ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আইভীর উন্নয়ন ও নৌকা দুটোই, সাখাওয়াতের শুধু ধানের শীষ

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬

আইভীর উন্নয়ন ও নৌকা দুটোই, সাখাওয়াতের শুধু ধানের শীষ

আরাফাত মুন্না/মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ রবিবার দুপুর ১টা ৩৫ মিনিট। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের হাজীগঞ্জ গুদারা ঘাটে কথা হচ্ছিল মোঃ মোতালেব নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার। ভোটের খবর জানতে চাইলে সাফ উত্তর, ‘আইভী আপাই পাস’। এক কথায় কেন এমন উত্তর? প্রশ্নের জবাবে জনালেন, ‘সাখাওয়াত সাহেব একেবারেই নতুন, ধানের শীষ মার্কা ছাড়া নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে তার অন্য কোন পরিচয় নেই। অন্যদিকে আইভী আপা পারিবারিকভাবে পরিচিত, নারায়ণগঞ্জ শহরের উন্নয়নে তার বাবা আলী আহমেদ চুনকার অনেক অবদান। আর আইভী আপাও মেয়র থাকার সময় যে উন্নয়ন করেছেন, তা নারায়ণগঞ্জবাসী আগে দেখেনি। আর নৌকা মার্কাতো আছেই।’ আরেকজন জাকির সরদার। তিনি দিনমজুর। গুদারা ঘাটের পাশের চায়ের দোকানে চা খেতে খেতে কথা হচ্ছিল তার সঙ্গে। নির্বাচনে কে পাস করবে এমন প্রশ্নে উত্তরে সরাসরি জানালেন, ‘তিন ভাগের দুই ভাগ ভোটই আইভী আপা পাইবো।’ তার এত জনপ্রিয়তা কেন প্রশ্নে উত্তরে জাকির সরদার বলেন, ‘আইভী আপা আমাগো মানুষ। উনি আমাগো জন্য কাম করছে।’ বিএনপি করে এমন অনেক ভোটারও সেলিনা হায়াত আইভীকেই ভোট দিবে বলে মন্তব্য জাকির সরদারের। তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার। মোঃ মোতালেবের ও জাকির সরদারের মতো একই ধরনের বক্তব্য নারায়াণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের অনেক ভোটারের। রবিবার অন্তত ২৫ জনের সঙ্গে কথা বলে একই ধরনের বক্তব্যই পাওয়া গেছে। আগামী ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এ্যাডভোকেট শাখাওয়াত হোসেন খান (ধানের শীষ)। এছাড়া অন্য আরও পাঁচ মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন- বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মাহবুবুর রহমান ইসমাইল (কোদাল), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস (হাত ঘড়ি), এলডিপির কামাল প্রধান (ছাতা), ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা এজহারুল হক (মিনার), ইসলামী আন্দোলনের মুফতি মাসুম বিল্লাহ (হাতপাখা)। ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৫৬ জন এবং সংরক্ষির ৯টি নারী ওয়ার্ডে ৩৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই সাত মেয়র প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে বড় দুই রাজনৈতিক দলের সমর্থিত প্রার্থী আইভী ও শাখাওয়াতের মধ্যেই। ভোটাররা মনে করেন এবারের নাসিক নির্বাচনে দলীয় সমর্থনের চেয়ে ব্যক্তি ইমেজই বেশি গুরুত্ব পাবে। তারা আরও মনে করেন, ভোট দেয়ার আগে ভোটাররা আইভীর তিনটি বিষয় বিবেচনা করবে। যেমন- নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে তার জনপ্রিয়তা, বিগত মেয়াদে নারায়ণগঞ্জ শহরের উন্নয়ন এবং নৌকা প্রতীক। পক্ষান্তরে বিএনপি প্রার্থী শাখাওয়াতের বিষয়ে ভোটারদের বিবেচনার বিষয় কেবল ধানের শীষ প্রতীক। