ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্যারেডে সালাম গ্রহণ মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে সম্মাননা দিলেন সাঈদীর ছেলে!

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬

প্যারেডে সালাম গ্রহণ মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে সম্মাননা দিলেন সাঈদীর ছেলে!

নিজস্ব সংবাদদাতা, পিরোজপুর, ১৮ ডিসেম্বর ॥ জেলার জিয়ানগর উপজেলায় মহান বিজয় দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী। ১৬ ডিসেম্বরে জিয়ানগরে বিজয় দিবসের প্যারেডে সালাম গ্রহণ করেন যুদ্ধাপরাধ মামলার আমৃত্যু কারাদ-প্রাপ্ত সাইদীর ছেলে জিয়ানগর উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী। এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে সম্মাননা ও পুরস্কারও তুলে দেন এই যুদ্ধাপরাধীর ছেলে। পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে সাঈদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদীও রয়েছেন। যদিও উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এর আগে তিনি কখনও স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসের প্যারেড অনুষ্ঠানে সালাম গ্রহণ বা কোন অনুষ্ঠানে থাকেননি। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরোধিতার কারণে মাসুদ সাঈদী এসব অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। কিন্তু এবারই প্রথম তার উপস্থিতির বিষয়ে কোন বিরোধিতা পরিলক্ষিত হয়নি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধীপুত্রের অতিথি হওয়া ও মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়াকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধকে অপমান বলে আখ্যায়িত করেছেন সমালোচনাকারীরা। বিজয় দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে অংশ নেয়ার ছবি নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছেন মাসুদ সাঈদী। কয়েকটি ছবিতে দেখা যায়, মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে সম্মাননা পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন তিনি। মাসুদ সাঈদী লিখেছেন, ‘মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জিয়ানগর উপজেলা কমান্ড কাউন্সিলের সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। পুরস্কার নিচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বর্তমান উপজেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা বেলায়েত হোসেন, বর্তমান উপজেলা ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বপন কুমার রায়, সাবেক কমান্ডার মাহবুবুল আলম হাওলাদার (আমার আব্বার মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী), মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার ফকির।’ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দেয়া ছাড়াও উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত বিজয় র‌্যালিতেও নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় তাকে। শুধু তাই নয়, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে উপহার দেয়া হয় বিজয়ের শুভেচ্ছা স্মারক। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানেও প্রধান অতিথি ছিলেন সাঈদী পুত্র মাসুদ সাঈদী। এ ঘটনায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে একাত্তরের শহীদ আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বিজয়ের ৪৬তম বছরের প্রথম সকাল হতবাক করেছে। রাজাকারপুত্র এবং মুক্তিযোদ্ধারা একসঙ্গে বিজয় দিবস উদযাপন করছে। আর আমরা দেখছি। কি সুন্দর সকাল হওয়ার কথা ছিল আজ, তাই না !!’ রেদওয়ান আহমদ নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হয় যেন মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, চেতনা এগুলো স্রেফ কাগুজে শব্দ... মনে হয় প্রচ- তাচ্ছিল্যের সঙ্গে কেউ পৈশাচিকভাবে হাসছে মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের উদ্দেশ্যে... মনে হয় আমরা হুদাই দেশ দেশ করে মরছি...।’ সমুদ্র সৈকত নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘রাজাকার সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদীর হাত থেকে বিজয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধারা সম্মাননা ও পুরস্কার নিয়েছেন! এর চেয়ে অপমান আর কি হতে পারে!! আসুন, আমরা লজ্জায় মরে যাই !’
×