ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকায় দুই সিটির যৌথ উদ্যোগে সংবর্ধনা

মুক্তিযোদ্ধাদের দেড় হাজার বর্গফুটের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফের ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬

মুক্তিযোদ্ধাদের দেড় হাজার বর্গফুটের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফের ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা সিটিতে বসবাসকারী মুক্তিযোদ্ধাদের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফের পরিমাণ বৃদ্ধি ও দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সহায়তার জন্য দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ফান্ড গঠনের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে মৃত্যুর পর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাহিত করার জন্য ঢাকার প্রতিটি কবরস্থানে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হবে ও দুই সিটি কর্পোরেশনের কমিউনিটি সেন্টারগুলো তাদের সন্তানদের জন্য ব্যবহার করতে চাইলে ভাড়া প্রদানে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করা হবে। তবে দুই সিটি পৃথকভাবে দুটি ফান্ড গঠন করবে। মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে বিজয়ের মাসে উপহার হিসেবে সংস্থা দুটির মেয়র আনিসুল হক ও মোহাম্মদ সাঈদ খোকন যৌথভাবে এসব ঘোষণা দেন। সর্বোচ্চ ১৫শ’ বর্গফুটের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করা হবে বলে জানা গেছে। তবে ঘোষিত হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ সুবিধা পেতে সরকারী প্রজ্ঞাপনের জন্য অপেক্ষা করতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানানো হয়েছে। শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ঢাকায় বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে ঢাকার দুই মেয়র তাদের দেয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন। প্রতি বছরের ন্যায় এ অনুষ্ঠানে প্রায় তিন হাজার মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানস্থলের প্রবেশপথেই আগত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সকল সদস্যকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। এছাড়া আগত সকলের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। অনুষ্ঠানে রাজধানীতে বসবাসকারী খেতাবধারী ও সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাগণ স্মৃতিচারণের পাশাপাশি তাদের দাবি-দাওয়া দুই মেয়র ও সরকারের কাছে তুলে ধরে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমান, ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে সাঈদ খোকন বলেন, যারা একাত্তরে রক্ত দিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছেন তাদের আবার দাবি থাকবে কেন? এই সামান্য হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফের জন্য তাদের কেন দাবি জানাতে হবে? এটা আমাদের জন্য লজ্জার। আমাদের উচিত স্ব উদ্যোগে এটা মওকুফ করা। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফের ঘোষণা দিচ্ছি। একই সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের কমিউনিটি সেন্টারগুলো তাদের সন্তানদের জন্য ব্যবহার করতে চাইলে ভাড়া প্রদানে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করা হবে। ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ঢাকাকে আজ বসবাসের অনুপযোগী শহর হিসেবে দেখা হচ্ছে। আপনারা (মুক্তিযোদ্ধারা) রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছেন, আপনারা রক্ত দিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছেন। আপনাদের সন্তান হিসেবে আমরা কেন এ শহরকে বসবাসযোগ্য করতে পারব না? আমরা অবশ্যই ঢাকাকে বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তুলব। মেয়র বলেন, বাংলাদেশ মৃত্যুঞ্জয়ী দেশ। এ দেশে বিভিন্ন সময়ে মৃত্যু এসেছে। কখনও দুর্ভিক্ষ, কখনও অপরাজনীতি আবার কখনও ধর্মের নামে জঙ্গীবাদ এসেছে। এ দেশে স্বৈরশাসন মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি বিনষ্ট করে দিয়ে গেছে। আজ দেশে শীর্ষ ৫০ জন ধনীর তালিকা হয়। কোথাও কি আছে মুক্তিযোদ্ধার নাম? ধনীর তালিকায় আপনাদের নাম থাকতে হবে। আপনারা নির্বিঘেœ আপনাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যান। আমরা আপনাদের সহায়তা করব। সাঈদ খোকন আরও বলেন, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন তহবিল গঠন করবে। আমরা দুই ভাই (ঢাকার দুই মেয়র) মিলে আলাপ-আলোচনা করে এ তহবিল কিভাবে সবল করা যায় তা দেখব। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কবরের ব্যবস্থা করেছি। এরই মধ্যে জুরাইন কবরস্থানে বিশাল অংশ রেখেছি। আপনারা যেখানেই চান সেখানেই ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। আপনাদের এই চাওয়া আমাদের লজ্জিত করছে। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে সহযোগিতা কামনা করেন। অনুষ্ঠানে ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হক বলেন, আমার সীমানার সব কবরস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কবরের স্থান সংরক্ষণ থাকবে। যদিও প্রায় সকল কবরস্থানেই এ ব্যবস্থা আমরা আগেই চালু রেখেছি। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে পৃথকভাবে না আসার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা (মুক্তিযোদ্ধাদের) বিচ্ছিন্নভাবে না থেকে একসঙ্গে আসুন, আপনারা আপনাদের বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলুন। মেয়রের হাতে কাজ রয়েছে, যা আমরা করতে পারি এমন বিষয় আমাদের জানান। আমরা দুই মেয়র মিলে তা পূরণের চেষ্টা করব। ডিএনসিসি মেয়র বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে কলেজে পড়া অবস্থায়ই আমি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। আমার বাবা, ভাই ও আমি মাত্র ১০০ স্কয়ার ফুট জায়গায় অতিকষ্ট থেকেছি। ’৭১ সালের ১২ এপ্রিল দেশ ছেড়ে ভারতের গঙ্গারামপুরে আশ্রয় নিয়েছি। মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান শুধু বক্তৃতা দিয়ে শেষ করা যাবে না। প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধাই একেকটি ইতিহাস। আপনাদের জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আমরা তারই সহানুভূতিতে মেয়র হয়েছি। আমরাও আপনাদের পাশে আছি। অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের আনিসুল হক বলেন, পৃথকভাবে দুই সিটি তাদের ফান্ড গঠন করবে।
×