ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিরোপায় চোখ রিয়াল মাদ্রিদের

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬

শিরোপায় চোখ রিয়াল মাদ্রিদের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ইতিহাসে জাপানের প্রথম দল হিসেবে ফাইনালে জায়গা করে নেয় কাশিমা এ্যান্টলার্স। শিরোপার ছোঁয়া পেলে নতুন ইতিহাস গড়বে এশিয়ার ক্লাবটি। তবে আজ ইয়োকোহামার ফাইনালে তাদের সামনে বড় বাধা রিয়াল মাদ্রিদ। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সরাসরি সেমিফাইনাল খেলে দারুণ জয়ে ফাইনালের টিকেট কাটে তারা। তিন বছরের মধ্যেই দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের হাতছানি রিয়াল মাদ্রিদের। ইউরোপ সেরার মুকুট পরা দলের কোচ জিনেদিন জিদান। বিশ্বের সেরা ফুটবলার রোনাল্ডো-বেনজামা-রামোসদের নিয়ে গড়া দল। একটা পরিসংখ্যান উল্লেখ করলেই তাদের শক্তিমত্তার কিছুটা জানা যাবে- এই মুহূর্তে টানা ৩৬ ম্যাচে অপরাজিত স্পেনের জায়ান্ট ক্লাবটি। তাই অনেকেরই ধারণা ফাইনালটা একপেশে খেলেই জিতবে রিয়াল। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রিয়ালের কোচ, স্বাগতিক দল হিসেবে কাশিমা এ্যান্টলার্সকে কঠিন প্রতিপক্ষ হিসেবেই দেখছেন তিনি। ফাইনালের আগে তাই শিষ্যদের সতর্ক করে দিয়ে ফরাসী কিংবদন্তি জিনেদিন জিদান সাফ বলে দিয়েছেন, ‘এটা তো অনেকটা ওদের নিজের মাঠের মতোই। ওদের হারান মোটেই সহজ হবে না।’ তার ওপর কাশিমা এ্যান্টলার্সের ডিফেন্ডার নাওমিচি উয়েদা রীতিমতো হুমকিও দিয়ে রেখেছেন প্রতিপক্ষকে। কুমির হয়ে রিয়াল মাদ্রিদকে খেয়ে ফেলতে চান তিনি। তার মতে, ‘আমি এক কুমির। কুমির যেমন তার শিকারকে টেনেহিঁচড়ে জলে নামিয়ে আনে, আমিও রিয়ালকে সেভাবে নামিয়ে আনব। সেটা বাতাসের লড়াইয়েই হোক বা মাটিতে কিংবা মুখোমুখি বল দখলের জন্য।’ শুধু কী উয়েদাই? রিয়ালকে তো হুমকি দিয়েছেন সেমিফাইনালে গোল করা কাশিমা স্ট্রাইকার ইয়োমা সুজুকিও। তিনি বলে দিয়েছেন, ‘আমি যদি আবার গোল করতে না পারি, কেউ আমাকে মনে রাখবে না। এটা আমার স্বপ্ন, আমি রোনাল্ডোর সামনেই আবার গোল করতে চাই।’ গত মৌসুমেই রিয়ালের কোচ হিসেবে যোগ দেন জিনেদিন জিদান। এরপর থেকেই যেন বদলে যেতে শুরু করে স্পেনের জায়ান্ট ক্লাবটি। মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা জিতে তারা। এবার ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জয়ের হাতছানি জিদানের। টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে ম্যাক্সিকোর দল ‘ক্লাব আমেরিকা’র বিপক্ষে রিয়াল মাদ্রিদ ২-০ গোলে জিতে ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করে। সেই ম্যাচে রোনাল্ডোর একটি গোলও আছে। যে গোলের সৌজন্যেই ক্লাব ইতিহাসের ৫০০তম গোলের রেকর্ড গড়েন রিয়াল মাদ্রিদের পর্তুগীজ সুপারস্টার। সেমিফাইনাল শেষে সিআর সেভেনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন জিদানও। চতুর্থবারের মতো ব্যালন ডি’অর জয়ী রোনাল্ডোকে তো এবার রিয়াল মাদ্রিদের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে আখ্যায়িত করলেন স্পেনের সাবেক কোচ ভিসেন্টে ডেল বস্ক। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে রিয়ালকে শিরোপা উপহার দেবার পাশাপাশি এই প্রথম পর্তুগীজকে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি এনে দিয়েছেন তিনি। এসবই ব্যালন ডি’অর জয়ের পিছনে ভূমিকা রেখেছে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত অনেক তারকা খেলোয়াড়ের ক্লাব ছিল মাদ্রিদ। আলফ্রেডো ডি স্টেফানো থেকে শুরু করে পাঁচবার ইউরোপীয়ান কাপ বিজয়ী ফ্র্যাঙ্ক পুসকাস, লুইস ফিগো, সাবেক ব্রাজিলিয়ান তারকা রোনাল্ডো, বর্তমান কোচ জিদানসহ আরও অনেকেরই শেষ ঠিকানা ছিল রিয়াল। কিন্তু মাদ্রিদের সাবেক খেলোয়াড় ও কোচ ডেল বস্কের মতে সান্তিয়াগো বার্নাব্যু তাদের শ্রেষ্ঠ ফুটবলারকে দেখে নিচ্ছে। রোনাল্ডোকেই সর্বকালের সেরা হিসেবে এগিয়ে রেখেছেন তিনি। তার মতে, যে ল্যান্ডমার্ক রোনাল্ডো বানিয়ে রেখে যাচ্ছে তা স্পর্শ কিংবা ছাড়িয়ে যাবার কোন ক্ষমতা আদৌ কখনই কারও হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। রোনাল্ডোর সামনে আরেকটি মাইলফলকের হাতছানি। রিয়ালের হয়ে তিন বছরের মধ্যেই দ্বিতীয় আর তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় ক্লাব বিশ্বকাপের ট্রফি জয়ের মাইলফলক স্পর্শ করার হাতছানি। জাপানের এই শিরোপা জিততে মরিয়া রোনাল্ডোও। বিশ্বসেরা ক্লাবের সম্মান অর্জন করতে আর মাত্র একটি ম্যাচ জিততে হবে রিয়ালকে। ২০১৪ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন রিয়ালকেও এবার দিচ্ছে একটা রেকর্ডের হাতছানি। সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ট্রফি জেতা ক্লাব হওয়ার রেকর্ড। আপাতত ২২টি করে ট্রফি নিয়ে এ রেকর্ডটি যৌথভাবে রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সিলোনার। এর আগে ক্লাব বিশ্বকাপের ১২টি আসরের মধ্যে আটবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইউরোপের ক্লাব। বড় কোন অঘটন না ঘটলে আজও যে ইয়োকোহামার ফাইনালে রামোস-রোনাল্ডোদের হাতেই থাকছে ক্লাব বিশ্বকাপের ট্রফি তা ধরেই নেয়া যায়।
×