সার্ভিস কমিশন নিযুক্ত দুইজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যারা বাঙালি ছিলেন বলে পরিকল্পনা কমিশন নিযুক্তি আটকে রেখেছিল। জনাব গওসুল হোসেন ছিলেন পাকিস্তান সশস্ত্রবাহিনীর শিক্ষা কোরের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তিনি সব প্রি-ক্যাডেট বা ক্যাডেট স্কুল বা কলেজের পরিচালক ছিলেন। তিনি পরিকল্পনা কমিশনে শিক্ষা প্রধান (ঈযরবভ) পদের জন্য দরখাস্ত করে কর্ম কমিশনের মনোনয়ন পান। সাইদ হাসান এই পদে নামদার খান নামক অন্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেন এবং গওসুল হোসেনকে চাকরী দিলেন না। এই বিষয়ে পার্লামেন্টে প্রশ্ন হলে সাইদ হাসানের টনক নড়লো। অন্য কেসটি ছিল প্রধান অর্থনীতিবিদের পদ। সেখানেও কর্মকমিশন মনোনয়ন দিল বাঙালী ড. রেজাউল হক খন্দকারকে। এবেলাও সাইদ হাসান এই চাকরিটি বাঙালিকে দেবেন না। তিনি এম এল কোরেশী নামের বয়স্ক প্রধান অর্থনীতিবিদকে সদস্য করে অত্যন্ত মেধাবী মাহবুবুল হককে প্রধান অর্থনীতিবিদ করতে চেয়েছিলেন। আমি দুটি সমস্যারই সমাধান পেলাম কর্মকমিশনের সহায়তায়। গওসুল হোসেন হলেন শিক্ষা প্রধান এবং জনপ্রশাসন, সমাজসেবা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি কিছু বিষয় নিয়ে হলো আলাদা এক প্রধান যার দায়িত্ব পেলেন নামদার খান। অন্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলো যে, কোরেশী সদস্য হিসেবে প্রধান অর্থনীতিবিদও হবেন। তার অধীনে থাকবেন তিনজন যুগ্মপ্রধান অর্থনীতিবিদ। তারা হলেন মাহবুবুল হক, ড. রেজাউল হক খন্দকার এবং আরেকজন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আসলেন ড. মইন বাকাই। ড. খন্দকার যোগ দিয়েই প্রেষণে কুয়েত চলে গেলেন। মাহবুব কিছুদিন জয়েন্ট চীফ হিসেবে থেকে পরে বিশ্বব্যাংকে যোগ দিলেন। আমার প্রশাসনিক দায় শেষ হলে আমি প্রোগ্রামিং বিভাগে এসে দু’টি বিষয়ে নজর দিলাম। প্রথমটি হলো বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের জন্য বরাদ্দ আর দ্বিতীয়টি হলো কতিপয় কার্যক্রম নিয়ে নিরীক্ষা। আমি তিনটি নিরীক্ষার জন্য তিনজনকে দায়িত্ব দিলাম। ড. সাত্তারের (তখনও তিনি চঐউ করেননি) নিরীক্ষার বিষয় ছিল বাণিজ্য খাতে (আন্তর্জাতিক ও দুই অঞ্চলের) সম্পদ ব্যবহার ও আয় বৈষম্যের ওপর তার প্রভাব। আজিজুল হক বলে একজন বাঙালী গবেষণা কর্মকর্তার জন্য বিষয় হলো গণপূর্ত কার্যক্রমের মূল্যায়ন। গোলাম নবী নামে সিন্ধুর একজন গবেষণা কর্মকর্তার বিষয় হলো সমবায় আন্দোলন ও কার্যক্রমের মূল্যায়ন। এই তিনটি কাজই আমি পরিকল্পনা কমিশনে থাকাকালে চূড়ান্ত হয়। চলবে...
×