ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠানে নানা প্রতিশ্রুতি নাসিক মেয়র প্রার্থীদের

সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রচারে ব্যস্ত প্রার্থীরা

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬

সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রচারে ব্যস্ত প্রার্থীরা

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের আর মাত্র চারদিন বাকি। যতই নির্বাচনের দিন এগিয়ে আসছে, ততই মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রচারে বেশি সময় ব্যয় করছেন। সব মিলিয়ে প্রচারে ব্যাপক উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে মহানগরীজুড়ে। নারায়ণগঞ্জ শহর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দরের নির্বাচনী এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী এবং বিএনপির মেয়রপ্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। এছাড়া আইভী ও সাখাওয়াতের পক্ষে মাঠ সরগরম করে রেখেছেন কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা। প্রতিদিনই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে কেন্দ্রীয় নেতারা দলে দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ৯টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের ১৯৪ কাউন্সিলর প্রার্থীও সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রচার চালাচ্ছেন। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের আত্মীয়স্বজন, স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যারাও বিরামহীন প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মেয়র প্রার্থী আইভী সিটির ২১ ও ২২নং ওয়ার্ডে গণসংযোগকালে বলেন, আমার কাছে হিন্দু-মুসলিম সকলেই সমান, জনগণ যাকে বেছে নেয়ার বেছে নেবে। এদিকে সাখাওয়াত হোসেন খান ৪ ও ৫নং ওয়ার্ডে গণসংযোগকালে বলেন, নারায়ণগঞ্জে নির্বাচন নিয়ে উদ্দীপনা ও উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের তৃতীয় তলায় কনভেশন সেন্টারে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) আয়োজনে মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ডাঃ আইভী ও এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানসহ সাত মেয়র প্রার্থী। এ সময় মেয়র প্রার্থীরা জনগণের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। আমার কাছে হিন্দু মুসলিম সবাই সমানÑ ডাঃ আইভী ॥ ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী ২১ ও ২২নং ওয়ার্ডে গণসংযোগকালে বলেন, আমার কাছে সকল ভোটার সমান। হিন্দু মুসলিম সবাই আমার সমান। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি সেটাও আমার কাছে সমান। নাসিকের মেয়র হিসেবে সকল ব্যক্তি সমান। সুতরাং এখানে হিন্দু মুসলিম আলাদা করে দেখার কোন কিছু নেই। পার্টি হিসেবে আলাদা করে দেয়ার কিছুই নেই। কাজ করেছি জনগণের জন্য। চলমান প্রক্রিয়াগুলো অব্যাহত রাখব। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রসঙ্গে আইভী বলেন, উনি তো (সাখাওয়াত হোসেন) প্রতিদিনই আমার বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করছেন। আমি বের হই ২-৩ জন মানুষ নিয়ে। লোক যদি আমার পেছনে চলে আসে, তবে সেই ক্ষেত্রে আমার কি করার আছে? আমি কাকে তাড়াব। আপনারা নিজেরাও দেখছেন। মাঝে মাঝে আমি নিজেও সরানোর চেষ্টা করছি। জনগণ যদি নেমে আসে তবে আমারতো করার কিছু নাই। আমি আচরণবিধি মেনেই প্রচারণা চালাচ্ছি। বেলা ২টার পরে ২৭টি ওয়ার্ডে আমার মাইকও ব্যবহার করর কথা থাকলেও ব্যবহার করছি না। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যদি কিছু করে এটা আমার ওপর কেন? উনিও সমানভাবে ভোট চাচ্ছেন। আমিও সমানভাবে ভোট চাচ্ছি। জনগণ যাকে বেছে নেয়ার জনগণ তাকে বেছে নিবে। বিএনপি প্রার্থীকে হুমকি দেয়া প্রসঙ্গে আইভী বলেন, আমি কঠিন সত্যের মধ্যে দাঁড়িয়েও সত্য কথা বলি। প্রতিকূলতার মাঝে দাঁড়িয়েও আমি কখনও মিথ্যের আশ্রয় নেয়নি। আমার এমন কোন লোক নেই। আমার এমন কোন বাহিনী নেই, যে কাউকে গিয়ে হুমকি-ধমকি দিবে। এই পর্যন্ত সাখাওয়াত সাহেবকে নিজে বলেছি যদি কোন সমস্যা হয় আমাকে বলবেন আমিসহ আপনার সাথে যাব। সে যদি আমার ভাইও হয় আমার সন্তান হয় তাকে আমি আইনের হাতে তুলে দিব। নির্বাচন নিয়ে উদ্দীপনা ও উচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়েছেÑ সাখাওয়াত ॥ বিএনপির মেয়রপ্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান শনিবার ৪ ও ৫নং ওয়ার্ডে গণসংযোগকালে বলেন, নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন নিয়ে উদ্দীপনা ও উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। এই নির্বাচন যাতে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয় সেটার প্রতি সরকার ও নির্বাচন কমিশন যতœশীল হবেন সেটাই আশা করি। কিন্তু যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের যে কথা আমি বলেছিলাম সেটা আদৌও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সরকারী দলের প্রার্থী বন্দরে ও নারায়ণগঞ্জের অনেক জায়গায় বড় বড় নৌকা প্রতীক টানিয়ে রেখেছে। সেটা আচরণবিধির পুরোপুরি লঙ্ঘন। তিনি আর বলেন, নির্বাচনের দিন ভোটারা যাতে ভোট কেন্দ্র যেতে পারে তাদের কোন বাধা সৃষ্টি না হয় সেই দিকে সরকার ও নির্বাচন কমিশন খেয়াল রাখবেন। প্রশাসন ও নির্বাচনে কমিশনের প্রতি আমাদের বক্তব্য হলো সকল প্রার্থীর প্রতি সমান আচরণ করবে এবং ভোটারদের নির্বিঘেœ ভোট দিতে দিবে এটাই আশা করছি। আইভীর গণসংযোগ ॥ আইভী শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত ২১ ও ২২নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। প্রথমে আইভী ২১নং ওয়ার্ডের চৌধুরীপাড়া, বাবুপাড়া ও নোয়াদ্দা এলাকায় গিয়ে প্রচার চালান। পরে তিনি ২২নং ওয়ার্ডের রাজবাড়ী, ইলসন রোড ও র‌্যালি আবাসিক এলাকায় গিয়ে গণসংযোগ করেন। এ সময় আইভীকে সাধারণ ভোটারা ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে বরণ করে নেন। এদিকে আইভীর সমর্থনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার নেতৃত্বে বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রচার চালিয়েছে। তারা নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে লিফলেট বিলি করেন এবং নৌকার পক্ষে ভোট চান। সাখাওয়াতের গণসংযোগ ॥ সাখাওয়াত হোসেন শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৪ ও ৫নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। প্রথমে তিনি ৪নং ওয়ার্ড এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি শিমরাইল, আটি ও ওয়াপদা কলোনি এলকায় গণসংযোগ করেন। এছাড়াও তিনি ৫নং ওয়ার্ডের আজিবপুর, সরদারপাড়া, সিদ্ধিরগঞ্জ বাজার, ওমরপুর সাইলো গেট এলাকায় গণসংযোগ করেন। এদিকে ধানের শীষের প্রার্থী সাখাওয়াতের পক্ষে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদিন ফারুক ও জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানার নেতৃত্বে মহিলা দলের নেতাকর্মীরা ১নং ওয়ার্ডের হিরাঝিল, পাইনাদী মধ্যপাড়া, জুয়েল রোড, হাজীনগর, সিআইখোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তারা সাখাওয়াতের পক্ষে লিফলেট বিলি করেন। এছাড়াও ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডে সাখাওয়াতের পক্ষে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিমউদ্দিন আলম, ডাঃ দেওয়ান সালাহ উদ্দিন বাবু গণসংযোগ করেন। সবাইকে সমান সুযোগ দেয়ার আহ্বান হাফিজের ॥ নাসিক নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী সাখাওয়াতকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন এলডিপি থেকে বহিষ্কৃত মেয়রপ্রার্থী কামাল প্রধান। শনিবার দুপুরে নগরীর শায়েস্তা খান সড়কের বিএনপির মিডিয়া সেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে কামাল প্রধান বলেন, আমি নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে ধানের শীষের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেনকে সমর্থন দিলাম। আমি ও আমার দলের নেতাকর্মীরা ধানের শীষের প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য তার পক্ষে কাজ করব। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতি হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করা হোক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারী দলকে কোন সুযোগ-সুবিধা না দিয়ে সবাইকে সমান সুযোগ দেবে- এ আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা চাই, নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন একটি আদর্শ নির্বাচন হোক। মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠান ॥ শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের তৃতীয় তলার কনভেশন সেন্টারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী (নৌকা), এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন (ধানের শীষ), মাহবুবুর রহমান ইসমাইল (কোদাল), রাশেদ ফেরদৌস (হাতঘড়ি), কামাল প্রধান (ছাতা), মাওলানা এজহারুল হক (মিনার), মুফতি মাসুম বিল্লাহ (হাতপাখা)। এতে মেয়র প্রার্থী ছাড়াও নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ নাগরিকরা উপস্থিত ছিলেন। সুজনের জেলা কমিটির সভাপতি আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সুজনের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, লেখক কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডাঃ আইভী বলেন, আমি বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিতে পারব না। স্থানীয় সরকার চাইলেই সবকিছু করতে পারে না। এখানের সরকারের বিভিন্ন বিভাগ আছে যাদের নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হয়। তিনি বলেন, মেয়র হানিফ ‘সিটি গবর্নস’ এর কথা বলেছিলেন। একমাত্র এটা হলে অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়া ও বাস্তবায়ন করা সম্ভব। বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমি মেয়র নির্বাচিত হলে সিটি কর্পোরেশনকে নিয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান করব। সেই মাস্টারপ্ল্যান হবে সকল বিশেষজ্ঞ, শ্রমিক-মালিক ও জনপ্রতিনিধি নিয়ে। একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করব এবং সেই পরিষদের মাধ্যমে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে শহরকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাবো। তিনি নারায়ণগঞ্জ শহরকে গ্রীন সিটি এবং বন্ধ খালগুলো উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দেন। শহরের সঙ্গে বন্দরের বন্ধনের জন্য শীতলক্ষ্যা সেতু তৈরি করারও অঙ্গীকার করেন। গ্যাস, পানি, বিদ্যুতসহ সকল সমস্যা সমাধানেরও আশ্বাস দে তিনি। তিনি বলেন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নারায়ণগঞ্জবাসী আমরা সবাই ঐক্য গড়ে তুলব।
×