ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

পৌষের সন্ধ্যায় ‘মিলেছি আজ মায়ের ডাকে’

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬

পৌষের সন্ধ্যায় ‘মিলেছি আজ মায়ের ডাকে’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সম্প্রীতির বাংলাদেশে আজ হানা দিয়েছে শকুনের দল। ধর্মান্ধতার ভয়াল গ্রাস ক্ষতবিক্ষত করছে লাখো শহীদের রক্ত ঋণে পাওয়া স্বদেশকে। উগ্রপন্থায় বিশ্বাসী এই অশুভ শক্তির অপতৎপরতায় বারবার ব্যাহত হয় সোনার বাংলার অগ্রযাত্রা। আর সেই অশুভ শক্তির বিনাশে সুরের আশ্রয়ের প্রতিবাদ জানালেন কণ্ঠশিল্পীরা। অনুষ্ঠিত হলো রবিরশ্মি পরিবেশিত ‘মিলেছি আজ মায়ের ডাকে’ শীর্ষক গীতি আলেখ্য। পৌষের সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গানে গানে জানানো হলো প্রতিবাদ। সঙ্গে ছিল কবিতা আবৃত্তি। বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের দর্শনীর বিনিময়ে নিয়মিত আয়োজনের অংশ ছিল এ সঙ্গীত সন্ধ্যা। আয়োজনের শুরুতেই গাওয়া হয় স্বদেশের গান। অনেক কণ্ঠ এক সুরে গেয়ে শোনায় ‘ও আমার দেশের মাটি’ ও ‘আমরা মিলেছি আজ মায়ের ডাকে।’ এরপর দীপা ধর গেয়ে শোনান- ‘যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক।’ এছাড়াও একক কণ্ঠে গান শোনান নূর তাজমিন নীর, ফারমিন ইসলাম, উত্তম কুমার শর্মা, সুস্মিতা হোসেন, সিলভিয়া সম্মদার, শ্রেয়সী রায় প্রমুখ। তাদের পরিবেশিত গানগুলোর শিরোনাম ছিল- নিশিদিন ভরসা রাখিস, বাংলার মাটি বাংলার জল, ওগো রূপসী বাংলা মা, যদি তোর ডাক শুনে, এবার তোর মরা গাঙে ও আমি তোমাকেই দেখি। গানের ফাঁকে কবিতার দোলায়িত ছন্দে আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্মেলক কণ্ঠে গাওয়া আরও কয়েকটি গানের শিরোনাম ছিল- আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে, ও ভাই সোনার চেয়ে খাঁটি, এক সাগর রক্তে বিনিময়ে ও ধন ধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা। নদীমাতৃক জীবনের গল্পবলা চিত্রকর্ম প্রদর্শনী জলজ ॥ পাঁচ চিত্রকরের চিত্রপটে উপস্থাপিত হয়েছে জলজ জীবনের দৃশ্যকল্প। রং-তুলির আঁচড়ে মূর্ত হয়েছে নদীমাতৃক বাংলাদেশ। নগরকেন্দ্রিক জীবন বাস্তবতায় শিল্পীরা সন্ধান করেছেন জলের জীবনকে। নদীমাতৃক জীবনের গল্পবলা পাঁচ চিত্রশিল্পীর সেসব ছবি নিয়ে সাজানো হয়েছে শিল্পের আয়োজন। শনিবার থেকে ধানম-ির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে শুরু হওয়া এ প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘জলজ ২’। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হলেনÑ মোঃ আজমল উদ্দিন, বিষাণ ভক্ত, গোলাম মশিউর রহমান চৌধুরী, আল-আখির সরকার ও সাদেক আহমেদ। শনিবার সন্ধ্যায় প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট ভাস্কর অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী, শিল্পী ও স্থপতি মোস্তফা খালিদ পলাশ এবং পোশাক প্রস্তুতকারী ও রফতানিকারক সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আমাদা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার পরিচালক ব্রুনো প্লাস। নদীমাতৃক এই দেশের মানুষের জীবনযাপন জললগ্ন। অথচ নগরকেন্দ্রিক জীবনের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে