ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিরপেক্ষ ইসি গঠনের প্রস্তাব দেবেন খালেদা

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ ॥ আজ বঙ্গভবনে যাচ্ছে বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ ॥ আজ বঙ্গভবনে যাচ্ছে বিএনপি

শরীফুল ইসলাম ॥ নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের প্রত্যাশায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ করতে আজ রবিবার বঙ্গভবনে যাবে বিএনপি। পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুসারে বিকেল সাড়ে ৪টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেবে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধি দল। এ সময় নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ছাড়াও পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সরকার নিয়ে সমঝোতার প্রস্তাব দেবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। সূত্র মতে, রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের কাছে বিএনপি প্রতিনিধি দল প্রথমেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরবে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, নতুন নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ওপর ভিত্তি করে নিরপেক্ষ লোক দিয়ে করলে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে তাদের দাবি অনেকাংশে মিটে যাবে। কারণ, নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী থাকলে নির্বাচনকালে সরকারে যেই থাকুক তাদের প্রভাববলয় থেকে বাইরে থাকতে পারবে। সে ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। ভোটররাও নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে। সংলাপকালে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনার পর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটি নিয়ে দলীয় প্রস্তাব তুলে ধরবেন। পরে রাষ্ট্রপতির অনুমতি সাপেক্ষে সার্চ কমিটি গঠনের জন্য একটি নামের তালিকা তুলে ধরবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। একইভাবে রাষ্ট্রপতি আগ্রহ প্রকাশ করলে ৫ সদস্যের নির্বাচন কমিশনের একটি তালিকাও দেয়া হবে দলটির পক্ষ থেকে। জানা যায়, সার্চ কমিটির প্রধানের তালিকায় সাবেক ২ জন প্রধান বিচারপতির নাম প্রস্তাব করবেন খালেদা জিয়া। এ ছাড়া এ কমিটিতে সদস্য হিসেবে আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতি, একজন সাবেক সচিব, একজন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা, একজন সাবেক ভিসি ও একজন নারী সদস্যের নামও রাষ্ট্রপতির কাছে দেবেন খালেদা জিয়া। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপকালে এ ছাড়াও বিএনপি দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি তুলে ধরে একটি লিখিত বক্তব্য দেবেন। সেখানে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে রাজনৈতিক সমঝোতা বিশেষ করে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার জন্য রাষ্ট্রপতির সহযোগিতা চাইবেন তিনি। এ সময় তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে লিখিত বক্তব্যের কপি ছাড়াও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে ১৩ দফা প্রস্তাব তুলে দেবেন। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, পূর্বনির্ধারিত আলোচ্যসূচী অনুসারে নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপকালে খোলা মনে কথা কথা বলব। এ ছাড়াও দেশের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য সকল দলের মতামত নিয়ে একটি সমঝোতা করার প্রস্তাব দেব। বিশেষ করে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার জন্যও আমরা রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করব। শনিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে খালেদা জিয়ার দেয়া ১৩ দফার ভিত্তিতেই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা হবে। তবে এ সময় নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন ছাড়াও সকল দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। এদিকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ করতে বঙ্গভবনে যাওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও পূর্বনির্ধারিত ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আরও তিন নেতাকে যুক্ত করার চেষ্টা করছে বিএনপি। এ জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ জানিয়ে বঙ্গভবনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ সংলাপে অংশ নিতে ১৫ ডিসেম্বরই ১০ নেতার তালিকা বঙ্গভবনে পাঠিয়েছিল বিএনপি। ওই তালিকায় বিএনপি চয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নাম রয়েছে। এখন তার সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামসহ তিনজনকে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে আজ রবিবার দুপুরের মধ্যে বঙ্গভবন থেকে অনুমতি পাওয়া না গেলে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আগের তালকার ১০জনই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেবেন। এর আগে শনিবারও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সংলাপের বিষয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়া আজ রবিবার বিকেল ৩টায় গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে বেরিয়ে প্রথমে নয়া পল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হয়ে অন্য নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গভবনে যাবেন। এ সময় বিএনপি কার্যালয় ও বঙ্গভবনের আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী অবস্থান করে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাবেন। উল্লেখ্য, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে ২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। এর পর রষ্ট্রপতি স্বউদ্যোগে সার্চ কমিটি গঠন করেন। ওই সার্চ কমিটির বাছাই করা ব্যক্তিদের নিয়ে ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। বর্তমান এ নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে ৮ ফেব্রুয়ারি। এর আগেই নতুন নির্বাচন কমিন গঠন করতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। সেজন্য তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত শুনে সার্চ কমিটি গঠন করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর রাষ্ট্রপতি একটি সার্চ কমিটি গঠন করে দেবেন। এই সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ৫ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। আর এ নির্বাচন কমিশনই ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করবেন। আজ ১৮ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত করতে ১২ ডিসেম্বর বঙ্গবভন থেকে চিঠি পায় বিএনপি। এ চিঠিতে বিএনপিকে সর্বাধিক ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে ১৮ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টায় বঙ্গভবনে যেতে বলা হয়। বঙ্গভবন থেকে চিঠি পাওয়ার পরদিন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপের জন্য সুনির্দিষ্ট পয়েন্ট ও ১০ সদস্যের প্রতিনিধি ঠিক করতে খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে দলের সিনিয়র নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ১৫ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের নাম বঙ্গভবনে পৌঁছে দেয়া হয়। