ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মূল্যবৃদ্ধি যৌক্তিক নয়

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬

মূল্যবৃদ্ধি যৌক্তিক নয়

গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম আবারও বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। মূল্যবৃদ্ধির যুক্তি হিসেবে যা উপস্থাপন করা হচ্ছে, বিশ্লেষণে তা ধোপে টেকে না। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন তথা বিইআরসি গ্যাসের দাম আট থেকে দশ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। নাগরিক জীবন গ্যাস ছাড়া অচলপ্রায়। গৃহস্থালি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব ক্ষেত্রেই গ্যাস অপরিহার্য। এই অপরিহার্য সেবা পেতে আবারও অতিরিক্ত ব্যয় করতে হবে দেশের মানুষকে। ভোক্তা, ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা, রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজসহ সব পক্ষের বিরোধিতা সত্ত্বেও গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত প্রায়। কত শতাংশ দাম বাড়ানো যায়, সে হিসাব-নিকাশই এখন কষছে বিইআরসি। যে কোন দিন যে কোন সময় ঘোষণা হতে পারে কত শতাংশ বাড়ানো হলো। জ্বালানি মন্ত্রণালয় অবশ্য দ্রুত গ্যাসের দাম বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছে। তার পেট্রোবাংলা ও এর অধীন সংস্থাগুলো গড়ে ৬৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। গত আগস্ট মাসে অনুষ্ঠিত দু’দিনব্যাপী গণশুনানিতে সংস্থাগুলো মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে পারেনি। এমনিতেই পেট্রোবাংলা ও এর অধীন কোম্পানিগুলো লাভজনক প্রতিষ্ঠান। তাদের তহবিলে পঁচিশ হাজার কোটি টাকা অলস পড়ে আছে। তাই দাম বাড়ানোর প্রস্তাব যৌক্তিক হতে পারে না। হলে বিরূপ প্রভাব পড়তে বাধ্য অর্থনীতি ও জনজীবনে। গ্যাস কোম্পানিগুলো মূল্যবৃদ্ধির জন্য যুক্তি দেখায় যে, গ্যাসের দামের ওপর থেকে সরকারের শুল্ক ও কর সংগ্রহের সিদ্ধান্ত এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা বৃদ্ধি। গ্যাসের দাম থেকে বর্তমানে সরকার ৮১ শতাংশ শুল্ক ও কর হিসেবে আদায় করে। এই কর ও শুল্ক হার কমানো উচিত অর্থাৎ অর্ধেকও কমানো হলে মূল্যবৃদ্ধির প্রয়োজন পড়ে না। দুর্নীতি কমালে, সিস্টেমলস বন্ধ করাসহ নানা উপায়ে আয় বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে কোম্পানিগুলোর। তা করা গেলে জনগণকে আর বাড়তি অর্থ গুনতে হয় না। গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য অতীতেও দেখানো হয়েছে অদ্ভুত সব যুক্তি। বাসাবাড়িতে নতুন করে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখায় আবাসন খাতে বিপর্যয় দেখা দেয়। পাইপলাইন গ্যাসের ব্যবহার কর্তৃপক্ষ নিরুৎসাহিত করছেন। এমনিতেই দেশের অধিকাংশ মানুষ পাইপলাইনের গ্যাস পায় না। তারা বিকল্প হিসেবে এলপি গ্যাস ব্যবহার করে। যার দাম অনেক বেশি। পাইপের গ্যাসের দাম বাড়িয়ে সিলিন্ডার গ্যাসের সমপর্যায়ে আনার যুক্তি দুর্বল। বরং সিলিন্ডার গ্যাসের দাম কমানোই সমস্যার সমাধান। সে সুযোগ তো রয়েছেই। সরকারের বেঁধে দেয়া দামের অনেক বেশিতে সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি হলেও তা নিয়ন্ত্রণের নেই কেউ। এখন পাইপের গ্যাসের দাম বাড়ালে সিলিন্ডার গ্যাসের দাম আরও বেড়ে যাবে। বাড়বে জনযাতনা, জনদুর্ভোগ। সরকার যদি এ খাতকে রাজস্বের উৎস হিসেবে বিবেচনা না করে তাহলে যৌক্তিক মুনাফা মার্জিনসহ বাজারে কম মূল্যে গ্যাস সহজলভ্য সম্ভব। গত বছর আগস্ট মাসে সর্বশেষ গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। সে সময় সব গ্যাস কোম্পানির প্রতি ব্যয় সাশ্রয়ী নির্দেশনাসহ কমিশনের যেসব নির্দেশনা ছিল। আজও সেসব প্রতিপালন হয়নি। বিইআরসি এসব কস্মিনকালেও খতিয়ে দেখে না। বরং কোম্পানিগুলোর জনবল ও উন্নয়ন ব্যয়বৃদ্ধি এবং নানাভাবে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্ব-স্ব কোম্পানির মার্জিন বাড়ানোর জন্য মূল্য হার বৃদ্ধির প্রস্তাব আনা হয়েছে। ঘন ঘন দাম বাড়ানো গ্যাস খাতের স্থায়ী কোন সমাধান হতে পারে না। গ্যাসের দাম বাড়ানোর একটি নির্দিষ্ট কাঠামো থাকা জরুরী।
×