ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মোশতাক অহমেদ

অভিমত ॥ ভোট নিয়ে নতুন চিন্তা

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬

অভিমত ॥ ভোট নিয়ে নতুন চিন্তা

প্রায় প্রতিদিনই সংবাদপত্রে টেলিভিশনের টক শোতে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে লেখালেখি ও আলোচনা বিতর্ক হচ্ছে। বহুদিন ধরে আমি নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে একটি প্রস্তাব পাঠকের কাছে পেশ করব বলে চিন্তা করছিলাম। সামনে নির্বাচন, তাই আমার কিছু সুচিন্তিত প্রস্তাব পেশ করছি। আশা করি, দেশের জনগণ, সুশীল সমাজ, সরকার সবাই একটু চিন্তা ভাবনা করে দেখবেন। নির্বাচন কমিশন গঠন সংবিধান অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ পাঁচজন ব্যক্তি নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ৫ জন উপযুুক্ত ব্যক্তি নির্বাচন করা কঠিন কিছু নয়, প্রত্যেক অঞ্চলে বা এলাকায় ভাল সৎ মানুষের নাম সবাই জানে। দেশের সুশীল সমাজ, যারা লেখালেখি করেন, প্রখ্যাত সাংবাদিক যারা পত্রিকায় লেখেন, টিভিতে আলোচনায় অংশ নেন, তাদের মাধ্যমেই আমরা ভাল, সৎ, সাহসী উপযুক্ত ব্যক্তিদের নাম পেতে পারি। জনগণও তাদের ব্যাপারে জানতে পারবেন। সার্চ কমিটি বা সার্চ লাইটের প্রয়োজন নেই। জনসম্মুখে প্রকাশিত সেই সব ব্যক্তির মধ্য হতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি তার এখতিয়ার বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ৫ জন কমিশনার নিযুক্ত করবেন। জনগণও জানতে পারবেন কারা নির্বাচন কমিশনের সদস্য হচ্ছে। যে ধরনের ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনে থাকতে পারেন : ১. অবসরপ্রাপ্ত হাইকোর্টের বিচারপতি বা সমপর্যায়ের সম্মানিত ব্যক্তি ২. অবসরপ্রাপ্ত উচ্চ পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা (সচিব পর্যায়ের) ৩. উচ্চ পদস্থ অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা (জেনারেল/ব্রিগেডিয়ার পর্যায়ের, মুক্তিযোদ্ধা অগ্রাধিকারযোগ্য) ৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক (ভিসি/ অধ্যাপক পর্যায়ের) ৫. সমাজের একজন সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তি (লেখক, কবি সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, পেশাজীবী)। ৫ জনের মধ্যে সর্বজনশ্রদ্ধেয় একজন মহিলা ও একজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্মানিত ব্যক্তি থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশন নিয়ে এত আলোচনার দরকার নেই। আসল আলোচনা করা উচিত নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে। যেখানে দেশের সাধারণ নাগরিক জড়িত। তাদের ভোটেই তো নির্বাচন হবে। ভোটারদের নিরাপত্তা প্রদান, সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ, গণনা, ভোটার লিস্ট তৈরি করা ইত্যাদি ব্যাপারে আলোচনা প্রয়োজন। ভোটদান পদ্ধতি সম্পর্কে আমার সুচিন্তিত প্রস্তাব পেশ করতে চাই- বাংলাদেশের প্রায় সব গ্রামেই প্রাইমারি স্কুল আছে। সেই সব স্কুলই মূলত ভোটদান কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তার আগেই অনেক পূর্ব থেকে ভোটার লিস্ট তৈরি করা হয়। আমরা জানি স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক, মাদ্রাসা-হাই স্কুলের শিক্ষকরাই গ্রামে গিয়ে ভোটার লিস্ট তৈরি করেন। প্রতি গ্রামে প্রায় ৮০০ থেকে ১৫০০ পর্যন্ত ভোটার থাকে। সব