ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রেজা সেলিম

সংশোধিত এনজিও নিয়ন্ত্রণ আইন

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬

সংশোধিত এনজিও নিয়ন্ত্রণ আইন

জাতীয় সংসদ বাংলাদেশের বিদ্যমান বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি সংশোধনী প্রস্তাব সম্প্রতি পাস করেছে। এই আইনের সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা ও কার্যকারিতা প্রসঙ্গে এনজিওদেরই একটি মহল উচ্চকিত হয়েছে এই মর্মে যে, নতুন এ আইনে সংবিধানে প্রদত্ত মৌলিক অধিকার ‘বাকস্বাধীনতা’ খর্ব করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বাকস্বাধীনতা কি আর তা কার জন্য? কোন নিবন্ধিত সংস্থার ক্ষেত্রে তা কেমন করে প্রযোজ্য হবে? আর সেই সংস্থার হয়ে কর্তা ব্যক্তিইবা কেন আইন অমান্যকারীর সৃষ্টিছাড়া কাজ করবেন? সংবিধান হলো রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের একটি চুক্তি, যার মাধ্যমে জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। যার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সংসদ, বিচার বিভাগ ও সরকারকে। সংবিধান জনকল্যাণে প্রতিষ্ঠান গড়ার অধিকারও জনগণকে দিয়েছে; কিন্তু তা আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সমাজের হিতকর কাজের আইন ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু হয়েছে (১৮৬০ সালে), যা নানা সময় আরও নতুন নতুন আইন দিয়ে যুগোপযোগী বা পরিশীলিত করা হয়েছে। ১৯৬১ সালে আইয়ুব খানের বেসিক ডেমোক্রেসির ভিত্তি মজবুত করতে আরও একটি সমাজসেবা আইন করা হয়। কিন্তু এই দেশে বৈদেশিক অর্থে পরিচালিত বেসরকারী সংস্থার জন্য বিশেষ কোন আইন না থাকায় ১৯৭৮ সালের অধ্যাদেশে জনকল্যাণে বৈদেশিক অর্থ গ্রহণ ও খরচের (যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধানের অধীনে) সরকারের অর্থনৈতিক ও কেবিনেট বিভাগের অনুমতির মধ্যে বিদেশিক অনুদান গ্রহণ সীমাবদ্ধ ছিল। ১৯৮২ সালে এই আইনটির সংশোধন করে অপর একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে একে হালনাগাদ চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় করা হয়। প্রায় আড়াই যুগ পরে বর্তমান সরকার এই আইনের সংশোধনীর উদ্যোগ নিয়েছে আর তাতেই কোন কোন মহলের আপত্তির মুখে পড়েছে। কোন আইনের হালনাগাদ পরিশীলন একটি অতি স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু যারা এর কিছু বিষয়ে আপত্তি করছেন তাদের ব্যক্তিমানস, রাজনৈতিক অভিপ্রায়, সমাজ উন্নয়ন ও কর্ম-সৃজনে প্রত্যক্ষ অবদান এসব বিবেচনায় নিলে বুঝতে বাকি থাকে না যে, এদের অনেকেই বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে সংসদের এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। কারণ, মাঠ পর্যায়ে এদের অনেকেরই কোন কাজ নেই। বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার কাজ কি? সরকারের সকল উন্নয়ন কাজের সম্পূরক ও পরিপূরক ভূমিকা পালন করা। এ কাজে যদি কোন অসুবিধা হয়, প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় বা বাধার মুখোমুখি হতে হয়, নালিশ করার বা সহযোগিতা নেয়ার সুযোগ বিদ্যমান প্রস্তাবিত আইনে বহাল রাখা হয়েছে। এমনকি ব্যুরোর কোন আদেশের বিরুদ্ধে আলোচ্য আইনের ১৭ ধারায় সংক্ষুব্ধ এনজিওর পক্ষে আপীলের বিধান রাখা হয়েছে এবং সচিব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে ‘আপীল কর্তৃপক্ষ’ হিসেবে ঘোষণা দেয়া রয়েছে। তাহলে বিবাদ উপস্থাপনকারী উন্নয়ন নেতৃবর্গের আপত্তির ভিত্তি কি? কেউ আদেশ লঙ্ঘন বা আইনের চোখে অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণ করলে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ হিসেবে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো আইনের বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে না, তা হলে দেশে আইনের শাসনের সুযোগ থাকে কী করে? আর প্রস্তাবিত আইনের ১৫ ধারায় সুস্পষ্ট করে ৫টি উপধারা সংযুক্ত আছে, যেখানে পর্যায়ক্রমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বা ব্যবস্থা গ্রহণের সতর্ক বার্তা দেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। আমাদের উন্নয়ন জগতে গত দুই যুগে কতিপয় বেসরকারী সংস্থা, সেসব সংস্থার উচ্চাভিলাষী নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ (কোন কোন ক্ষেত্রে দাতা সংস্থার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায়) এ দেশের উন্নয়ন কাজের মূল ধারাকে ব্যাহত করে ‘ডেভেলপমেন্ট ডিসকোর্স’র লেবাস পরিয়ে প্রকৃত উন্নয়নকে বিতর্কিত করেছেন, যাদের সম্পর্কে আমাদের (এমনকি সরকারেরও) এখন সতর্ক হওয়া দরকার। দেশের মূল উন্নয়ন কাজের ১০ থেকে ১২ শতাংশ টাকা খরচ হয় এনজিওদের মাধ্যমে। এর মানে এই নয় যে, এনজিও সরকারের বিকল্প ও সরকারের কর্মসূচীকে ক্রমাগত বিতর্কিত করে দেয়াই এদের কাজ। সরকারের সম্পূরক কাজের অংশীদার হিসেবে এনজিওদের কাজ মাঠ পর্যায়ে ‘দৃশ্যমান উদ্ভাবন’ ও ‘মডেল’ নির্মাণে সীমাবদ্ধ রাখাই বেশি জরুরী। এসব কাজে জনসম্পৃক্তি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির তদারকি বাড়ানো দরকার। ঢাকায় বসে সেমিনার আর টেলিভিশনে ক্রমাগত সরকার আর রাজনীতি চর্চার বিরোধিতা করে কিছু ব্যক্তি উন্নয়ন শক্তির মেধা অপচয়ের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন, সরকারের উচিত এদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশের শ্রমশক্তির মেধা বিকাশের উন্নয়নকে সহায়তা করা। ৎবুধংধষরসধম@মসধরষ.পড়স
×