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার সাইদুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, সেলিনা হায়াত আইভী আগে এই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন। অনেক কাজ করেছেন। তার ওপর জনগণের আস্থা আছে। তিনি বলেন, আর শাখাওয়াত হোসেন খান একেবারেই নতুন প্রার্থী। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির কোন পদেও তিনি নেই। একই সঙ্গে তিনি নারায়ণগঞ্জের স্থানীয়ও না। সে ক্ষেত্রে ভোটাররা তার ওপর কতটুকু আস্থা রাখতে পারবে সেটাতে ভোটের দিনই বোঝা যাবে। গত মেয়াদে আইভী নারায়ণগঞ্জে যে উন্নয়ন করেছেন সে হিসেবে তিনিই এবারও নির্বাচিত হবে বলেই মনে করছেন সাইদুল। রবিবার দুপুর ১টা ২০ মিনিটে হাজীগঞ্জ গুদারা ঘাটে কথা হয় নৌকার মাঝি মোঃ শহিদুলের সঙ্গে। নারায়ণগঞ্জের ভোটার কি-না প্রশ্নে জবাবে জানালেন ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার। মেয়র পদে নৌকা না ধান কোন প্রতীকে ভোট দিবেন, প্রশ্নে জবাবে জানালেন, ‘নৌকাও বুঝিনা, ধানও বুঝি না, যে বেশি কাম করবো হেরেই ভোট দিমু।’ শান বাঁধানো গুদারা ঘাট দেখিয়ে শহিদ বলেন, ‘এই যে দেখছেন আমাগো গুদারা ঘাট কত সুন্দর। আইভী আপা পাকা কইরা বান্দাইয়া দিছে। আমি বিএনপি করি, হের পরেও আইভী আপারেই ভোট দিমু।’ শাখাওয়াত হোসেন খানকে কেন ভোট দিবেন না, জানতে চাইলে শহিদুল বলেন, ‘আইভী আপা ঘাটে আইলে আমাগো লগে কথা কয়। আর শাখাওয়াত সাহেবরেতো চিনিই না।’ এই ঘাটে তার মতো অনেক মাঝিই সেলিনা হায়াত আইভীকেই ভোট দেবে বলেও মন্তব্য মাঝি শহিদুলের। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার গৃহিণী ফারজানা বেগম বলেন, আসলে আমরাত বাসায় থাকি। কে কোন দল করল সেটা খুব বেশি জানি না। তবে যে আমাদের এলাকার জন্য বেশি কাজ করবে তাকেই ভোট দিব এটাই তো স্বাভাবিক। তিনি বলেন, আইভী আপা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র। প্রথম মেয়র হিসেবে উনি অনেক কাজ করেছেন। এলাকার রাস্তা ঘাট উন্নয়ন করেছেন। সিটি কর্পোরেশনের নাগরিকদের যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়া প্রয়োজন আমরা সবই পেয়েছি। তাই তার বিকল্প হয় না বললেই চলে, জানালেন গৃহিণী ফারজানা। ওসমান গনি। বয়স প্রায় ৭০। ১৯৬০ সাল থেকে আছেন নারায়ণগঞ্জে। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার একটি পুরি-সিঙ্গারার দোকান আছে তার। নাসিক নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আইভী ছাড় কারে ভোট দিমু। আইভীর বাপ আছিল পৌরসভার চেয়ারম্যান। গাড়ি দিয়া যাওয়ার সময় কোন মেতরও (পরিচ্ছন্নতা কর্মী) যদি ইশার দিতো, তাইলে গাড়ি থামাইয়া হের লগে কথা কইতো। চুনকারের (আলী আহমেদ চুনকার, আইভীর বাবা) মাইয়াও হের মতোই হইছে। সবার সমস্যা দেহে। হেরে ভোট না দিলে অন্যায় হইবো।’ শাখাওয়াত হোসেন খানের বিষয়ে ওসমান গনি বলেন, ‘ভোটের আগে হেরে কোন দিন দেহিই নাই।’
×