ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

টুটুল মাহফুজ

আগামীর বিজনেস লিডার

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬

আগামীর বিজনেস লিডার

দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষবর্ষের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘ইউনিলিভার বিজমায়েস্ত্রস’। প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ ফ্যাকাল্টির ‘টিম পটার’ চূড়ান্ত বিজয়ী হিসেবে মনোনীত হয়। ইউনিলিভার সংক্রান্ত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং কার্যক্রমের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা পাঠ্যপুস্তকের বাইরে বিজনেস এবং কর্মক্ষেত্রের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা লাভ করে যা তাদের আগামী দিনের জন্য প্রস্তুত করবে। নতুন প্রজন্মের মধ্য থেকে আগামীর প্রতিভাবান বিজনেস লিডার খুঁজে বের করাই ইউনিলিভার আয়োজিত এই প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য। দেশের অন্যতম বৃহৎ ঋগঈএ কোম্পানি ইউনিলিভারের হাত ধরে ৭ বছর আগে বিজমায়েস্ত্রসের যাত্রা শুরু হয়। ১৭ নবেম্বর ঢাকার রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে অনুষ্ঠিত হয় ইউনিলিভার আয়োজিত বিজমায়েস্ত্রসের ৭ম সিজন। এই বছর সারাদেশ থেকে ২৮৩টি টিম প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। তার মধ্য থেকে কেবল ৪টি টিম ফাইনাল রাউন্ডের জন্য উত্তীর্ণ হয়। ফাইনাল রাউন্ডের টিমগুলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে টিম পটার, চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্টেড, টিম টি কিউব এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস পক্ষ থেকে- টিম ফাটম্যান এ্যান্ড লিটেল বয়েজ। আইবিএ-এর পক্ষ থেকে মাতসুরা তাসনিম, রাকিব ইবনে এবং তানজির ইসলাম চার ধাপের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয়ী হিসেবে মনোনীত হয়। বিজয়ী টিমের তানজির ইসলাম তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন, ‘এক কথায় বলা সম্ভব না। ভার্সিটির প্রথম বছর থেকে স্বপ্ন দেখছি ‘বিজমায়েস্ত্রস’ জিতব। দীর্ঘ চার বছর ধরে নিরলসভাবে খেটেছি নিজেদের তৈরি করার জন্য। অজস্র নির্ঘুম রাতের কষ্টের ফসল হচ্ছে এই চ্যাম্পিয়ন ট্রফি। হোটেল রাডিসন ব্লু’র বল রুমে আমাদের কাজ ও আইডিয়াকে যখন দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা ভূয়সী প্রশংসা করেন। তখন মনে হয় এতদিনের কষ্ট সার্থক। বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া ২৮০ এরও বেশি টিমের ডে লং এসেসমেন্টের পর ২২ টা টিমকে বাছাই করা হয় কোয়ার্টার ফাইনালে প্রতিযোগিতার জন্য। ব্র্যান্ড ম্যানেজারের রোলে নিজেদের দেখে এই টিমগুলো অবাক হয়ে গিয়েছিল। কঠিন কিছু টাস্ক তাদের করে তুলেছিল দিশেহারা। শুধু ৬ ঘণ্টার ভেতরে তাদের ব্র্যান্ড ম্যানেজার রোলে বিজনেস এ্যানালিটিকস্ ব্যাখ্যা করে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়। তাদের দেয়া প্রেজেন্টেশনের ভিত্তিতে টিমগুলোকে ইউনিলিভারের বিভিন্ন বিজনেস ম্যানেজাররা মূল্যায়ন করেন। প্রেজেন্টেশনের পর কেবল ১০টা টিম সেমি ফাইনাল রাউন্ডে অংশগ্রহণের জন্য মনোনীত হয়। বিজয়ী টিমের আর এক সদস্য মাসতুরা তাসনিম বলেন, ‘অসাধারণ অনভূতি ছিল। এত কিছু শেখার সুযোগ পাব ভাবতে পারিনি। ভবিষ্যত জীবনে এই শিক্ষাগুলো অনেক কাজে আসবে।’ সেমি-ফাইনালিস্টদের ইউনিলিভারের হেড অফিসে ডাকা হয় যেখানে একটা ব্রিফিং সেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রতিযোগীদের তাদের পরবর্তী টাস্ক সম্পর্কে ব্রিফ দেয়া হয়। সেমিফাইনাল রাউন্ডটা ছিল ‘মার্কেট ভিজিট’। এই রাউন্ডটা সবার বেশ পছন্দের ছিল। সেমি-ফাইনাল রাউন্ডে প্রতিযোগীদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল স্পেসিফিক মার্কেট খুঁজে বের করা। সেখানকার সেøায়েস্ট মুভিং প্রোডাক্টটি খুঁজে বের করা এবং নতুন আইডিয়া বের করা যে কীভাবে ওই প্রোডাক্টের ভিজিবিলিটি আরও বাড়ানো যায়। প্রতিযোগীদের হাতে সময় ছিল মাত্র ২ দিন। আর এই দুই দিনে মার্কেট সার্ভে করে তৃতীয় দিন। একটি প্রেজেন্টেশন প্রেজেন্ট করতে হয় দলগুলোকে। ইউনিলিভার হেড অফিসে ২০ মিনিটের সে প্রেজেন্টেশনের ভিত্তিতে ১০টা টিমের মধ্য থেকে ৪টি ফাইনালিস্ট টিম বাছাই করা হয়। ফাইনালের দিন এই প্রতিযোগীরা তাদের এক্সেপশনাল ক্রিয়েটিভিটি আর এক্সট্রা অরডিনারি প্রেজেন্টেশন স্কিল দেখিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয় ফলে বাছাই পর্ব বিচারকদের জন্য আরও কঠিন হয়ে যায়। গ্র্যান্ড ফিনালে প্রোগ্রাম শুরু হয় ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর কামরান বাকেরের ওয়েল্কামিং স্পিচ দিয়ে। এই বক্তব্যে তিনি দেশের প্রতিভাবান তরুণদের উদ্বুদ্ধ করেন এবং প্রতিযোগিতামূলকভাবে গ্লোবাল প্লাটফর্মে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেন। ৪ টিমই যখন তাদের নির্ধারিত টাস্কের ওপর সমানভাবে ইম্প্রেসিভ প্রেজেন্টেশন দিল তখন সবার মধ্যে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছিল। প্রায় ৩০ মিনিট পর বিচারকরা বিজয়ী দল ঘোষণা করে। সেকেন্ড রানার আপ-টিম টি কিউব, চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্টেড ফার্স্ট রানার আপ এবং টিম পটার বিজয়ী দল নির্বাচিত হয়। এই ইভেন্টে বিচারক হিসেবে ছিলেন ইউনিলিভার বাংলাদেশের ম্যানেজিং কমিটি। অর্থাৎ- ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর জনাব কামরান বাকের, সাপ্লাই চেইন ডিরেক্টর জনাব আমিনুর রহমান, জাহিদ মালিটা, ফিনান্স ডিরেক্টর এবং হিউম্যান রিসোর্স ডিরেক্টর কুনাল শর্মা। ইভেন্টে আরও ছিলেন মিডিয়া ইস্টিম ফ্যাকাল্টিস, মিডিয়া পারসোনালস এবং অংশগ্রহণকৃত ভার্সিটিগুলো। আগামী মে ২০১৭ তে লন্ডনে অনুষ্ঠিত হবে ‘ইউনিলিভার ফিউচার লিডারস লীগ’ নামে গ্লোবাল বিজনেস কম্পিটিশন। যেখানে আইবিএর এই বিজয়ী দল বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে।
×