ভোটারেরই জাতীয় পরিচয় পত্র আছে, যাদের নেই তাদেরও অচিরেই দেয়া হবে। শিক্ষকরাই অত্যন্ত পরিশ্রম করে ভোটার লিস্ট তৈরি করেন। আমার বক্তব্য হলো, শিক্ষকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার লিস্ট তৈরি করতে পারলে নির্বাচনের জন্য ভোট গ্রহণ করতে পারবেন না কেন? এই শিক্ষকরাই নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করেন। ভোটের দু’এদিন পূর্বে শিক্ষকরা গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে পরিচয়পত্র দেখে নিয়ম অনুযায়ী ব্যালট পেপার স্বাক্ষর করে ভোটারদের দিয়ে দেবেন এবং ব্যালট পেপারে কিভাবে চিহ্ন দেবেন তা বুঝিয়ে দেবেন। তাতে অসুবিধা কোথায় বরং অতি সহজেই ভোটাররা নির্বিঘেœ ভোট নিতে পারবেন। ছোটবেলা থেকেই বাংলাদেশের গ্রামের শিশুরা কিশোর বা খেলার সুবাদে মাটিতে ী (ক্রস) চিহ্ন দিতে শেখে। এতে তাদের কোন অসুবিধা হয়নি। সিল দেয়ার প্রয়োজন নেই। পছন্দমতো প্রার্থীর প্রতীকে স্বচ্ছভাবে ী (ক্রস) চিহ্ন দিয়ে ভোটদান করতে পারবেন। পরের দিন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা (শিক্ষকগণ) তাদের বাড়িতে ভোটের বাক্স নিয়ে ব্যালটের (শিক্ষকগণ) তাদের বাড়িতে ভোটের বাক্স নিয়ে ব্যালটের (পূর্বের দেয়া) মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করবেন। তাদের সঙ্গে অবশ্য গার্ড বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। ভোট গ্রহণ শেষে ভোটের বাক্স সিলগালা করে নির্দিষ্ট ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসবেন। প্রার্থীদের প্রতিনিধিদের সামনে ভোট গণনা করবেন এবং ফল প্রকাশ করবেন। পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ম অনুযায়ী চূড়ান্ত ফল প্রকাশের জন্য যথাস্থানে প্রেরণ করবেন। এ ব্যাপারে বেশ কিছু আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন হবে। নির্বাচন কমিশন সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। যেমন- নির্বাচনকালীন কর্তব্যরত শিক্ষকদের ভাতা বৃদ্ধি করতে হবে। পর্যাপ্ত গার্ড/আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বাড়াতে হবে। সারা বছর নির্বাচন কমিশনের তেমন কোন কাজ থাকে না। নির্বাচনের কয়েক মাস পূর্বে স্থানীয় নেতা, কর্মী, ছাত্র-যুবকদের ওই পদ্ধতির ব্যাপারে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প করা যেতে পারে। প্রয়োজনে চরষড়ঃ স্ক্রিমের মাধ্যমে কয়েকটি গ্রামে ওই পদ্ধতিটি চালু করা যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করলে সাধারণ জনগণ, বিশেষ করে বৃদ্ধ পুরুষ, মহিলা, অসহায় পরিবার, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারবেন এবং আনন্দিত হবেন। তখন তাদের স্লোগান হবে ‘আমার ভোট আমি দিব/ ঘরে বসে ভোট দিব’ ভোটদানই সাধারণ মানুষের অন্যতম অধিকার। ভোটের মাধ্যমে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। সেই অধিকার প্রতিষ্ঠায় জনস্বার্থে কিছু অর্থ ব্যয় হবেই, তাতেই ক্ষতি কি? সরকার বিনামূল্যে বই বিতরণ যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন। বিনামূল্যে একটি কলম প্রতিটি পরিবারে বিতরণ করলে শিক্ষা ও ভোটদানে সহায়ক হবে। সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। বাংলাদেশের ৮০/৯০ ভাগ গ্রামীণ জনগণের জন্য এই পদ্ধতি। শহর এলাকার জন্য নতুন চিন্তাভাবনা করা যাবে। লেখক : সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী
×