ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশের মাটিতে কঠিন চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের

নিউজিল্যান্ডে মাশরাফি মুশফিকরা

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬

নিউজিল্যান্ডে মাশরাফি মুশফিকরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার সাব্বির খান সাফিন। দল নিয়ে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে পৌঁছেই ফেসবুকের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘বাংলাদেশ দল নিরাপদেই নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে পৌঁছেছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি সিরিজের আশা করছি।’ ফেসবুকে দেয়া তার ছবি ও স্ট্যাটাসেই নিউজিল্যান্ডে পৌঁছে যাওয়ার বার্তা মিলে গেছে। সকাল সাড়ে ১০টায় অস্ট্রেলিয়া থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা বিমান ভ্রমণ শেষে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে পৌঁছায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে বাস দিয়ে ওয়াঙ্গারেইতে পৌঁছায় বাংলাদেশ। সেখানেই ডিস্টিংসানস হোটেলে ওঠে। যেখানে আপাতত থাকবে বাংলাদেশ দল। ওয়াঙ্গারেই এর কোবহাম ওভালে বৃহস্পতিবার নিউজিল্যান্ড একাদশের বিপক্ষে ৫০ ওভারের প্রস্তুতি ম্যাচটি খেলবেন মাশরাফি, মুশফিক, সাকিব, তামিমরা। তবে সারাদিনের ভ্রমণযাত্রায় ক্লান্ত ক্রিকেটাররা আজও অনুশীলনে নামবেন না। মঙ্গলবার হোটেল থেকে ১০ মিনিটেরও কম সময়ের দূরত্বে থাকা কোবহাম ওভালে অনুশীলন করবে বাংলাদেশ দল। আর মাত্র সাতদিন বাকি। এরপরই বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের চ্যালেঞ্জ শুরু হয়ে যাবে। বিদেশের মাটিতে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ভাল কিছু করে দেখানর সেই চ্যালেঞ্জ নিতেই রবিবার নিউজিল্যান্ড গেল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। ২৬ ডিসেম্বর প্রথম ওয়ানডে দিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে নামবে মাশরাফি, মুশফিক, সাকিব, তামিমরা। তিন ম্যাচের ওয়ানডে, তিন ম্যাচের টি২০ ও দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে। নিউজিল্যান্ড সফরে এ পূর্ণাঙ্গ সিরিজ শুরু হতেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিদেশের মাটিতেও ভাল করার চ্যালেঞ্জ শুরু হয়ে যাবে। বিপিএল শেষ হতেই নিউজিল্যান্ড সিরিজের জন্য প্রস্তুতি মিশন শুরু করে দিয়েছে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে নয়দিন অস্ট্রেলিয়ায় প্রস্তুতি ক্যাম্প করেছে। এবার নিউজিল্যান্ডে সাতদিন প্রস্তুতি সেরে নেবে। এরপর মূল সিরিজে খেলতে নামবে। ২৬, ২৯ ও ৩১ ডিসেম্বর যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ৩, ৬ ও ৮ জানুয়ারি যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় টি২০ ম্যাচ হবে। সবশেষে ১২ জানুয়ারি প্রথম ও ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ম্যাচটি শুরু হবে। একমাসের দীর্ঘ সফরে গেছে বাংলাদেশ দল। দেশের মাটিতে এখন দুর্দান্ত দল বাংলাদেশ। যে কোন দলকে হারিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। ২০১৪ সালের নবেম্বর থেকেই জয়ের ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে। ওয়ানডেতে তো একের পর এক জয় মিলেছে। এমনকি সিরিজ জয়ও মিলেছে। ২০১৪ সালের শেষদিকে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজ জেতা দিয়ে শুরু। এরপর ২০১৫ সালে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকেও সিরিজে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। বছরের শেষে জিম্বাবুইয়েকে আবারও সিরিজে হারিয়েছে। বছরজুড়ে শুধু দ্বিপক্ষীয় সিরিজে জয়ই মিলেছে। এমনকি ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপেও চমক জাগানিয়া পারফর্মেন্স দেখিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে। এ বছরও দেশের মাটিতে দুর্দান্ত খেলেছে। আফগানিস্তানকে সিরিজে হারানোর পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ হারলেও একটি ম্যাচে জিতেছে। তবে টেস্ট সিরিজে হারেনি বাংলাদেশ। একটি টেস্ট জিতে নিয়েছে। ইতিহাসের সেরা অর্জন তুলে নিয়েছে। দেশের মাটিতে তুখোড় দল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। কিন্তু বিদেশের মাটিতে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে দুই বছর হয়ে গেল বাংলাদেশকে কোন পরীক্ষার মধ্যে পড়তে হয়নি। এবার সেই পরীক্ষায় পড়তে হচ্ছে। কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যখন দ্বিতীয় টেস্ট জিতল বাংলাদেশ, তখন ইংল্যান্ড অলরাউন্ডার ইয়ান বোথামই যেন বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হবে সেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘সত্যিই দারুণ। বাংলাদেশ দারুণ খেলেছে। তবে আসল লড়াইটা হবে বিদেশের মাটিতে। তাদের দেশের বাইরে গিয়ে ম্যাচ জেতার অভ্যাস গড়তে হবে। এখন তাদের বিদেশের মাটিতে জিতে দেখাতে হবে। এই মুহূর্তে এটাই বাংলাদেশের জন্য অগ্নিপরীক্ষা।’ এরআগে ২০১৪ সালে সর্বশেষ বিদেশে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে খেলেছে। দুইবছর পর বিদেশের মাটিতে আবার খেলবে। এবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে। সেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে আবার ২০১০ সালের পর দ্বিপক্ষীয় সিরিজে খেলেনি বাংলাদেশ। ২০০১ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট (৫টি), ওয়ানডে (৬টি) ও টি২০ (১টি) মিলিয়ে ১২ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। সবকটিতে হারে। বড় ব্যবধানেই হার হয়। তবে এখন বাংলাদেশ আর ২০১০ সালের মতো দল নয়। এখন অনেক শক্তিশালী দল। দেশে যে টানা অর্জন মিলেছে, তা বিদেশের মাটিতেও বয়ে নিতে পারে দল। প্রাপ্তি মিলতেও পারে। গতবছর অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে ওয়ানডে বিশ্বকাপ হয়েছে। বাংলাদেশ দল তাতে ভালও খেলেছে। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের আবহাওয়ার মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। নিউজিল্যান্ডে ঠা-া একটু বেশি। সেই কন্ডিশনও মিলে গেছে। অস্ট্রেলিয়ায় বৃষ্টির মধ্যে থাকায় ঠা-া একটু বেশি লেগেছে। যে ঠা-ার সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের আবহাওয়ার মিল পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্বকাপের মতো আসরে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাই এবার সিরিজে প্রেরণা হয়ে ধরা দিতে পারে।
×