ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ইয়াসির আরাফাত সুজন

বড়দিনের ফরাসী স্যান্টনস

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬

বড়দিনের ফরাসী স্যান্টনস

স্যান্টনসের ইতিহাস এটি সত্যি, ফ্রান্সিসরা প্রথম যিশু জন্মের ওপর স্যান্টনস প্রদর্শন এবং তৈরি করে। ফ্রান্সের প্রোভাঁস শহরে যিশু জন্মের পর প্রথম সান্টস তৈরি করা হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে ১৮০৩ এ জেন- লুই লেগান প্রথম মাটির তৈরি সান্টস বিক্রয় এবং প্রদর্শন করেন। যা এখন প্রতিবছর প্রদর্শিত হয় এবং যা দ্বারা ফ্রান্স অর্থনীতিতে প্রচুর লাভবান হচ্ছে এবং বাড়ছে কর্মসংস্থান। স্যান্টনস শুরুতে বাচ্চাদের জন্য তৈরি হয়েছে কিন্তু পরবর্তীতে এটি হয়ে উঠে ফ্রান্সের এক অনন্য ঐতিহ্য। বড়দিনের উপহার হিসেবে দেয়া হয়ে থাকে স্যান্টনস। পরিবারের সকল সদস্যদের মধ্যে আদান-প্রদান হয় তা। স্যান্টনস ফ্রান্সের দেবতার নিদর্শন হিসেবে প্রতিবছরই প্রদর্শিত হচ্ছে। তবে ডিসেম্বরের দিকে এর প্রদর্শন। এর জন্য জড়ো হয়ে থাকে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা স্যান্টনস তৈরি কারকরা। যাদের মূলত স্যান্টনাস বলা হয়। এসব স্যান্টনাসরা অতীতে নিজেদের উদ্যোগে এসব স্যান্টনস তৈরি এবং বিক্রয় করত। বর্তমানে তারা এসব কাজ করে থাকে নির্দিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানের হয়ে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কারখানায় দুই ধরনের স্যান্টনস তৈরি হয়। বিশেষজ্ঞ কারিগর যারা স্যান্টনস তৈরি করে তারা অসাধারণ মনযোগের জন্য বিখ্যাত। ব্যাপক গবেষণা করে এসব সান্টনস তৈরি করা হয়। মৃত শিল্পের ওপর মনযোগ এবং নৈপুণ্য দু’য়ে মিলে প্রথমে মাটির গঠন তৈরি হয়। যা দেয়া হয় কারখানার চুলায়। পরবর্তীতে মুখের অংশ রঙের মাধ্যমে কারুকাজ করা হয় এসব স্যান্টনসে। অনেক স্যান্টনাসরা তাদের সূক্ষ্ম কারুকাজ দেখাতে তাদের কর্মশালায় বর্ষব্যাপী দর্শকদের আগমন ঘটে। কেউ কেউ গাইডসহ একটি প্যাকেজ প্রদান করে থাকে। বড়দিনের সময় এসব প্রদর্শনী পায় এক অন্য মাত্রা। তখন এসব প্রদর্শনীর সঙ্গে যুক্ত হয় জাদু প্রদর্শনী, নৃত্য এবং সঙ্গীত শিল্প। এই আয়োজনে লক্ষণীয় থাকে আঠারো শতকের পোশাকের কারুকাজ করা স্যান্টনস। অবিশ^াস্য ইতিহাস এবং কারুকাজ দু’ইয়ের সংমিশ্রণে প্রোভাঁস শহর হয়ে উঠে উৎসবময়। ফারসী বিপ্লব ও সান্টস ফারসী বিপ্লব পশ্চিমা সভ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা। যার মধ্য দিয়ে অবসান ঘটেছিল রাজতন্ত্রের এবং সূচনা হয় প্রজাতন্ত্রের আদর্শের। যার ফলে সৃষ্টি হয় এক নতুন সমাজের। ফারসী বিপ্লবের শিশুও বলা হয় স্যান্টনসকে। ওই সময় বিপ্লবের ফলে গির্জা বন্ধ ঘোষণা হয় এবং এর ফলে স্যান্টনস হয়ে উঠে উপাসনার মাধ্যম। সান্টস মেলা ফ্রান্সের প্রোভাঁস শহরে প্রতিবছর একটি সান্টাস মেলা হয়। প্রথম ১৮০৩ সালে প্রথম শুরু হয় মারসেলো শহরে। পরবর্তীতে এটি পুরো ফ্রান্সে ছড়িয়ে পড়ে। এসব মেলায় স্যান্টনসের দেহের গঠন হয় ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার এবং সর্বোচ্চ ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত। প্রত্যেক স্যান্টনাসরা তাদের নিজস্ব ডিজাইন অনুযায়ী এসব তৈরি করে থাকে। এর লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো আঠারো শতকের পোশাক। আপনি সুযোগ করে কখন এসব মেলায় যেতে পারেন। আপনাকে বেশি ভাবিয়ে তুলবে সারি সারি নিপুণ কারুকাজের তৈরি স্যান্টনস যেখানে রাস্তা, বাড়িঘর, গৃহপালিত পশু এবং আছে উৎসবের আমেজ। যা সম্পূর্ণরূপে একটি মনমুগ্ধকর গ্রামীণ প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলবে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
×