ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চীনা ব্যবসায়ী খুন

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬

চীনা ব্যবসায়ী খুন

যশোরে চ্যাং হিং সং নামের এক চীনা ব্যবসায়ীর খুন হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক ও মর্মান্তিক। কয়েক বছর আগে ব্যবসার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে আসেন তিনি এবং স্ত্রী টোমা লাইনকে নিয়ে বসবাস করতেন ঢাকায়। তবে তার ব্যবসাস্থল ছিল যশোরে। চীন থেকে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক আমদানি করে বিক্রি করতেন সেখানে। নাজমুল নামে তার এক দোভাষী ও একান্ত সহকারী এবং মুক্তাদির নামে এক কর্মচারী ছিল। গত বুধবার রাতে নাজমুল যশোর কোতোয়ালি থানায় এসে চীনা নাগরিক নিখোঁজ হওয়ার খবর জানালে পুলিশ সন্দেহবশত তাকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে নাজমুলের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে আটক করা হয় মুক্তাদিরকেও। পরে উপশহরে ইজিবাইক রাখার একটি গুদাম থেকে উদ্ধার করা হয় চীনা ব্যবসায়ীর লাশ। উদ্ধারকৃত লাশের গলায় ফাঁস লাগানো ও পা বাঁধা ছিল। রড দিয়ে পিটিয়ে এবং শ্বাসরোধ করে চীনা ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা। পুলিশ এও বলেছে যে, পরিকল্পিত এই হত্যাকা-টি অর্থ আত্মসাতকে কেন্দ্র করে ঘটে থাকতে পারে। সর্বশেষ, হত্যায় জড়িত থাকার দায় স্বীকার করে নাজমুল ও মুক্তাদির আদালতে জবানবন্দী দেয়ায় এই দু’জনকে আসামি করে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে কোতোয়ালি থানায়। চীনা নাগরিক চ্যাং হিং সংয়ের লাশ শুক্রবার হস্তান্তর করা হয়েছে তাঁর স্ত্রী টোমা লাইনের কাছে। এ সময় ঢাকায় চীনা দূতাবাসে কর্মরত তিন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। হত্যার ধরন ও মোটিভ যা-ই হোক না কেন, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দানকারী দু’জন আসামির বাইরে আরও কোন ব্যক্তি বা পক্ষ এর পেছনে জড়িত আছে কিনা, তা গভীরভাবে তদন্ত করে দেখতে হবে থানা-পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাকে। চীনা ব্যবসায়ী হত্যার ঘটনাটি যেন কোন অবস্থাতেই দু’দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং নিবিড় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনরকম নেতিবাচক প্রভাব না ফেলতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে তদন্ত সংস্থাসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে। বাংলাদেশ এবং উপমহাদেশেরও বটে নাগরিকদের সহৃদয় ও অতিথিপরায়ণ হিসেবে সুখ্যাতি রয়েছে বিশ্বজোড়া। সত্যি বলতে কি, প্রায় আবহমানকাল ধরেই তা চলে এসেছে। তবে গত কয়েক বছরে তা হোঁচট খেয়েছে নিদারুণভাবে। রাজনৈতিক ডামাডোল ও অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকজন বিদেশী নাগরিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৫ সালে উত্তরায় ৩৫ বছর বয়সী হিরোশি মিয়েতা নাম্নী এক জাপানী মহিলাকে হত্যা করা হয়। ধারণা করা হয় এই হত্যার পেছনে রয়েছে তার ব্যবসায়িক অংশীদাররা। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ গুলশানে খুন হন ইতালীয় নাগরিক তাবেলা সিজার। ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর রংপুরে খুন হন জাপানী নাগরিক কুনিও হোশি। সর্বশেষ ১ জুলাই ২০১৬ তারিখে গুলশানের হলি আর্টিজানে ভয়াবহ জঙ্গী সন্ত্রাসী হামলায় খুন করা হয় বেশ কয়েকজন জাপানী, ইতালীয় ও ভারতীয় নাগরিককে। তারা সবাই ব্যবসা ও বিনিয়োগের উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশে। এসব নির্মম নৃশংস ভয়াবহ হত্যাকা-ের পেছনে জঙ্গী সন্ত্রাসী হামলা অথবা অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিল করা- যা-ই থাকুক না কেন, তা যে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ভয়াবহভাবে ক্ষুণœ করেছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অবশ্য প্রতিটি ক্ষেত্রেই ত্বরিত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আসামিদের গ্রেফতারসহ বিচারও চলমান। এর পাশাপাশি গুলশান ভিভিআইপি জোনসহ সর্বত্র জোরদার করা হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। জাপানসহ যে বা যারা দেশ থেকে কার্যক্রম প্রায় গুটিয়ে নিয়েছিল, তারাও ফিরে আসতে শুরু করেছে সম্প্রতি। সুতরাং দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতিসহ উন্নয়ন কার্যক্রম সর্বদা সচল রাখতে হলে সবার আগে সর্বত্র নিশ্চিত করতে হবে নিরাপত্তা। এ বিষয়ে দেশের সর্বস্তরের নাগরিকদেরও সবিশেষ করণীয় ও দায়িত্ব রয়েছে। আমরা যশোরে চীনা ব্যবসায়ী হত্যার দ্রুত বিচারের দাবিসহ তার শোকসন্তপ্ত পরিবারকে জানাই গভীর সমবেদনা।
×