ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তিন কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর বিশেষ মতামত

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬

তিন কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর বিশেষ মতামত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তিন কোম্পানির নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর বিশেষ মতামত দিয়েছে। কোম্পানি তিনটি হলো : জুটস স্পিনার্স, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর ও সেন্টাল ফার্মা। জুটস স্পিনার্স ॥ পাট খাতের কোম্পানি জুট স্পিনার্স লিমিটেড বিপুল লোকসানে জর্জরিত। এতে কোম্পানির ভবিষ্যত অনিশ্চিত বলে মন্তব্য করছেন নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানিটির ৩০ জুন ২০১৬ সমাপ্ত হিসাব বছরে নেট লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ১৫ লাখ ৬৪ হাজার ৯৬৯ টাকা। এর সঙ্গে কোম্পানিটির পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৬ কোটি ৭৬ লাখ ৪৫ হাজার ২৬৩ টাকা। এই বড় অঙ্কের লোকসান কোম্পানিটির ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার পথে অনিশ্চিত বলে মনে করছে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান। এছাড়া কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে বিভিন্ন অনিয়মের কথাও উল্লেখ করেছে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান। জুট স্পিনার্স বাংলাদেশ লেবার ল্য ২০০৬’র সেকশন ২৩৪ (বি) পরিপালন করেনি। কোম্পানিটি ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ডে (ডব্লিউপিপিএফ) কোনো সুদ দেয়নি। এদিকে কোম্পানিটি আলোচিত বছরে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৭৫ হাজার ৫৬ টাকা পরিচালকদের দিয়েছে। কিন্তু এ সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র অডিরটকে দিতে পারেনি। এছাড়া কোম্পানিটি ঋণের সুদ বাবদ ঋণপ্রদানকারী আয়েশা কাদিরকে ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৪ শ’ টাকা দিয়েছে। কিন্তু এর জন্য কোনো এআইটি (এডভান্সড ইনকাম ট্যাক্স) কাটেনি। এ কারণে কোম্পানিটি জরিমানার সম্মুখীন হতে পারে। গত ৪ বছর ধরে জেড ক্যাটাগরিতে থাকা এই কোম্পানিটির গত বছর তৃতীয় প্রান্তিকের চেয়ে এ বছর আয় কমে গেছে ১ শতাংশের বেশি। গত বছর এই সময়ে (তৃতীয় প্রান্তিকে) প্রতিষ্ঠানটির আয় ছিল ৩৪ কোটি ২২ লাখ টাকা। এবার তা নেমে এসেছে ৩২ কোটি ৪১ লাখ টাকা। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানটির দায়দেনার পরিমাণ ৩৫ কোটি টাকা। যা কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধনের চেয়ে ২১ গুণের বেশি। ফলে এই কোম্পানি থেকে ক্রমেই আস্থা হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এদিকে কোম্পানিটির পরিচালন ব্যয় ১ শতাংশ কমলেও শেয়ার প্রতি আয় লোকসান রয়েছে ১০ টাকা। গত তিন বছর ধরে শেয়ার প্রতি আয় ধারাবাহিকভাবে কমছে। ২০১৫ সালে শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ১৯ টাকা ৬৯ পয়সা। তার আগের দুই বছর যা ছিল যথাক্রমে ৪৩ টাকা ৬৪ পয়সা ও ৪৮ টাকা ১৪ পয়সা। এদিকে ধারাবাহিকভাবে কমছে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি আয়ও। ২০১৩ সালে এর প্রতিটি শেয়ারে শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ৩৯ টাকা। বর্তমানে যা ১০৫ টাকা ১৮ পয়সায় পৌঁছেছে। ফলে এ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বিপাকে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এদিকে বৃহস্পতিবার এ কোম্পানির প্রতিটি শেয়ার ৫৪ টাকায় লেনদেন হয়। আর দর ওঠানামা করে ৫৩ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ৫৪ টাকার মধ্যে। এদিকে ক্রেতা না থাকায় গতকাল এ কোম্পানির মাত্র ৬০০ টি শেয়ার কেনাবেচা হয়। শেয়ারগুলো হাত বদল হয় ১৪ বার। এক বছর আগে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার সর্বোচ্চ ৭৪ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়। লোকসানে থাকা এই কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১২ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ২০ শতাংশ করে লভ্যাংশ প্রদান করে। অন্যাদিকে এ কোম্পানির মোট শেয়ারের ৩৯.৮২ শতাংশ রয়েছে পরিচালকদের কাছে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৩৭.০৭ শতাংশ। বাকি ২৩.১১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে। রেনউইক যজ্ঞেশ্বর ॥ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রেনউইক যজ্ঞেশ্বর এ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড বাংলাদেশ এ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ডস (বিএএস) অনুসরণ না করেই ব্যবসা করছে। কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন মূল্যায়নের ভিত্তিতে এ তথ্য জানা গেছে। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, এ্যাকাউন্ট স্ট্যান্ডার্ডস (বিএএস) ৩৬ অনুযায়ী প্রপার্টি, প্লান্ট ও যন্ত্রপাতি প্রকাশ্যে পরীক্ষা প্রয়োজন। কিন্তু কোম্পানির ৩০ জুন, ২০১৬ সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদনে এ ধরনের কোন পরীক্ষার কথা উল্লেখ নেই। এছাড়া কোম্পানিটি গ্রাইচুইটি স্কিম পরিচালনা করেছে কোম্পানির পলিসি অনুযায়ী। কিন্তু বিএএস অনুযায়ী এটি সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। সেন্ট্রাল ফার্মা ॥ ওষুধ-রসায়ন খাতের কোম্পানি সেন্ট্রাল ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডের সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদনে অসঙ্গতি রয়েছে। কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন মূল্যায়নের ভিত্তিতে এ তথ্য জানা গেছে। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানির ৩০ জুন, ২০১৬ সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন মূল্যায়ন করেছে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান। মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, আর্থিক প্রতিবেদনে ঋণের সুদের হার বিধান সঠিকভাবে তৈরি হয়নি। প্রতিবেদনে ২ কোটি ৩৮ লাখ টাকার একটি সংক্ষিপ্ত বিধান রয়েছে। এছাড়া প্রতিবেদনে কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদী সুদের হার সঠিকভাবে উল্লেখ হয়নি। বর্তমান সুদ ও দীর্ঘমেয়াদী সুদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এর ফলে সেন্ট্রাল ফার্মার আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানির অতীত ও বর্তমান দায় সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি।
×