ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

১৯ নৌকা ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি

নগদ টাকা ও ত্রাণের টানে অনুপ্রবেশ করতে মরিয়া রোহিঙ্গারা

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬

নগদ টাকা ও ত্রাণের টানে অনুপ্রবেশ করতে মরিয়া রোহিঙ্গারা

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ টেকনাফ উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প-বস্তিতে নগদ টাকা ও বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণের খবর পেয়ে অনুপ্রবেশ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গারা। সরকারের অনুমতি ছাড়া এসব সামগ্রী বিতরণে ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল। মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ উৎসাহিত করতে এটি আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপের (আরএসও) কৌশল বলে ধারণা করছেন তারা। ত্রাণের টানে আসা রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। শনিবার সকালে রোহিঙ্গা বোঝাই ১৯ নৌকা ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। সূত্র জানায়, সপ্তাহ খানেক আগে বিজিবি-বিজিপি পতাকা বৈঠকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ধেয়ে আসার অভিযোগ উত্থাপন এবং রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের চাপের ফলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযান কিছুটা শিথিল হয়ে পড়ে। কমে যায় টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশও। সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নেয়া ক্যাম্পে নগদ টাকা ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের খবর ছড়িয়ে পড়ে মিয়ানমারে। এতে দলে দলে ফের রোহিঙ্গারা সীমান্তের ওপারে এসে জড়ো হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। উখিয়া-টেকনাফে নতুন করে ধেয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে আরএসওসহ কয়েকটি সংগঠনের ক্যাডাররা অপতৎপরতা চালানোর সুযোগ খুঁজছে। এসব জঙ্গী সংগঠনকে গোপনে সহায়তা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কতিপয় জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে। জানা গেছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও পুলিশের নির্যাতনে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগ বর্তমানে কুতুপালং ও নয়াপাড়া ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। আরেকটি অংশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে টেকনাফের শাপলাপুর বাহারছড়া এলাকায়। ১৯ নৌকা ফেরত ॥ নাফ নদীর দুটি পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা বহনকারী ১৯ নৌকা মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। শনিবার সকাল সাতটা থেকে ১০টা পর্যন্ত এসব নৌকা ফেরত পাঠানো হয়। প্রতিটি নৌকায় ১০-১৫ জন করে রোহিঙ্গা ছিল। টেকনাফে বিজিবি-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ জানান, মিয়ানমারের আরাকান থেকে নৌকায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে বিজিবির টহল দল নৌকাগুলোকে সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। এদিকে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ চেষ্টা বেড়ে গেছে। শনিবার ভোরে মংডু রাখাইন প্রদেশের লোদাইং থেকে আসা ২০ পরিবারের শতাধিক রোহিঙ্গা নারী-শিশু কুতুপালং বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছে। উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়ের জানান, অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা বস্তি ছেড়ে লোকালয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হতে পারে। এ আশঙ্কায় বস্তি এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কুতুপালং বস্তিতে আশ্রয় নেয়া মংডু পেরাংপ্রু গ্রামের গৃহবধূ সাজেদা বেগম জানান, তার স্বামী মনছুর আলীকে চোখের সামনে বর্মি সেনা ও রাখাইন যুবকরা কুপিয়ে টুকরো টুকরো করে হত্যা করেছে। স্বামীহারা সাজেদা উপায়ন্তর না দেখে ছেলে জসিম (৫), রাজনী (৩) ও ফয়সালকে (২) নিয়ে আটদিন খেয়ে না খেয়ে বন জঙ্গল পেরিয়ে হোয়াইক্যং-লম্বাবিল সীমান্ত দিয়ে দালালের হাত ধরে এ বস্তিতে উঠেছে। একই গ্রামের তাসমিরা (২৮) জানান, শনিবার ভোরে লম্বাবিল সীমান্ত দিয়ে এক বছর বয়সী সুমাইয়া এবং তিন বছর বয়সী আসমাকে নিয়ে বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছেন। স্বামী খাইর মোহাম্মদকে মিয়ানমার পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে। দুই সন্তানকে নিয়ে কিভাবে বাঁচব, ভেবে পাচ্ছি না। পরে কুতুপালং ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মধ্যে টাকাসহ সবকিছু দিচ্ছে খবর পেয়ে এখানে এসেছি। কিন্তু এসেও ত্রাণ পাচ্ছি না। সবই আত্মসাত করে নিচ্ছে কয়েকজন পুরনো রোহিঙ্গা নেতা (মাঝি)। খেয়ারিপ্রাং গ্রামের নাইচং এলাকা মৃত সুলতান আহমদের স্ত্রী শবে মেরাজ (৬৫) জানান, ছেলে কলিমুল্লাহকে (৪৫) বর্মি সেনারা গুলি করে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে ফেলেছে। পুত্রবধূ, নাতি নাতনিসহ ছয়জনকে নিয়ে হোয়াইক্যং সীমান্ত দিয়ে দালালের মাধ্যমে বস্তিতে এসেছি। শনিবার সকালে ক্যাম্পে গিয়ে দেখা গেছে, তারা সবাই কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের কুতুপালং বন বিভাগের পাহাড়ী ঢিলায় স্থানীয় ফরিদ ড্রাইভার নির্মিত ঝুপড়িতে পাঁচশ’ টাকা মাসিক ভাড়ায় ঠাঁই নিয়েছে। ত্রাণ ভাগবাটোয়ারা ॥ কয়েকজন অনুপ্রবেশকারী জানান, দেশী-বিদেশী ও ব্যক্তিগত অনুদানে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করার জন্য বস্তি এলাকায় আসছে অনেকে। তবে তাদের দেয়া ত্রাণ সামগ্রী স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নিবন্ধিত রোহিঙ্গা নেতারা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি দাতা সংস্থা প্রদত্ত নগদ টাকা পর্যন্ত নতুন রোহিঙ্গাদের হাত থেকে কেড়ে নিয়েছে তারা। প্রকৃত অসহায় রোহিঙ্গারা ওসব ত্রাণের আংশিকও পাচ্ছে না। কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের উদ্বৃতি দিয়ে মরিচ্যা যৌথ চেকপোস্টের সুবেদার মোঃ সাদেক জানান, জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কোন ত্রাণ সামগ্রী কুতুপালং বস্তিতে যেতে দেয়া হচ্ছে না।
×