ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মিজানুর রহমান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাপান স্টাডি সেন্টার ॥ বাংলাদেশে একখ- জাপান

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাপান স্টাডি সেন্টার ॥ বাংলাদেশে একখ- জাপান

ভবনের দেয়ালে ছোট ছোট খোপ তৈরি করে বসিয়ে দেয়া হয়েছে কাচ নির্মিত জাপানি কাঞ্জি লিপির নকশা। ছাদের সঙ্গে ঝুলছে ঐতিহ্যবাহী জাপানী লণ্ঠন। কক্ষগুলোর ভেতরের প্রতিটি দেয়ালেই ঝুলছে জাপানী চিত্রশিল্পীদের আঁকা ছোট-বড় চিত্রকর্ম, জাপানের ম্যাপ এবং জাপানের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক বই সংবলিত সেমিনার লাইব্রেরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী কলা ভবনে প্রতিষ্ঠিত ‘জাপান স্টাডি সেন্টার’-এর চিত্র এটা। সেন্টারে অভ্যাগতদের কাছে এটি মিনি জাপান হিসেবেই পরিচিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই অকৃত্রিম বন্ধু এবং অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র জাপানের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ে গবেষণার উদ্দেশ্যে ১৯৯৪ সালে জাপান স্টাডি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০০২ সাল থেকে এই সেন্টার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ‘জাপানিজ স্টাডিজ’ বিষয়ে পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপোমা কোর্স চালু করে। এই কোর্সকে পরিবর্তন করে ২০০৬ সালে ‘জাপানিজ স্টাডিজ’ বিষয়ে চালু করা হয় দুই বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর কোর্স। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপান স্টাডি সেন্টারই দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান যেখানে জাপান বিষয়ে পড়ানো হয়। প্রত্যেক বছরে দুই সেশনে (জানুয়ারি-জুলাই) নির্দিষ্টসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হয় এখানে। ভর্তি হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের নৈর্ব্যত্তিক, লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। এই স্নাতকোত্তর কোর্সের নির্দিষ্ট কারিকুলামের অংশ হিসেবে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের জাপানিজ ভাষাও পড়তে হয়। বর্তমানে এই সেন্টারে পাঁচ জন পূর্ণকালীন শিক্ষক, ৩ জন রিসোর্স পার্সন এবং ১ জন খণ্ডকালীন শিক্ষক রয়েছেন। এ ছাড়া জাপানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি হিসেবে বিভিন্ন মেয়াদে সেন্টারে পড়াতে বাংলাদেশে আসেন। ২০১২ সালের ২১ জুন জাপান স্টাডি সেন্টারের পরিচালক পদে যোগদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. আবুল বারকাত (অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে)। এরপর ‘আবুল বারকাত পিস এ্যান্ড প্রোগ্রেস ফাউন্ডেশন’-এর অর্থায়নে জাপানী স্থাপত্যশৈলীর আদলে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেন্টারের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার কাজ করা হয়। ২০১৪ সালে মরিয়ম ফাউন্ডেশন লিমিটেড সেন্টারের শিক্ষার্থীদের এবং দাফতরিক কাজে ব্যবহারের জন্য কম্পিউটার, ফটোকপি মেশিন, প্রিন্টার, পিএ সিস্টেম, প্রজেক্টর, প্রজেক্টর স্ক্রিন, ল্যাপটপ, স্ক্যানার, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, ডিএসএলআর ক্যামেরা, আইপিএসসহ শিক্ষা উপকরণ প্রদান করে। প্রত্যেক বছরে জাপান সরকারের আমন্ত্রণে জাপান স্টাডি সেন্টারের দু’জন শিক্ষার্থী মনবসু বৃত্তি নিয়ে জাপানে উচ্চ শিক্ষা এবং দু’জন শিক্ষার্থী সিমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া এখানকার শিক্ষার্থী জাপান ফাউন্ডেশন এবং জাপান দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত বিভিন্ন প্রোগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করছে। জাপান ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে বিভিন্ন প্রোগ্রামে বহুসংখ্যক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক জাপান ভ্রমণ করেছে এবং বর্তমানে জাপানে অবস্থান করছেন। জাপান স্টাডি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, আমি যখন সেন্টারের দায়িত্ব নেই তখন এখানকার অবকাঠামো যথেষ্ট দুর্বল ছিল। পূর্ণকালীন শিক্ষক এবং স্পষ্ট কারিকুলামও ছিল না। ফলে নিজস্ব ফাউন্ডেশনের অর্থ খরচ করে অবকাঠামোগত সমস্যা দূর করি, যা বর্তমানে মিনি জাপান হিসেবে পরিচিত। এছাড়া পূর্ণকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া ছাড়াও একটি কারিকুলাম প্রণয়ন করা হয়েছে।
×