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ করতে এছাড়াও ২০ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টি ২১ ডিসেম্বর এলডিপি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও ২২ ডিসেম্বর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদকে বঙ্গভবনে ডাকা হয়েছে। আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য নিবন্ধিত দলগুলোকেও পর্যায়ক্রমে ডাকা হবে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনার বিষয় ও দলীয় প্রস্তাবনা ঠিক করতে ১৩ ডিসেম্বর রাতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দলের ৫ সিনিয়র নেতার সঙ্গে আড়াই ঘণ্টা বৈঠক করেন। ঐ বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ছিলেন। এ বৈঠকে বিএনপি সমর্থক বুদ্ধিজীবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ উপস্থিতি থেকে প্রয়োজনীয় কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে ১৮ নবেম্বর রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া যে ১৩ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন মূলত: তার ওপরই আলোচনা করবে বিএনপি। এ প্রস্তাবে তিনি নির্বাচন কমিশন নিয়োগে বাছাই কমিটি গঠনের রূপরেখা, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা এবং সকল দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ ১৩টি প্রস্তাব দেন। খালেদা জিয়ার দেয়া ১৩ দফা প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছাতে ২০ নবেম্বর বিএনপি চেয়ারপার্সনের একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার টেলিফোনে রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিবের সঙ্গে কথা বলেন। কোন জবাব না পেয়ে ২৩ নবেম্বর বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে রাষ্ট্রপতির সাক্ষাত চায়। এতেও সাড়া না পেয়ে ৬ ডিসেম্বর দুপুরে খালেদা জিয়ার ১৩ দফা প্রস্তাবসহ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়ে একটি চিঠি বঙ্গভবনে পৌঁছায় বিএনপির ২ জন সিনিয়র নেতা। তবে এর আগেই ওইদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাষ্ট্রপতি চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে বঙ্গবভবন ত্যাগ করেন। পরে রাষ্ট্রপতি দেশে ফেরার পর ১২ ডিসেম্বর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে বিএনপিসহ ক’টি রাজনৈতিক দলকে বঙ্গবভন থেকে চিঠি দেয়া হয়। ১৮ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার দেয়া ১৩ দফার মধ্যে ছিল- ১) ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন, ২) প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের খুঁজে বের করতে পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠন, ৩) বাছাই কমিটির আহ্বায়ক হবেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মক্ষম একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি যিনি বিতর্কিত নন এবং অবসর সময়ে সরকারের কোন লাভজনক পদে আসীন হননি, ৪) বাছাই কমিটির অন্য সদস্যরা হবেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সাবেক আমলা বা শ্রদ্ধাভাজন কোন ব্যক্তি ৫) বাছাই কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জন্য দুই জন ও চারজন নির্বাচন কমিশনারের জন্য ৮ জনের নামের তালিকা দেবেন। এই তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার জন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন ৬) নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত সকল রাজনৈতিক দল অথবা স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্যের ভিত্তিতে ইসি গঠন ৭) কমিশনে অন্তত একজন প্রবীণ মহিলা কমিশনার রাখা, ৮) নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা প্রদানের বিধান কমিশনের আরপিওতে সংযোজন, ৯) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অথবা স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক দলগুলো ২ জন করে ব্যক্তির নাম বাছাই কমিটির কাছে প্রস্তাব করবে, ১০) বাছাই কমিটিই প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন, ১১) কেউ যদি দায়িত্ব পালনে অসম্মতি প্রকাশ করে তাহলে একই প্রক্রিয়ায় পুনরায় কমিশনার নিয়োগ, ১২) প্রধান কমিশনারসহ অন্য কমিশনারদের হতে হবে দলনিরপেক্ষ, সর্বজনশ্রদ্ধেয় সৎ ব্যক্তি, ১৩) নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় গঠন। বিএনপির পক্ষ থেকে নতুন নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে বার বার রাষ্ট্রপতিকে উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হলে এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতিই সিদ্ধান্ত নেবেন কিভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানানো হয়। আর রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে রাষ্ট্রপতিও এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে আজ ১৮ ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ করতে রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় আমরা বঙ্গভবনে যাচ্ছি। সংলাপকালে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেব। এ ছাড়াও দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা তাঁর সঙ্গে খোলা মনে কথা বলব। পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে সকল দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে করা যায় এ বিষয়েও আমরা কথা বলব। রাষ্ট্রপতি আমাদের অভিভাবক, তাই আশা করছি তিনি উদ্যোগ নিলে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। এদিকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শনিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ সময় তিনি বলেন, যে নির্বাচন কমিশন সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভোটারদের উৎসাহিত করবে এবং সত্যিকার অর্থে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হবে বিএনপি এমন নির্বাচন কমিশন প্রত্যাশা করে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি এমন একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করবেন বলে সংলাপে গিয়ে বিএনপি এমন আশাবাদ ব্যক্ত করবে। তিনি বলেন, যা সমগ্র জাতি প্রত্যাশা করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ১৩ দফা প্রস্তাবে তারই প্রতিধ্বনি করেছেন। আমরা আশা করব সেই ধরনের নির্বাচন কমিশন, যে নির্বাচন কমিশনের প্রতি সকল দলের আস্থা থাকবে। সংলাপের মাধ্যমে সকল রাজনৈতিকদলের কাছে নিরপেক্ষ ও আস্থাশীল নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি উদ্যোগ নেবেন এমনটাই প্রত্যাশা করছে বিএনপি।
×