ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে চায় ॥ ডালিয়া নওশিন

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬

নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে চায় ॥ ডালিয়া নওশিন

স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক কণ্ঠশিল্পী ডালিয়া নওশিন। গানের ভুবনে আছেন ছোটবেলা থেকেই। সঙ্গীতের অমিয়ধারায় নিজেকে সিক্ত করার পাশাপাশি সঙ্গীতলব্ধ জ্ঞান ছড়িয়ে দিচ্ছেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে কণ্ঠ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন রনাঙ্গনে। গান গেয়ে উজ্জীবিত করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের, সংগঠিত করেছিলেন লাখ লাখ শরণার্থীসহ সাধারণ মানুষদের। তার দেখা সে সময়ের ঘটনাবলী নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়। মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতিময় দিনগুলোর কথা বলুন। ডালিয়া নওশিন ॥ আমার বয়স তখন ১৪ বছর। একাত্তরের প্রথম দিকে ঢাকাসহ উত্তপ্ত ছিল সারা দেশ। ছায়ানটের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলাম, তারা হারমনিয়াম, ঢোল নিয়ে ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় গণসঙ্গীত গাইতাম। পরে শহীদ মিনারের উল্টোদিকের মাঠে বসে গান গাইতাম। আমাদের নেতৃত্ব দিতেন সনজীদা আপা (ড. সনজীদা খাতুন), ওয়াহিদুল হক, জাহিদুর রহিম, মাহমুদুর রহমান বেনু, ইকবাল ভাই, স্বপন চৌধুরীসহ বিশিষ্টজনেরা। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শোনার পর অনেকেই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ২৫ মার্চ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ভয়াবহ নারকীয় ঘটনার অবতারণা করে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। চারিদিকে বোমার আওয়াজ, আগুনের লেলিহান শিখা দেখা যাচ্ছিল। আমরা জানালায় কালো কাপড় দিয়ে রাখতাম। খুব ভয়ে ভয়ে ২৭ মার্চ ধানম-ির বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ি। পথে দেখি অসংখ্য লাশ নিয়ে যাচ্ছে। আমি বাবা আর মা তিনজন ওয়ারীতে ফুফুর বাসায় যাই, পরে গুলশানে যাই। একটি গাড়িতে করে ২৮ মার্চ টাঙ্গাইলের করোটিয়ায় পৌঁছাই। নদীতেও অনেক লাশ দেখতে পাই। সেখানে এক মাসের মতো ছিলাম। মাঝে মাঝে পাক আর্মিরা আসলে গ্রামের মধ্যে চলে যেতাম। কুমিল্লার চান্দিয়ায় ছিলাম বেশ কয়েকদিন। এপ্রিলের দিকে গ্রামের ভেতর দিয়ে রিকশায় ময়নামতি ক্রস করে আগরতলা পৌঁছাই। সেখানো দুই দিন থাকার পর কলকাতা পৌঁছাই। কিভাবে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দিলেন? ডালিয়া নওশিন ॥ কলকাতায় পার্ক সার্কাসে একটি ভাড়া করা জরাজীর্ণ ঘরে আমরা থাকতাম। কাছেই বাংলাদেশ হাইকমিশন ছিল। কিভাবে দেশ নিজেদের দখলে আনা যায় সে বিষয়ে ওখানে অনেক মিটিং হতো। অনেক রাজনৈতিক নেতারা আসতেন। এ সময় দেখা হয়েছিল ড. সনজীদা খাতুনের সঙ্গে। সেখানে ‘বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা’ নামে একটি সংগঠন তৈরি হয়েছিল, যার নেতৃত্বে ছিলেন ওয়াহিদুল হক, সনজীদা খাতুন, জহির রায়হান, মোস্তফা মনোয়ার, ভারতের দীপেন বন্দোপাধ্যায়সহ অনেকে। আমাকে ওনারা দলে নিয়ে নিলেন। আমরা ‘রূপান্তরের গান’ নামক গীতিনাট্যে গাইতাম। পরে এর নাম হয় ‘মুক্তির গান’। আমরা এটা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় পরিবেশন করতাম। আমরা বিভিন্ন পূজা ম-পে অনুষ্ঠান করতাম। মে মাস থেকে বাইরে যাওয়া শুরু করি। ট্রাকে করে ভেতরে যেতাম। আমরা অনুষ্ঠান করতে দিল্লীতেও গিয়েছি। অক্টোবরের দিকে আমরা মুক্তাঙ্গনে অনুষ্ঠান করতাম। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গেও গান করতাম। নবেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় এভাবে গান করেছি। পরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ডাকলে তাদের সঙ্গে যুক্ত হই। স্বাধীনতার ৪৫ বছরে আপনার অনুভূতি কি? ডালিয়া নওশিন ॥ রক্তের বিনিময়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি, বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারছি, গান গাইতে পারছি এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি আছে। তবে কষ্ট লাগে যখন দেখি আমাদের মানুষ হয়ে আমাদেরই হত্যা করছে। বার বার আমাদের স্বাধীনতাকে খর্ব করার চেষ্টা হচ্ছে। নতুন প্রজন্মের ভেতর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পর্কে আপনি কি মনে করেন? ডালিয়া নওশিন ॥ নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করানোর দায়িত্ব আমাদের। তাদের ভেতর মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। তারা কিন্তু সঠিক ইতিহাস জানতে চায়। -গৌতম পাণ্ডে
×