ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হাতিরঝিলে ওয়াটার ট্যাক্সি

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬

হাতিরঝিলে ওয়াটার ট্যাক্সি

প্রায় চার বছর আগে বাংলা নববর্ষে হাতিরঝিল উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘ঢাকাবাসীর জন্য এটি নববর্ষের উপহার। আমরা এ উপহার দিতে পেরে আনন্দিত।’ সত্যিই এক আনন্দকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল হাতিরঝিল। ইট-কাঠের এই নগর ঢাকায় হাতিরঝিল যেন এক টুকরো মনোরম প্রশান্তির নাম! ২০১৩ সালে উদ্বোধনের পরই রাজধানীবাসীর অন্যতম প্রধান বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয় হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ী সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতাধীন এই এলাকা, লোকমুখে যা হাতিরঝিল নামেই বেশি পরিচিত। অসহনীয় যানজট আর আকাশচুম্বী অপরিকল্পিত দালানকোঠার ভিড়ে হাঁপিয়ে ওঠা নগরবাসী নির্মল বাতাস আর খোলা আকাশের স্বাদ নিতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভিড় জমাতে থাকে হাতিরঝিলের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে। শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরে তো বটেই, দেশের বাইরেও হাতিরঝিলের রয়েছে সুখ্যাতি। যদিও বছর না ঘুরতেই হাতিরঝিলের লেকে আবর্জনা জমে পানিতে পচন ধরে। ফলে এলাকা দিয়ে চলাচলকারী ব্যক্তিদের দুর্গন্ধের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় নান্দনিকতা বিপন্ন হওয়ার দশা। সঠিক পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিরাট সঙ্কটে পতিত হয় হাতিরঝিল। এই বাস্তবতায় রাজধানীবাসী এবার বিজয় দিবসে নতুন উপহার পেলেন। সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি যাতায়াত সুগম করতে সড়ক পথে চক্রাকার বাস সার্ভিস চালুর পর রাজধানীর ফুসফুসখ্যাত হাতিরঝিল লেকে এবার চালু হলো ‘ওয়াটার ট্যাক্সি’ সার্ভিস। সড়ক পথের পাশাপাশি জলপথে যাত্রীসাধারণের সহজে চলাচল নিশ্চিত করতে ও হাতিরঝিলকে রাজধানীর বিনোদনের অন্যতম স্থান হিসেবে পরিণত করতে এই সার্ভিস চালু করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। বৃষ্টির পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের মাধ্যমে রাজধানীর একটি বড় অংশের জলাবদ্ধতা দূর করা, বৃষ্টি ও বন্যাজনিত পানি ধারণ, নগরের নান্দনিক সৌন্দর্য বাড়ানো, রাজধানীর পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সার্বিক পরিবেশের উন্নয়ন ঘটানোই ছিল হাতিরঝিল প্রকল্পের লক্ষ্য। হাতিরঝিল ও বেগুনবাড়ী খালের সঙ্গে বনানী এবং গুলশান লেকের সংযোগ দেয়া হয়। প্রকল্পটিকে ঘিরে একটি আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠার কথা থাকলেও বাস্তবে সেটি কতটুকু হয়েছে সেটি বড় প্রশ্ন। অপরদিকে যানবাহন চলাচলের জন্য প্রকল্পে চারটি সেতু, চারটি উড়াল-সড়ক, প্রায় ১৭ কিলোমিটার সড়ক, ২৬০ মিটার সেতুপথ এবং প্রায় ১২ কিলোমিটার হাঁটার পথ নির্মাণ করা হয়। এটি চালু হওয়ার ফলে ঢাকার যানজট কতটা কমেছে তা বলা মুশকিল। তবে হাতিরঝিল দিয়ে অল্প সময়ে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। ওপরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাটÑ এমন অবস্থা যেন না হয় সে জন্য দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। ময়লা পানি নিষ্কাশন এবং পরিষ্কার দুর্গন্ধমুক্ত পানির প্রবাহ সচল রাখলে এবং পুরো এলাকার পরিচ্ছন্নতা রক্ষার বিষয়টি নিয়মিতভাবে মনিটর করলেই সুফল মিলবে। টহল পুলিশ দেয়া হলেও হাতিরঝিলে যাতায়াতকারী মানুষের নিরাপত্তা এখনও হুমকির মুখে। তাই নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যা বাড়াতে হবে। অবশ্য হাতিরঝিলে চলাচলকারী ও বসবাসকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও একটি থানার অনুমোদন দেয়া হয়েছে সম্প্রতি। মোটকথা হাতিরঝিলকে প্রকৃত অর্থেই রাজধানীর নয়নাভিরাম বিনোদনস্থল হিসেবে দেখতে চাইলে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নিতে হবে এবং নিয়মিতভাবে সে সব তদারকির কাজটিও সক্রিয় রাখতে হবে।
×