ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কয়েকজন নজরদারিতে, নিহতের ভাই বাবু বণিককে ফের জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি

ডলি রানী হত্যা মামলা এখন ডিবিতে, প্রাথমিক তদন্ত শুরু

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬

ডলি রানী হত্যা মামলা এখন ডিবিতে, প্রাথমিক তদন্ত শুরু

গাফফার খান চৌধুরী ॥ অবশেষে রাজধানীর রমনা থানাধীন মধুুবাগে নিজ বাসায় জবাই করে ডলি রানী বণিক হত্যার চাঞ্চল্যকর মামলাটির তদন্ত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে দেয়া হয়েছে। নিহতের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও সিআইডির ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়ার পরই মামলাটির বিশদ তদন্ত শুরু হবে। যদিও মামলাটি হাতে পেয়েই ডিবি পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনাস্থল পরির্দশনসহ বেশ কয়েকজনের কর্মকা- নজরদারির মধ্যে আনা হয়েছে। নিহতের ভাই বাবু বণিককে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রস্তুতি চলছে। মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। চলতি বছরের ৮ নবেম্বর দুপুর বারোটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টার কোন এক সময় রাজধানীর রমনা থানাধীন মধুবাগের উদ্দীপন গলির ১০/ই/৮ নম্বর চারতলা বাড়ির চতুর্থ তলার পূর্ব পাশের দুই কক্ষের একটি ফ্ল্যাটে নৃশংসভাবে বটি দিয়ে জবাই করে হত্যা করা হয় ডলি রানী বণিককে (৪৬)। নিহতের বাড়ি নরসিংদী জেলার মাধবী থানাধীন ঘোড়াদিয়া গ্রামে। স্বামী মালয়েশিয়া প্রবাসী সজল বণিক। দুই ছেলের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অপরজন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। একমাত্র মেয়ে ভারত প্রবাসী। রমনা মডেল থানার ওসি মশিউর রহমান জানান, এ ঘটনায় নিহতের স্বামী মালয়েশিয়া প্রবাসী সজল বণিক বাদী হয়ে রমনা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় কাউকে সরাসরি আসামি করা হয়নি। তবে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে নিহতের ভাই বাবু বণিকের কথা উল্লেখ রয়েছে। মোটা অঙ্কের টাকা ধার নেয়ার সূত্র ধরে নিহতের ভাই বাবু বণিকের সঙ্গে ডলি রানীর দ্বন্দ্ব চলছিল। ওসি আরও জানান, ভাই অশোক বণিক ওরফে বাবু বণিক এবং প্রতিবেশী একজনের সঙ্গে নিহতের অর্থ লেনদেনের সূত্র ধরে ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে বলে মামলায় সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। সন্দেহভাজন আসামি অশোক বণিককে র‌্যাব আটকের পর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেও হত্যাকা-ের সঙ্গে অশোক বণিকের সরাসরি ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার কোন তথ্য মেলেনি। এজন্য পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ জনকণ্ঠকে বলেন, গত বৃহস্পতিবারই মামলাটির তদন্তভার তাদের কাছে হস্তান্তর করার চিঠি পাওয়া যায়। দু’একদিনের মধ্যেই মামলার যাবতীয় নথিপত্র তাদের হাতে এসে পৌঁছবে। এছাড়া ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এবং সিআইডির ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরেই মামলাটির বিশদ তদন্ত শুরু হবে। যদিও ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়ে গেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ অনেকের বিষয়েই খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। এমনকি মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে নিহতের ভাই ও তার এক পরিচিত জনের বিষয়ে নজরদারি অব্যাহত আছে। প্রয়োজনে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হবে। তদন্তকারী সংস্থার একজন উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মামলাটি খুবই রহস্যের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে ডলি রানী বণিকের লাশ উদ্ধারের সময়, নিহতের ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। নিহতের ঘরে বাইর থেকে প্রবেশ করা কঠিন। যদিও পেছন দিক থেকে প্রবেশ করা যায়। কিন্তু বের হওয়ার রাস্তা সামনের দিকেই। পিছন দিক থেকে চারতলা থেকে লাফিয়ে পড়া ছাড়া পালানোর আর কোন রাস্তা নেই। কিন্তু পিছনে লাফিয়ে পড়লে হাত পা ভাঙ্গা ছাড়াও মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। কারণ পিছনে প্রচুর ইট, পাথর, আবর্জনা ও পুরনো রড লোহার ভাঙ্গারি জিনিসপত্র রয়েছে। লাফিয়ে পড়ার পরও সেখান থেকে বের হওয়ার তেমন কোন রাস্তা নেই। এজন্য মূল হত্যাকারীকে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। নিহতের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহিত ফরেনসিক রিপোর্ট এজন্য মামলাটির তদন্তের জন্য বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। এজন্য ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহিত আলামত নতুন করে আবারও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। বটিতে থাকা হাতের ছাপ দিয়েই হত্যাকারীকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। হত্যাকারীরা নিহতের পরিচিত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। নানা দিক পর্যালোচনা করে সন্দেহভাজনদের একটি তালিকা করা হয়েছে। সেই তালিকায় নিহতের পরিচিত অনেকেই রয়েছেন। তাদের ছবি পাঠানো হয়েছে বিমানবন্দর ও স্থল সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে। যাতে তারা দেশত্যাগ করতে না পারে। নিহতের পরিবারের দাবি, হত্যাকা-ের সঙ্গে অশোক বণিকের যোগসূত্র থাকতে পারে। নেপথ্যে থেকে অশোক বণিকের পক্ষে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটানোও বিচিত্র নয়।
×