আকাশমুখো হচ্ছে মানুষ। গ্রাম কিংবা শহর সবই যেন উর্ধমুখী দালানে সয়লাব। তবে সেই বাস্তবতার মাঝেও জলের অনুভব ছড়ানো সহস্র বছরের সংস্কৃতিকে উপস্থাপন করেছেন এই পাঁচ শিল্পী। ছবিগুলো শহুরে নাগরিককে মনে করিয়ে দিয়েছে নদীর কথা। ক্যানভাসের আশ্রয়ে বর্ণিত হয়েছেÑ এক সময় এই নাগরিকদেরও একটা নদী ছিল এবং যেখানে তারা সাঁতার কাটত বা যার তীরে বসে কবিতা লিখত। নদীর ধারের মাটিতেই বুনত স্বপ্নের বীজ। গোলাম মশিউরের ছবিতে আছে নদীমাতৃক জীবনের সংগ্রাম। বিষাণের ছবিতে রয়েছে জল আশ্রিত প্রকৃতির বন্দনা। আবার আখির সরকার তার ভিতরের মানুষটিকে বের করে আনার চেষ্টা করেছেন। সাদেকের ছবিতে হারানো শহরের মেলে ধরা হয়েছে আলো-ছায়ার খেলা। মোঃ আজমল উদ্দিন তার চিত্রকলায় মানুষের ভিতরের এবং বাহিরের দ্বন্দ¦ সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এ প্রদর্শনী। সোম থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং শুক্র ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে। রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। শিশু একাডেমিতে বিজয়ের ছড়া ॥ বিজয় দিবস উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি। অনুষ্ঠানের শেষ দিন শনিবার বিকেলে একাডেমির প্রশিক্ষণার্থীদের স্বরচিত ছড়া আবৃত্তি এবং আমন্ত্রিত ছড়াকারদের ছড়াপাঠের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিশু সাহিত্যিক সুকুমার বড়ুয়া, শিশু সাহিত্যিক আখতার হুসেন, শিশু সাহিত্যিক রফিকুল হক দাদুভাই। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন শিশু একাডেমির পরিচালক আনজীর লিটন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। রফিক আজাদ স্মরণে আলোচনা ও আবৃত্তি ॥ স্মরণ করা হলো সুতোর ওপারে চলে যাওয়া কবি রফিক আজাদকে। আলোচনা ও কবিতা পাঠের সম্মিলনে প্রয়াত কবিকে জানানো হলো শ্রদ্ধাঞ্জলি। শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার আর্টস মিলনায়তনে এ স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকার মানিকগঞ্জ সমিতি। অনুষ্ঠানে কবির স্মৃতিচারণ করেন কবিপতœী দিলারা হাফিজসহ দেশের বিশিষ্ট কবিরা। আলোচনায় উঠে আসে কবির জীবনের জানা-অজানা নানান অধ্যায়। বাংলা কবিতায় তার স্বাতন্ত্র্য ও অনন্য অবদানের পাশাপাশি মহান মুক্তিযুদ্ধে কবির সরাসরি অংশগ্রহণসহ নানান বিষয় উঠে আসে বক্তাদের আলোচনায়। মানিকগঞ্জ সমিতির সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি অধ্যাপক মাহফুজা খানমের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেনÑ কবি কাজী রোজী, আবু হাসান শাহরিয়ার, বিমল গুহ, শেলী সেনগুপ্তা প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন সাজু। মীরা ম-লের কণ্ঠে ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু’ গানের মাধ্যমে শুরু হয় স্মরণের এ আয়োজন। তিনি আরও পরিবেশন করেন ‘তোমার অসীমে প্রাণ মন লয়ে’। ফয়জুল আলম পাপ্পু আবৃত্তি করেন কবির বিখ্যাত কবিতা ‘চুনিয়া আমার আর্কেডিয়া’। নিমাই ম-ল আবৃত্তি করেন কবির ‘প্রতীক্ষা’ কবিতাটি। এছাড়াও কবির কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী হাসান আরিফ, শাহাদাৎ হোসেন নিপু প্রমুখ।
×